×

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিগগিরই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন চরের অবশিষ্ট মানুষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১২:০৯ এএম

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিগগিরই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন চরের অবশিষ্ট মানুষ

ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের বাইরে থাকা চর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদেরকে দ্রুত বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার জন্য শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে নতুন প্রকল্প নেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

জাতীয় গ্রিড এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্য পূরণের পথে এখনও বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের বাইরে থাকা মানুষগুলোর জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বাসসের।

রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার এখনও বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে এ নির্দেশনা দেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর দ্রুততম সময়ে চর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবশিষ্ট মানুষদেরকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে কাজ শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের পরিবারগুলোকে দ্রুত বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজনে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে বলেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব বলেন, কোন বাড়ি বা পরিবার অন্ধকারে থাকবে না। তার নির্দেশনা অনুযায়ী শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনার যে লক্ষ্য সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) তথ্য অনুযায়ী, ‘‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিহীন প্রত্যন্ত এবং চর এলাকায় সৌর শক্তির উন্নয়ন’’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রংপুর জেলার রংপুর সদর ও গংগাচড়া উপজেলা এবং লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় মোট ১২ হাজার ১৭০টি সোলার হোম সিস্টেম বসানোর কথা ছিল। সেখানে ৯ হাজার ৮৪৫টি সোলার সিষ্টেম স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা পিডিবিএফ।

গংগাচড়ায় সর্বশেষ নির্বাচিত ৪৫০৪ জনের মধ্যে থেকে যাঁরা কন্ট্রিবিউশনের অর্থ ও এনআইডি জমা দিয়েছেন এবং অন্যান্য শর্ত পূরণ করেছেন, চলতি বছরের জুন মাসে তাঁদের ৭১২ জনকে সোলার হোম সিষ্টেম বিতরন করা হয়েছে।

৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তালিকাভুক্ত ৯০টি পরিবারের মাঝে সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করতে পারেনি পিডিবিএফ। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসলে তার নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে সেই ৯০ জনের বাড়িতে সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকা অন্যান্য পরিবারগুলোকেও দ্রুত বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের অধীনে আনার নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকা গংগাচড়া উপজেলার অবশিষ্ট তিন হাজার ৭০৮ পরিবারকেও দ্রুত বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ মউদুদ উর রশীদ সফদার বলেন, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চরাঞ্চলের ৩ হাজার ৭০৮ পরিবারকে কিভাবে বিদ্যুতের আওতায় আনা যায় সে লক্ষ্যে আমরা পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছি।

তিনি বলেন, যেখানে যেখানে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া যাবে সেখানে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। আর যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের লাইন টানা যাবে না সেখানে সোলার হোম প্যানেল সিস্টেম বসানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

যেসব প্রত্যন্ত এলাকায় গ্রিড লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব নয় সেখানে সোলার হোম প্যানেল সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সরকার।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে এখন পর্যন্ত ৬২ লাখ হোম সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এসব সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ২৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। নামমাত্র মূল্যে বিতরণ করা এসব সোলার প্যানেল সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছেন দুই কোটি মানুষ।

শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। লক্ষ্য অর্জনের পথে সরকার এখন পর্যন্ত জাতীয় গ্রিড এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এনেছে। ২০০৯ সালে দেশে ৪৭ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধা পেত।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। যেখানে ২০০৯ সালে এ সক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ বিভাগ আরও জানায়, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ছিল এক কোটি আট লাখ। বর্তমানে এ সংখ্যা চার কোটি ১৪ লাখে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ২০০৯ সালে সেচ সংযোগ ছিল দুই লাখ ৩৪ হাজার, বর্তমানে সেচ সংযোগ সংখ্যা চার লাখ ৪৬ হাজার।

২০০৯ সালে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বিদ্যুৎ খাতে সরকার ২৮ হাজার ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App