×

রাজধানী

দারুস সালামে পুলিশের অস্ত্র ও বাদির খুনের মামলায় গড়মিল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২১, ০৮:৪৪ পিএম

দারুস সালামে পুলিশের অস্ত্র ও বাদির খুনের মামলায় গড়মিল

প্রতীকী ছবি

রাজধানীর দারুস সালামে ভগ্নিপতিকে গুলি করে অস্ত্রসহ শ্যালকের থানায় আত্নসমর্পনের ঘটনায় দায়েরকৃত দুই মামলার বর্ণনায় গড়মিল রয়েছে। শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে খুনের পরদিন ২১ নভেম্বর নিহতের মা আজমেরী বেগম এবং থানায় এসআই রিয়াজুল হাসান (৩৩ ও ৩৪ নম্বর মামলা) মামলা দুটি দায়ের করলেও এতে আসামি ও ঘটনার বিবরণে অসঙ্গতি রয়েছে।

একই কম্পিউটারে টাইপকৃত এজাহার মতে আজমেরী বেগম অস্পষ্টভাবে কোনো মতে স্বাক্ষর করতে পারেন। এতে ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে পুলিশের করা অস্ত্র মামলায় আসামি তিনজন। ঘটনার সময় নিহতের স্ত্রী উপস্থিত থাকলেও তাকে মামলার বাদি করা হয়নি। ঘাতক অস্ত্র হাতে থানায় আত্নসমর্পন করলেও প্ররোচনার অভিযোগে তার মা-বোনসহ আরো পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু নিহতের সঙ্গে ওই পাঁচজনের সম্পর্ক এবং কেন তারা প্ররোচনা দিবেন তা উল্লেখ নেই।

আবার পুলিশের মামলায় ঘটনার যে বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে তা তিনি কিভাবে জ্ঞাত হলেন তা অস্পষ্ট। একসঙ্গে রেকর্ডকৃত দুটি এজাহার একজনের নির্দেশনায় লেখা বলে স্পষ্ট। আড়াই কাঠা জমির উপর নির্মিত পাঁচতলা বাড়ি মালিকানা নিয়ে বিরোধে হত্যাকান্ডের পর ঘাতক আত্নসমর্পন করে স্বীকারোক্তি দিলেও দায়েরকৃত ওই সম্পত্তি দখলে নিতে আসামি তালিকায় এজাহারে কৌশল করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে দারুস সালাম থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মইনুল কবীর সোমবার সন্ধায় বলেছেন, দুটি মামলা দুই ধরনের। পুলিশ শুনে মামলা করেছে। অবশ্য একসঙ্গে দুটি মামলা লেখা সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নিহতের মা আজমেরী বেগমের (৬৩) হত্যা মামলার এজাহার মতে, নামাপাড়া কোটবাড়ির মো. জাসফিকুর রহমান অশ্রু (২৬), তার মা জাহানারা বেগম (৬১), বোন জয় জাহান মীম (২১), আনন্দ নগরের আবু রায়হান (৫৫), মো. রাব্বি (৩০), মো. ফরিদ আহমেদ (৫৪), মিনহাজ উদ্দিন (৬৩) ও তার স্ত্রী শামীমা বেগম (৪৫) বিবাদী। তাদের প্ররোচনায় অশ্রু তার মায়ের নামে লাইসেন্সকৃত শর্টগান দিয়ে তাদের নামাপাড়া কোটবাড়ীর ১৪২/১ নম্বর হোল্ডিংয়ের বাসার নিচতলায় ভগ্নিপতি ফারুক আহমেদকে গুলি করে হত্যা করেছে। নিহত ফারুকের পৈত্রিক বাড়ি কোটবাড়ির ৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে। ১৯ বছর আগে অশ্রুর বোন সাকিলা জাহান অপুর সঙ্গে বিয়ের পর থেকে ফারুক তার শ্বশুর বাড়ির নিচতলায় থাকতেন। তাদের সংসারে আহানাফ মিকাইল অজু (১২) নামের এক সস্তান রয়েছে।

বাদির অভিযোগ, ফারুকের শ্বশুর লুৎফর রহমান তিন বছর আগে মারা যাওয়ার পর তার (ফারুকের) শ্যালক অশ্রু, শ্বাশুড়ি জাহানারা বেগম ও শ্যালিকা মীম ফারুককে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি ছাড়তে চাপ দিয়ে গালমন্দ করে আসছিলেন। অন্য বিবাদীরা ফারুককে হত্যার জন্য প্ররোচনা দিয়ে আসছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, ৫ জন বিবাদীর সঙ্গে ফারুকের কি শত্রুতা এবং কেন তারা তাকে হত্যার প্ররোচনা দিয়ে আসছিলেন তা এজাহারে উল্লেখ নেই। আবার নিহতের স্ত্রী সাকিলা জাহান অপু ঘটনার সময় স্বামীর সঙ্গে ছিলেন এবং গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এজাহারের বর্ণনায় উল্লেখ থাকলেও অপু কেন মামলার বাদি হলেন না এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনা শুনে ফারুকের বৃদ্ধা মা কেন মামলার বাদি হলেন এ নিয়ে প্রশ্নের কমতি নেই।

এদিকে দারুস সালাম থানার এসআই মো. রিয়াজুল হাসান এক রাউন্ড গুলিসহ অশ্রুর আত্নসমর্পনের ঘটনার বর্ণনা করে অপর এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ‘১২ বোরের একনালা শটগান ও এক রাউন্ড তাজা গুলি নিয়ে তার রুমে প্রবেশ করে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই উত্তেজিত স্বরে আমাকে বলে এই ১২ বোরের একনালা শর্টগান দিয়ে খুন করে এসেছি। সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রসহ তাকে হেফাজতে নেয়া হয়।’ এই এজাহারে মা জাহানারা ও বোন মীমের প্ররোচনায় অশ্রু ভগ্নিপতি ফারুকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব তথ্য পুলিশ কিভাবে পেয়েছে তা উল্লেখ নেই এজাহারে।

প্রসঙ্গত, গত ২০ নভেম্বর শনিবার দুপুরে জাসফিকুর রহমান অশ্রু তার ভগ্নিপতি ফারুক হোসেনকে (৪৮) গুলি করে হত্যা করে। এরপর শটগান হাতে ঘাতক থানায় গেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মা জাহানারা বেগম ও ছোটবোন মীমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শটগানটি অশ্রুর, জাহানারা বেগমের নামে লাইসেন্স করা। আনুমানিক ২০ বছর আগে এটি তার নামে নেয়া। তার স্বামী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী লুৎফর রহমানের নামেও লাইসেন্সকৃত দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ২০১৮ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর সেগুলো জমা দেয়া হয়েছে। জাহানারা বেগমের নামে লাইসেন্স করা শটগানটি তার শোবার ঘরে থাকত। অশ্রু মাদকাসক্ত বলে জানা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App