×

জাতীয়

অবৈধ অস্ত্রের পাশাপশি বেড়েছে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২১, ০৮:৩৬ এএম

অবৈধ অস্ত্রের পাশাপশি বেড়েছে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার

প্রতীকী ছবি

ইউপি নির্বাচন ঘিরে দেশে সহিংসতা-প্রাণহানি এমনিতেই বেড়ে গেছে অনেক। এর বাইরে রাজনৈতিক ও অপরাধমূলক খুনোখুনিও বেড়েছে হঠাৎ করেই। অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বেড়েছে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারও। এ নিয়ে জনমনে যেমন উদ্বেগ বেড়েছে; তেমনি দুশ্চিন্তা বেড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ হেডকোয়াটার্সে বৈঠকের পর অস্ত্র ব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করতে এবং অস্ত্র উদ্ধারে ১৬ নভেম্বর থেকে বিশেষ অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সতর্ক করা হয়েছে। বাড়তি নজরদারি ও সতর্কতার মধ্যেও সোমবার খুন হয়েছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা মো. সোহেল এবং তার সহযোগী হরিপদ সাহা। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরো চারজন। এরপর নড়েচড়ে বসেছেন আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের বড় কর্তারা। কারা কাউন্সিলরসহ দুজনকে হত্যা করেছে- তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল মঙ্গলবার বিকালে কুমিল্লার সুজানগর থেকে তিনটি অস্ত্র, ১২ রাউন্ড গুলি ও মুখোশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে ঢাকা জেলার ধামরাই, সাভার, মুন্সীগঞ্জ, নোয়াখালী, যশোর, মাগুরা, নরসিংদী ও কক্সবাজারের খুনোখুনির ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতির ঘটনা সামান্য কমেছে; তবে রাহাজানির ঘটনা আগের চেয়ে সামান্য বেড়েছে।

পুলিশের একাধিক সূত্রের তথ্য মতে, ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম সীমান্তে অবৈধ অস্ত্র তৈরির বেশ কয়েকটি কারখানার তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। এসব কারখানায় তৈরি হওয়া ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র নানা হাত ঘুরে দেশের বিভিন্ন জায়গার অপরাধীদের কাছে চলে যায়। এ ছাড়া কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি এলাকা দিয়ে মাঝেমধ্যেই ছোট ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের গুলির চালান নিয়ে আসে অবৈধ কারবারিরা। সেসব চালানের অধিকাংশই বৈধ ডিলারদের হাতে আসে। যশোরের বেনাপোল, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, সাতক্ষীরার শাঁকারা, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, সিলেটের তামাবিলসহ অন্তত ৩০টি রুট দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে দেশে অবৈধ অস্ত্র আনা হচ্ছে। অবৈধ অস্ত্রের শতাধিক কারবারির তালিকা রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। এর মধ্যে বেশির ভাগই বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছে। কারাগারে রয়েছে অনেকে। আবার পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপনে থাকা অনেক সন্ত্রাসীর নামেও চলছে এই বাণিজ্য। পরবর্তীতে তা রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

সূত্র মতে, কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যাকাণ্ডে একাধিক অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, কক্সবাজার, মাগুরায় গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৮ জন। বাকিরা দেশীয় অস্ত্র ও প্রতিপক্ষের পিটুনিতে মারা যান। পটুয়াখালী ও গাইবান্ধায় দুইজন নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত নরসিংদী জেলার আলোকবালী ও বাঁশগাড়ি চর থেকে ৫টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ১টি একনলা বন্দুক ও ৪টি ওয়ান শুটারগান। এ ছাড়া ৯ রাউন্ড গুলিও পাওয়া গেছে। আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি ছাড়াও নরসিংদী থেকে শতাধিক টেঁটা, ককটেল, নানা ধরনের দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। দুই চর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২২ জনকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ২১০টি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই হাজার ৫৪৩ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৪০ জন। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনে উদ্বেগ বাড়ছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সেখান থেকে সংশ্লিষ্টদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আসকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মার্চ থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত আট মাসে সারাদেশে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২১০টি। এতে আহত হয়েছেন ২ হাজার ৫৪৩ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৪০ জন। নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তার ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের গুলিতে বিভিন্ন দফায় ৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। নির্বাচনের আগে ৬ জন ও নির্বাচনের দিন মারা যান তিনজন। মাগুরায় নির্বাচনী সহিংসতায় মারা যান চারজন। গত ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলাকালে সংঘর্ষে দুইজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হন। গোয়েন্দা তথ্য মতে, ইউপি নির্বাচন ঘিরে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও সরবরাহ বেড়েছে। নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যকার বিরোধকে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, তৃণমূলে যেভাবে সহিংসতা বাড়ছে, তাতে নির্বাচন পরবর্তী সময়ও এর জের থেকে যাবে। ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৭ ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই ধাপে বেশ কিছু জেলায় রক্তপাতের আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে সহিংসতা।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক এ বিষয়ে বলেন, হঠাৎ করে খুনোখুনি বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের ধরতে অভিযান ও গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান বলেছেন উল্টোকথা, তার মতে, এমনিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার তদন্ত চলছে। বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা যাবে না- এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App