×

মুক্তচিন্তা

শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের কী হবে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২১, ১২:৪৪ এএম

এক সময় পুরো রাজধানীতেই ছিল লোকাল বাসের দাপট। আর সব পরিবহনেই শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল হাফ ভাড়া। বাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখালেই কন্ডাক্টররা হাফ ভাড়া নিত। বহু বছর ধরেই শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা পেয়ে আসছিল। তবে কোনো কোনো পরিবহন এ সুবিধা প্রশ্রয় দিত না। এ নিয়ে চলত তর্ক-বিতর্ক এবং ঝামেলা। এ ঝামেলা কখনো কখনো বড় আকারও ধারণ করেছে। বেধে গেছে ছাত্র-শ্রমিক সংঘর্ষ। এমন ঘটনা অনেক রয়েছে। বাসে হাফ ভাড়ার বিষয়ে কন্ডাক্টরদের দাবি- মালিকের নিষেধ আছে হাফ ভাড়া নেয়া। আবার রাজধানীর অনেক বাসের দরজায় লেখা রয়েছে, ‘হাফ পাস নাই’ অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও কোনো কোনো বাস হাফ ভাড়া নেয়, আবার কোনোটা নেয় না। আবার অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, যাওয়ার পথে যে শিক্ষার্থী হাফ ভাড়া দিয়েছে, কিন্তু ফেরার পথে তাকে একই পরিবহনে পূর্ণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। পরিবহন খাতে নানা নৈরাজ্যের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিয়েও চলছে এক ধরনের নৈরাজ্য। বর্তমানে সিটিংয়ের নামে অভিনব কৌশল অবলম্বন করছেন গণপরিবহনের লোকরা। ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কন্ডাক্টরের প্রতিনিয়ত ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। বাস মালিকদের এই আচরণে ক্ষুব্ধ যাত্রীরাও। শুধু তাই নয়, ওইসব বাস সার্ভিস স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী দেখলেই বাসে তুলতে চায় না। আবার নিজেকে ছাত্র পরিচয় দিয়ে কেউ হাফ ভাড়া দিতে চাইলে কন্ডাক্টর ক্ষেপে গিয়ে খারাপ ব্যবহারও করেন। ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়া সরকার অনেক আগে করে রেখেছে কিন্তু এই বাসগুলো সরকারের কথা মতো কাজ করছে না। নিজেদেরই সরকার ভাবে আর রাস্তাটাও। হাফ ভাড়া নেই কিন্তু সিটিং সার্ভিসের কথা বলে দাঁড়িয়ে আসতে হয় তাও আবার পুরো ভাড়া দিয়ে। সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে। এই বাহানা তুলে এখন আবার বাস মালিকদের চাপে গণপরিবহনের ভাড়াও বাড়িয়েছে। যেখানে স্টুডেন্ট ভাড়া ১০ টাকা ছিল সেখানে এখন আড়াই গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে যাওয়া লাগবে। ছাত্রাবস্থায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর হাতেই খুব সীমিত পরিমাণে টাকা থাকে। বাবা-মায়ের দেয়া টাকাই তাদের খরচের প্রধান উৎস। এর বাইরে টিউশনি বা অন্য কোনো সোর্স থেকে প্রাপ্ত টাকার পরিমাণও খুব বেশি হয়ে থাকে না। বাস ভাড়ার জন্য শুধু বাসে যাতায়াতের জন্যই যদি রাস্তায় প্রতিদিন গুনতে হয় ৫০-৮০ টাকার মতো, তবে মাসে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। যা বহন করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কিছু দিন আগের কথা শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ৯ দফা দাবি তোলে। এর মধ্যে একটি দাবি ছিলও ‘প্রতিটি বাসে স্টুডেন্টদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’ আন্দোলন স্থগিত হয়েছে অনেকদিন হলো এখনো গণপরিবহনগুলোতে হাফ ভাড়া নেয়া হয় না। বিদ্যালয় অবকাঠামো থেকে শুরু করে শিক্ষা উপকরণে এসেছে আধুনিকতা। প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে উপকৃত হয় এমন সুবিধা নিশ্চিত করেছে সরকার। শিক্ষার্থীদের সামান্য সহযোগিতা হিসেবে অর্ধেক পরিবহন ভাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিবহন মালিকরাও এক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। ভবিষ্যৎ জাতির কর্ণধার বিনির্মাণে বাস মালিকদের এগিয়ে আসতে হবে। গণপরিবহনের হাফ পাস শিক্ষার্থীদের আবদার নয়, এটা এক ধরনের অধিকার। অথচ নিজেদের এমন অধিকার আদায় করতে গিয়ে সড়কে প্রাণ দিতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীদের। ন্যায্য অধিকার হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস ব্যবস্থা পুরোদমে চালু করার দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের। গণপরিবহনগুলোতে বড় করে লেখা থাকে ‘হাফ পাস নাই’। যা শিক্ষার্থীদের গণপরিবহনে যাতায়াত করতে বিড়ম্বনায় ফেলে এবং প্রায়ই পরিবহন স্টাফদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়। যা কখনোই কাম্য নয়। তাই অবিলম্বে অতিরিক্ত বাস ভাড়া প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থীদের ‘হাফ পাস’ নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যৎ জাতির কর্ণধার বিনির্মাণে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ পাস’ নিশ্চিত করাই হোক আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।

সুরাইয়া ইয়াসমিন তিথী : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App