×

জাতীয়

দুর্বল মনিটরিং: বাস ভাড়া নৈরাজ্য থামানো যাচ্ছে না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২১, ০৮:১১ এএম

দুর্বল মনিটরিং: বাস ভাড়া নৈরাজ্য থামানো যাচ্ছে না

বাসভাড়ায় নৈরাজ্য বন্ধে মনিটরিং করছে ভ্রাম্যমান আদালতে নিযুক্ত কর্মকর্তারা। ছবি : ভোরের কাগজ

বাস ভাড়া বাড়ানোর পর থেকে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য যেন থামছেই না। প্রতিদিনই বিভিন্ন রুটে যাত্রীদের সঙ্গে কন্ডাক্টরের ঝগড়া চলছে। বিআরটিএ’র মোবাইল কোর্টে জরিমানা দেয়ার পরক্ষণেই আবার তারা যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছে। যাত্রীরা বাসের চালক ও হেলপারের সঙ্গে পেরে উঠছে না। কথা কাটাকাটির পর মারামারির ঘটনাও ঘটছে। ৭ টাকা ভাড়ার জায়গায় নেয়া হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ৩ কিলোমিটার বাসে যেতে ৮ কিলোমিটারের ভাড়াও যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে। বিআরটিএ’র মোবাইল কোর্ট ভাড়ার নৈরাজ্য রোধে অভিযান চালালেও তা জোরালো নয়। সব সড়কে মোবাইল কোর্টের দেখাও মিলছে না।

বাস ভাড়া বাড়ানোর পর সৃষ্ট নৈরাজ্যের প্রমাণ তুলে ধরে সড়ক নিয়ে কাজ করা সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বেশ কিছু উদাহরণ তুলে ধরে গ্রহণযোগ্য ভাড়া নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে সংগঠনটি। এরপরও বাস ভাড়া নৈরাজ্য থামছে না। গুলিস্তান থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে শাহবাগ যেতে আগে পরিবহন কোম্পানি ভেদে ১০, ১৫ ও ২৫ টাকা ভাড়া ছিল। এখন তারা ১৫, ২০ ও ৩৫ টাকা ভাড়া আদায় করছে।

মোহাম্মদপুর থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে বনশ্রী যাওয়া ‘তরঙ্গ প্লাস’ বাসে অনিয়মের শেষ নেই। এই বাসের যাত্রী খোন্দকার কাওছার হোসেন অভিযোগ করেন, এই বাসে সব সময়ই বেশি ভাড়া রাখা হয়। মোহাম্মদপুর থেকে মৌচাক পর্যন্ত ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা। একজন যাত্রী মোহাম্মদপুর থেকে ঝিগাতলা নামলে ১০ ভাড়া নেয়া হয়। আবার সেখান থেকেই কেউ উঠলে মৌচাক পর্যন্ত ৩৩ টাকা ভাড়া হলেও ৩৫ টাকা নেয়া হচ্ছে। কোনো যাত্রী কাঁটাবন, শাহবাগে নামলেও তাকে ৩৫ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এক সিটের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৪৫ টাকা। এক কিলোমিটার পেছনের পথের ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা ভাড়ার সঙ্গে বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়ার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই নিয়ে প্রতিদিনই উত্তপ্ত তর্কবিতর্ক চলছে।

মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ থেকে উত্তরা আবদুল্লাহপুর হয়ে ধউর চৌরাস্তা পর্যন্ত ভূঁইয়া পরিবহন মিনিবাসে ২৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরত্বের ভাড়া ৫৪ টাকা। নেয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা। এই পথে বিআরটিএ নির্ধারিত স্টপেজে ১০ টাকা ভাড়া বেঁধে দেয়া হলেও নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা, ১৬ টাকার ভাড়া ২০ টাকা। আবার শ্যামলীর শিশুমেলা থেকে বাসে উঠে কাকলীর দূরত্ব ৮ দশমিক ৩ কিলোমিটারের ভাড়া ১৭ টাকা হলেও বাসের কন্ডাক্টর ২০ টাকা নিচ্ছে। আগারগাঁও থেকে উঠে কোনো যাত্রী আড়াই কিলোমিটার দূরের বিজয় সরণিতে নামলেও তাকে কাকলী পর্যন্ত ২৫ টাকা ভাড়াই দিতে হচ্ছে।

নিরঞ্জন রায় অভিযোগ করেন, রামপুরা থেকে মৌচাকের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার হলেও বাসগুলো ১০ টাকার পরিবর্তে ১৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। অথচ কিলোমিটার অনুযায়ী এটি ন্যূনতম ভাড়া সাড়ে ৬ টাকা হয়। এই নিয়ে প্রতিদিন বাসের লোকজনের সঙ্গে যাত্রীদের বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। বিশেষ করে রাইদা বাসের লোকজন যাত্রীদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছে। গত শুক্রবার রাতে রাইদা পরিবহনের কন্ডাক্টর জাহাঙ্গীর নামের এক যাত্রীকে মারধরও করেছে। জাহাঙ্গীর কন্ডাক্টরের কাছে ভাড়ার চার্ট দেখতে চাইলেও তাকে চার্ট দেখানো হয়নি।

মিজানুর রহমান জানান, রায়েরবাগ থেকে লাব্বাইক পরিবহনে মৌচাক পর্যন্ত ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা। অথচ বিআরটিএ যে হারে ভাড়া বাড়িয়েছে তাতে ৫ টাকার বেশি ভাড়া বাড়ার কথা নয়। গায়ের জোরে বেশি টাকা আদায় করে নিচ্ছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। হেলপার ও চালকরা বিআরটিএ’র আইন মানে না। ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়ার পরও নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। বাস ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য দূর করতে বিআরটিএকে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েতউল্ল্যাহ বলেন, আমরা মালিক সমিতি থেকে বিআরটিএ নির্ধারিত বাস ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি। বাস ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধে বিআরটিএ-র মোবাইল কোর্ট কাজ করছে। আমরা নিজেরা উপস্থিত থেকে তাদের সহযোগিতা করছি। আইন না মানলে রুটপারমিট বাতিলের জন্য বিআরটিএ-র কাছে সুপারিশ করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App