×

জাতীয়

চার বছর পর দেশি প্রকৌশলীদের দক্ষতায় অচল পাম্প সচল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২১, ১২:১৬ পিএম

চার বছর পর দেশি প্রকৌশলীদের দক্ষতায় অচল পাম্প সচল

পাম্পাট সচল হওয়ার পর জিকে সেচ প্রকল্পের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফাইল ছবি

চার বছর পর দেশি প্রকৌশলীদের দক্ষতায় অচল পাম্প সচল
চার বছর পর দেশি প্রকৌশলীদের দক্ষতায় অচল পাম্প সচল
  • সুফল পাবেন চার জেলার লাখো লাখো কৃষক

বিদেশি পরামর্শক ছাড়াই নিজেদের দক্ষতায় অচল পাম্প সচল করেছেন দেশি প্রকৌশলীরা। আর এর ফলে সরাসরি সুফল পাবেন চার জেলার লাখো কৃষক।

জানা যায়, দীর্ঘ চার বছর ধরে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের ৩ নম্বর পাম্পটি অকেজো হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি বিদেশি প্রকৌশলীদের সহযোগিতা ছাড়াই দেশি প্রকৌশলীরা দীর্ঘদিনের চেষ্টায় স্বল্প খরচে পাম্পটি সচল করেছেন। ফলে আগামী বোরো মৌসুমে জিকে সেচ প্রকল্পের সেচ সক্ষমতা আরও বাড়বে। এতে কুষ্টিয়াসহ চার জেলার কয়েক লাখ কৃষক চাহিদামতো সেচসেবা পাবেন। আর সফল প্রকৌশলীরা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও কাজের পরিধি বাড়ল।

২০০৫ সালে স্থাপিত জিকে মূল পাম্পের ৩ নম্বর পাম্পটি ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে বাকি দুটি পাম্প দিয়ে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৩ উপজেলায় সেচকাজ চালানো হয়। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী পানি না পাওয়ায় সেচকাজ বেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল।

[caption id="attachment_319919" align="aligncenter" width="700"] তিন নম্বর পাম্পকে সচল করতে কাজ করছে শ্রমিকরা। ফাইল ছবি[/caption]

মূলত অকেজো হয়ে পড়া ৩৭ হাজার হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্পটি মেরামতের জন্য জাপানি ইবারা কোম্পানি ১৭ কোটি টাকা দাবি করে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিটাককে এই কাজের পরামর্শক নিয়োগ দেয়। বিদেশি কোম্পানিগুলো অনেক টাকা চাওয়ায় এ প্রক্রিয়াটি থমকে যায়। পরে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি বিটাক তিন কোটি ৭১ লাখ টাকার চুক্তিতে পাম্পটি মেরামতের জন্য পরামর্শকের দায়িত্ব নেয়। পরে বিটাক ইজিপিতে ওটিএম এর মাধ্যমে অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে পাম্পটি সচল করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেয়।

অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দেশি প্রকৌশলীরা গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে কয়েক দফায় পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালান। এতে তারা পুরোপুরি সফল হন। সেচ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আরও কিছু কাজ শেষ করার জন্য বর্তমানে সব পাম্প বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি বোরো মৌসুম শুরু হওয়ার পর পাম্প চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। গত ১৫ নভেম্বর পাম্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৩ নম্বর পাম্পটি সচল হওয়ায় একদিকে কৃষকরা যেমন নিজেদের চাহিদামতো সেচের পানি পাবেন, তেমনি আগামী বোরোতে স্বল্প খরচে অধিক ফসল ফলাতে পারবেন।

অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সি ই ও) প্রকৌশলী নাজমুল হাসান মেহেদি জানান, দেশে এ ধরনের সফলতা প্রথম। বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারকদের এমন দূরদর্শী ও সাহসী সিদ্ধান্তে এ কাজ করা সম্ভব হয়েছে । এ কাজের সাফল্য এই মুজিব শতবর্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করছি । আমরা বিদেশি পরামর্শকের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই দেশীয় প্রকৌশলীরা এমন কাজ করতে সমর্থ হয়েছি। এতে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এমডি প্রকৌশলী আলী আজাদ বলেন, সংস্কারের পরে এই নতুন সিস্টেমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে আরও জোরদার করা হয়েছে এবং দূরবর্তী হতে সরাসরি পর্যবেক্ষণ ও পরিচালনা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এখন দেশের বাইরেও তারা পাম্প মেরামতের কাজ করতে পারেন। দেশে এ ধরনের কাজ করতে পারায় সরকারের অনেক অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। পাশাপাশি দেশে যে এ ধরনের কাজ করা যায়, তার নজির সৃষ্টি হয়েছে।

৩ নম্বর পাম্পটি সচল হওয়ার কারণে আগামীতে কৃষদের চাহিদামতো পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান জিকে পাম্প হাউসের ইনচার্জ প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। তিনি আরও জানান, পদ্মায় পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে তিনটি পাম্পের সাহায্যে চার জেলার কৃষকদের পানির প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। পাশাপাশি পাম্প মেরামতে সরকারের প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।মিজানুর রহমান আরও বলেন, বিটাকসহ মূল সাপোর্ট ছিল অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এই দুটি প্রতিষ্ঠান ভালো কাজ করায় পাম্পটি চালু হয়েছে। এটা দেশের জন্য ভালো।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন, গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পটি কৃষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পের মাধ্যমে চারটি জেলায় পানি সরবরাহ করা হয়। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্পের মাধ্যমে ইনটেক চ্যানেল থেকে পানি মূল ক্যানেলে ফেলা হয়। এতদিন দুটি পাম্প দিয়ে কাজ চালাতে হতো। এখন অচল পাম্পটি সচল হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক আছে। এবার পানি সরবরাহে সমস্যা হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App