×

জাতীয়

অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকাকে হত্যার পর নদীতে ভাসিয়ে দেয় প্রেমিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০৫:০০ পিএম

অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকাকে হত্যার পর নদীতে ভাসিয়ে দেয় প্রেমিক

নিপা

দীর্ঘ দেড় বছরের তদন্তে নিপা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করলেও মূল অভিযুক্ত প্রেমিক আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিরুলকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বশেষ আসামী মো. সুজন মিয়াকে নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানাধীন চরমধুয়া দড়িহাটি এলাকা থেকে গত ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

নিপা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান। বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে তদন্ত সংস্থাটির রাজধানীর ধানমন্ডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে, বিয়ের পরে পুরানো প্রেমিক আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিরুলের সঙ্গে আবারো যোগাযোগ হয় নিপার। তাদের সম্পর্কের একপর্যায়ে নিপা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে আমিরুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেন নিপা। তবে নিপার হাত থেকে মুক্তি পেতে একদিন রাতে বিয়ের কথা বলে তাকে ঘর থেকে নিয়ে যায় আমিরুল। মেঘনা নদীর মাঝে নৌকায় নিপাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ভাসিয়ে দেয়া হয় নদীতে। আমিরুলসহ এই কিলিং মিশনে অংশ নেন মোট ৭জন। এরমধ্যে আমিরুলের বন্ধু সুজন মিয়া ছাড়াও চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। আর বাকি ৪ আসামী বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। গ্রেপ্তার দুজনের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে পিবিআই নরসিংদী জেলার এসপি মো. এনায়েত হোসেন বলেন, আমিরুলের সঙ্গে নিপার দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আমিরুলের বাবা তাদের সম্পর্ক মেনে নেননি, বরং নিপার বাবাকে দিয়ে অন্যত্র বিয়ে দিতে সহায়তা করেন। সেখানে নিপা এক বছর সংসার করার পর সেখানে তার একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

একপর্যায়ে আমিনুল নিপার স্বামীকে তাদের অতীতের প্রেমের কাহিনী বলে দেয়। এতে স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে নিপাকে সন্তানসহ বাবার বাড়িতে রেখে আসেন। এরমধ্যে নিপার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে ফেলেন ও তার সঙ্গে আমিরুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে নিপা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। আমিনুল নিপার বাচ্চাটি নষ্ট করার জন্য গেলে, এটি সম্ভব হবে না বলে জানায় চিকিৎসক।

পরে আমিরুলকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন নিপা। এর থেকে মুক্তি পেতে আমিরুল অন্য সহযোগীদের নিয়ে নিপাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী গত বছরের ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর নিপাকে বিয়ের কথা বলে নৌকাযোগে মেঘনা নদীতে নিয়ে যায়। মাঝ নদীতে নিয়ে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে ও কাঠ দিয়ে এলোপাথারি পিটিয়ে নিপার মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা।

পিবিআই'র এই কর্মকর্তা বলেন, নিপাকে হত্যার পর চরের কোথাও লাশটি চাপা দেয়ার পরিরিকল্পনা ছিলো তাদের। কিন্তু নদীর সবদিকে জেলেদের উপস্থিতি থাকায় উপায় না দেখে নিপার মরদেহ লাশটি নদীতে ভাসিয়ে দেয় তারা। হত্যায় ব্যবহৃত গামছা ও তাদের সঙ্গে থাকা কোদাল নদীতে ফেলে দেয়। এমনকিট নৌকাটিও অন্যত্র বিক্রি করে দেয় জড়িতরা। পরে যদিও নৌকাটিকে আলামত হিসেবে সংগ্রহ করতে পেরেছে পিবিআই। ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে অজ্ঞাত হিসেবে ভাসমান মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমান মফিদুলের সহায়তায় মরদেহটি দাফন করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে পরিবার গিয়ে নিপাকে শনাক্ত করে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করতে গিয়ে পরিবার নানা ধরনের ভয়ভীতির সম্মুখীন হয়। পরে নিপার মা কোহিনুর বেগমের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নরসিংদী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে পিবিআইর এসপি এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, প্রধান অভিযুক্ত আমিরুল বিদেশে পলাতক বলে শোনা যাচ্ছে, কিন্তু বিষয়টি আমরা এখনো নিশ্চিত নই, আমরা তাকে খুঁজছি। এছাড়া, গত বছরের ৬ জানুয়ারি কিলিং মিশনে অংশ নেয়া মো. জহিরুল ইসলামকে রমনা থানাধীন মগবাজার টিএনটি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও আসামী সেলিম, খাইরুল ইসলাম, নুরুল ইসালাম ও আতিক উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App