×

জাতীয়

ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া হলো না মাঈনুদ্দিনের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২১, ০৮:৩৫ এএম

ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া হলো না মাঈনুদ্দিনের

বামে বিলাপ করছেন মাঈনুদ্দিনের মা. ডানে (ইনসেটে) মাঈনুদ্দিন। ছবি : ভোরের কাগজ

পূর্ব রামপুরা তিতাস রোডের বাসিন্দা আব্দুর রহমান ভান্ডারী ও শাহিদা বেগম দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছেলে মো. মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়। বড় মেয়ে ঝুমার বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ছেলে মনিরও পড়াশোনা তেমন করেনি। একটি দোকানে কাজ করে সে। তাই একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় (বালক শাখা) থেকে এবার মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষা দেয়া ছোট সন্তান মাইনুদ্দিনই ছিল চায়ের দোকানদার বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণের চাবিকাঠি। পরীক্ষার ফলাফল পেলে একটি ভালো কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিল সে। তবে অনাবিল পরিবহনের চাপায় তার সে স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেল।

সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাতে মাইনুদ্দিনের বাসার সামনে গিয়ে দেখা যায় প্রচণ্ড ভিড়। ছেলের শোকে মা-বাবা বিলাপ করছেন। তাদের কান্নায় চারপাশটা যেন ভারী হয়ে আসছে।

কথা হয় নিহত মাইনুদ্দিনের ভগ্নিপতির ভাই বাদশার সঙ্গে। তিনি বলেন, সোমবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে মাঈনুদ্দিনের মোবাইল ফোন থেকেই তার কাছে ফোন আসে। এ সময় অজ্ঞাত এক পথচারী তাকে জানান এ মোবাইলটির মালিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। এ কথা শুনে বিষয়টি ভাই সাদ্দামসহ সবাইকে জানাই ও দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে মাঈনুদ্দিনের লাশ দেখতে পাই। জানতে পারি অনাবিল পরিবহনের একটি বাস তার মাথার উপর দিয়ে গেছে। আমরা পৌঁছানোর আগেই সেখানে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে করে বিক্ষোভকারীরা। তিনি আরও বলেন, চায়ের দোকানে মাইনুদ্দিন কাজ করছিলো। রাত ৯টার দিকে রামপুরা বাজারের দিকে এক বন্ধুর বাসায় যায় সে। সেখান থেকে ফেরার পথেই রামপুরা এলাকায় লাজ ফার্মার সামনে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এদিকে এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ বলেন, মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘাতক বাস চালককে আটক করেছে পুলিশ। তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এর খিলগাঁও স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. হাসান আলী বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় গাড়িতে দেয়া আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা চারটি গাড়ি ভাঙচুরসহ একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এদিকে এ ঘটনায় রামপুরা বাজার এলাকার দু'পাশের সড়ক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত দুইটার দিকে পুনরায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

২৪ নভেম্বর বেলা ১১টায় রাজধানীর গুলিস্তানে দক্ষিণ সিটির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান মারা যায়। সে ওই কলেজের মানবিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। এ ঘটনার ঠিক পরদিন অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর ডিএনসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় আহসান কবির খান নামে এক ব্যক্তি মারা যান। এ দুই ঘটনার পর থেকে সড়কে মৃত্যু নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মুখর রাজধানী। শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জমায়েত হয়ে আন্দোলন করছে। এমন পরিস্থিতিতেই রাজধানীর সড়কে আরও এক শিক্ষার্থীর প্রাণ গেল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App