×

জাতীয়

সিসিইউতে কেমন আছেন খালেদা জিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২১, ১২:২৩ পিএম

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া কেমন আছেন? সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা এই ভালো, তো এই খারাপ’। তার রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি হচ্ছে না। শরীরের হিমোগ্লোবিন যা আছে তা ধীরে ধীরে পানি হয়ে যাচ্ছে। কিছু খেলেই বমি হচ্ছে। অক্সিজেনের লেভেল আপ-ডাউন করছে। ফলে বাধ্য হয়ে কখানো কৃত্রিম অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ডায়াবেটিসের কন্ট্রোল হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হচ্ছে ইনসুলিন।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের ব্লক-বির ৭২০৫ ও ৭২০৪ নম্বর কেবিনে বিএনপির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা এমন বলেই জানিয়েছেন নির্ভরযোগ্য সূত্র।

ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে দেখার পর হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত দেন। প্রথমে কেবিনে রাখা হলেও রবিবার তাকে নেওয়া হয় সিসিইউতে।

এদিকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কি অসুখ হয়েছে, কেনো তাকে বারবার হাসপাতালে আসতে হচ্ছে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীদের মনে। আগ্রহের কমতি নেই সাধারণ মানুষেরও। তবে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে বাড়তি কোনো তথ্য দিতে নারাজ বিএনপির হাইকামান্ডের নেতারা। সিনিয়র কোনো নেতার কাছে দলীয় প্রধানের অসুস্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে সুকৌশলে এড়িয়ে যান অনেকেই। আবার কারো সোজা উত্তর তার পারিবারের সদস্যরা জানেন। এমনি আজ সোমাবার বিকেল ৫ টায় দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের এজেন্ডায়ও খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়টি প্রথমে রাখা হলেও এবার তা রাখা হয়নি।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যও বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব একাধিকবার বলেছেন, দীর্ঘ চার বছর তার চিকিৎসা না হওয়ার কারণে, কারাগারে রাখার কারণে তিনি অনেকগুলো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে তার হার্টে সমস্যা তৈরি হয়েছে, কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার লিভারে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তার পুরোনো অসুখ আথ্রাইটিসও রয়েছে। এসব মিলিয়ে উনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ডাক্তাররা বলছেন, তিনি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার আবেদনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, উনার পরিবার আবেদন করেছেন সরকারের কাছে যে তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হোক। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হোক।

তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, ম্যাডাম এখন সিসিইউতে আছেন। সেখানেই তার চিকিৎসা ও পরীক্ষাগুলো হচ্ছে। জাহিদ হোসেন বলেন, মেডিকেল বোর্ডের বৈঠক রয়েছে। সেখানে উনার সর্বশেষ অবস্থা ও পরীক্ষার ফলাফলগুলো পর্যালোচনা করা হবে। তিনি বলেন, ৭৬ বছর বয়েসী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।

বিদেশে যাওয়ার মতো তার শারীরিক সক্ষমতা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, তার বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, এটি আপনারা জানেন। সরকার কীভাবে তাকে যাওয়ার অনুমতি দেবে, সেটি সরকারের বিষয়। বর্তমানে তিনি দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। ম্যাডামের শারীরিক বিষয়ে দলের মহাসচিব আপনাদের জানাবেন।

সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ভোগাচ্ছে খালেদা জিয়াকে। তার সুগার লেভেল কখনো ১৪ আবার কখনো ১৮ থেকে ২০ এ গিয়ে ঠেকছে। সবমিলিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তার শারীরিক অবস্থা ওঠা-নামার মধ্যে আছে। এদিকে, সরকারের কাছ থেকে চূড়ান্ত (লিখিত) অনুমতি না পাওয়ায় খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশযাত্রার প্রাক-প্রস্তুতি আটকে আছে।

গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর ২৫ অক্টোবর তার ছোট একটি অস্ত্রোপাচার করা হয়। এরপর হয় বায়োপসি পরীক্ষা। এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পেতে তা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়। প্রায় এক মাসের মতো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে গত ৭ নভেম্বর বিকেল ৫টায় ছাড়পত্র নিয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায়’ ফিরেন খালেদা জিয়া।

২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। মহামারীর শুরুতে গত বছর ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা ¯’গিত করে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত তিনবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App