×

সারাদেশ

বাঁশখালীর সাধনপুর শীলপাড়ায় চাঞ্চল্যকর ১১ হত্যার ১৮ বছর!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৩০ পিএম

বাঁশখালীর সাধনপুর শীলপাড়ায় চাঞ্চল্যকর ১১ হত্যার ১৮ বছর!

চট্টগ্রামের বাঁশখালী সাধনপুর ইউনিয়নে শীলপাড়ায় চাঞ্চল্যকর ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার মামলাটি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন মামলার বাদী ডা. বিমল শীল ও তার পরিবার। ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জন সাক্ষ্য প্রদান করলেও বাকী সাক্ষীর অনুপস্থিতির কারণে মামলাটি আজো নিষ্পত্তি হয়নি।

এই আলোচিত সাধনপুরের শীল পাড়ায় ১১ জন পুড়িয়ে মারার ঘটনাটি ২০১৯ সালের ২৩ জুন উচ্চ আদালতের এক আদেশে ৬ মাসের মধ্যে নিস্পত্তি করার জন্য বলা হয়। চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩ এ গত ২৩ অক্টোবর এই মামলার শুনানি হয়েছে।

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২সালে পরবর্তী দিন ধার্য্য রয়েছে। ঘটনার স্থাপিত শীলপাড়া পোড়াবাড়িতে পুলিশ ক্যাম্পটি স্থানান্তর করে ফেলায় পরিবারের লোকজন আতংকের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন।

বৃহষ্পতিবার (১৮নভেম্বর) সকালে বাঁশখালী আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ উপজেলা প্রশাসন নিহত পরিবারের কাছে গিয়ে সান্তনা দেন ও শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তর্বক অর্পণ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পন করেছে। এই সময় উপস্থিত ছিলেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রশিদ, মামলার বাদী ডা. বিমল শীল, তার ভাই নির্মল শীল, বাদল শীল প্রমুখ।

সাধনপুরে শীল পাড়ায় নিহতরা হলেন, ৪ দিনের শিশু কার্তিক শীল, দেবেন্দ্র লালশীল (৭০) তেজেন্দ্র লাল শীল (৭০) অনিল কান্তিশীল (৪২) বকুল বালাশীল (৬০) স্মৃতি রানীশীল (৩০) বাবুটি শীল (২৫) প্রসাদী শীল (১৭) রুমি শীল (১১) এ্যানিশীল (১৫) সোনিয়াশীল (৭)।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাধনপুরের ১১ হত্যার ঘটনা অবশ্যই বিচার পাবে বাদী পক্ষের লোকজন। এই দেশে বঙ্গবন্ধু খুনিদের বিচার হয়েছে। মামলা দীর্ঘ সময় নিতে পারে তবে অবশ্যই বিচার হবে।

মামলার বাদী ডা. বিমলশীল বলেন, ১১ জনকে পুড়িয়ে মারার মামলাটি দেশ বিদেশে ব্যপক আলোচিত হলেও দীর্ঘ ১৮ বছর পর্যন্ত অপেক্ষায় আছি। কবে বিচার পাব জানিনা। তবে সাক্ষীরা যদি সাক্ষীদেয় তাহলে বিচার পাবো আশা করি। এই মামলাটির অনেক সাক্ষীর সাক্ষ্য বাকী রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদেরকে রাষ্ট্র যদি ইচ্ছা করে তাদের আদালতে নিয়ে এসে সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারে তাহলে মামলার নিষ্পত্তির কাজ এগিয়ে যাবে। সরকারি কর্মকর্তারাও অনেকে সাক্ষী দেয় নাই। যার ফলে মামলাটির চলমান ব্যাঘাত ঘটছে। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীসহ ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে আমাদের পরিবারের ৪জন, ২জন সাংবাদিক, ২জন সি.আই.ডি কর্মকর্তা, ফরেনসেনিক ডা. প্রদীপ কুমার চৌধুরী, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন। এখনো সাক্ষ্য বাকী রয়েছে। এ মামলায় আসামিদের মধ্যে ৩৮জন আসামিদের মধ্যে জেল হাজতে ২জন, পালাতক ১৯জন, জামিনে আছেন ১৭ জন।

চট্টগ্রাম আদালতের অতিরিক্ত পি.পি এডভোকেট লোকমান সোছেন চৌধুরী বলেন, সাধনপুর চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে সরকার পুন: তদন্তের মাধ্যমে আমলে নিয়েছেন। সাক্ষীরা যথাসময়ে সাক্ষ্য দিলে মামলাটির গতি আরো বাড়তো। আদালতে গত কয়েক বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ৫-৬জন সাক্ষীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট পাঠানো হয়েছে। তারা যেন দ্রুত সময়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন। পুলিশ সঠিক দায়িত্ব পালন করলে মামলাটির অগ্রগতি দেখা যাবে। রাষ্ট্র পক্ষের কোন ত্রæটি নেই। দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী সাধনপুর ইউনিয়নের শীল পাড়ায় ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর গভীর রাতে ডাকাত রূপি নর পশুরা তেজেন্দ্র শীলের বাড়ীতে ঘরের দরজা বন্ধ করে অগ্নিসংযোগকরে। এতে একই পরিবারের ১১জনকে পুড়িয়ে হত্যাকরাহয়। নিহত পরিবারের সদস্য ডা. বিমলশীল বাদি হয়ে দায়ের করেন। ২০১১ সালে ৯ জানুয়ারি ৩৯ জনকে আসামি করে ৫৭ জন সাক্ষী দেখিয়ে সিআইডির তৎকালিন এ.এস.পিহ্লাচিং প্রু তদন্ত করে আদালতে সম্পুরক চার্জসীট দাখিল করেন। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীরা হলেন, তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, চমেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান, রাসায়নিক পরীক্ষক প্রধান ঢাকা, সাতকানিয়া সার্কেল, তৎকালীন সিআইডি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত ২০১১ সালে ১২ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে ১ম দফায় অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্যে মামলার আসামি কালীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরীর আদালতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দীর্ঘদিন মামলার কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় তিনি পুনরায় বিচারের আওতায় এসেছেন। তিনি এখন মামলায় উপস্থিত থাকায় বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ মামলার আসামিরা হলেন-আবদুল করিম প্রকাশ কালা করিম, আহমদ মিয়া প্রকাশ তোতাইয়া, মাহবুবুর রহমান প্রকাশমাহবুব আলী, জাবেদ হোসেন, মো: হাসান প্রকাশ আর্মি হাসান, সরওয়ার উদ্দিন, আবু তৈয়ব, মো: শাহাজান, আমিনুলহক, শাহজাহান প্রকাশ দুলামিয়া, আকবর প্রকাশ আকবরআলী, আহমদ হোসেন, মতলব, সফিউল আজম, জসিম উদ্দিন, আমিনুর রহমান চৌধুরী প্রকাশ আমিন চেয়ারম্যান, আমিনুল হক প্রকাশ আমিনিক্যা, আনুমিয়া, মো: সেলিম, বক্কর, রুবেল, আজগরওরফেরুবেল, আবু, অজিআহমদ, আজিজআহমদ, ফজল কাদের প্রকাশ ফজল্যা, এনাম, লেদু, কামরুলইসলাম, আমির হোসেন, নুরুল ইসলাম প্রকাশবাইট্যা, মো: ইউনুছ, আবুল কালাম, নুরুন্নবী প্রকাশ কালাইয়া, রশিদ আহমদ, আবদুলনবী, সবুর আহমদ প্রকাশ মাজু।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App