×

সারাদেশ

ঋণের বোঝা নিয়ে সাদা সোনার স্বপ্ন বুঁনছেন কৃষকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২১, ০১:৩৩ পিএম

ঋণের বোঝা নিয়ে সাদা সোনার স্বপ্ন বুঁনছেন কৃষকরা

বর্ষার পানি নামতে শুরু করেছে। চলছে আমন ধান কাটা। ধান কাটা শেষে জমি পরিস্কার করে ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়েই মাটিতে সাদা সোনা খ্যাত রসুন লাগাতে শুরু করেছে চলনবিলের কৃষকরা। প্রধান ফসল রসুনে ক্ষতি হলেও সাথী ফসল বাঙ্গি চাষে লাভ হওয়ায় এখনো এই আবাদ ধরে রেখেছেন চলনবিল এলাকার কৃষকরা। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রসুনের ন্যায্য মূল্য না পেলেও কৃষি উপকরণের দাম বাড়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় রসুনে উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে চলতি মৌসুমে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, নিড়ানী, শ্রমিকের শ্রমের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে চলনবিলে রসুন চাষের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চলনবিলের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, চাটমোহর, সিংড়ায় মোট ২২ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে প্রতি বিঘায় বীজ বাবদ ১২ হাজার, সারকীটনাশক বাবদ ১০ হাজার, শ্রমিক খরচ ৮ হাজার, সেচ বাবদ ৬ হাজার টাকা। এছাড়া ক্ষুদ্র বর্গা চাষিরা প্রতি বিঘা জমি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বর্গা (লীজ) নিয়ে অধিক খরচে রসুন আবাদ করছেন।

গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন (৫০) জানান, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছেন তিনি। বিঘা প্রতি বীজ, সার কীটনাশক ও সেচ বাবদ খরচ হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। বপন ও নিড়ানীসহ শ্রমিক খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এতে তার বিঘা প্রতি মোট ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে তিনি রসুনের সাথী ফসল হিসেবে ৫ বিঘা জমিতেই বাঙ্গি আবাদ করেছেন। অনুকুল আবহাওয়া পেলে সেখান থেকে প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ বাদে ২০থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।

একই এলাকার পাটপাড়া গ্রামের কৃষক সুকুমার সরকার জানান, চলতি বছরে ৬ বিঘা বর্গা (লীজ) নিয়ে রসুন আবাদ করেছেন। রসৃনে চষে খরচ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। উপায়ান্ত না পেয়ে সমিতি (এনজিও) থেকে লক্ষাধিক টাকা সুদে নিয়ে রসুনের আবাদ করেছেন। অনুকুল আবহাওয়া না পেলে অথবা ফসলের ন্যায্য মুল্য না পেলে ঋনের বোঝা সুদের টাকা দিতে পথে বসতে হবে তাকে।

চলনবিলের রসুন চাষী নাজমুল হোসেন ও জালাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন জানান, গত প্রায় ২২ বছর ধরে চলনবিল অঞ্চলে বিনাচাষে রসুন আবাদ শুরু হলেও এ বছর করোনায় হাতের অবস্থা ভালো না থাকায় ঋণ কর্জ করে জমি লীজ নিয়ে রসুন রোপণ করছেন তারা। ফসলের ন্যায্যমুল্য না পেলে পথে বসতে হবে তাদের।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, চলনবিলে এ বছর ২৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে রসুন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে চলনবিলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রসুন চাষ করা হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ রসুন চাষ হয় চলনবিলের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, চাটমোহর ও সিংড়া বিলের কিছু অংশে। প্রয়োজনীয় কৃষি পরামর্শ এবং সার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে কৃষকদের মাঝে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App