এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু রবিবার
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২১, ০৫:৪৪ পিএম
শ্রেণি কার্যক্রম স্থগিত থাকবে ১০ দিন
সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কাল রবিবার থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসছে সারা দেশের ২২ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী। আগামী ২৩ নভেম্বর এ পরীক্ষা শেষ হবে। কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম দিন পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে এবারের এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় দেড় ঘণ্টা। সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা শুরু হয়ে চলবে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এক্ষেত্রে এমসিকিউ ও লিখিত’র মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না।
এর মধ্য দিয়ে দেড় বছর পর প্রথম কোনো পাবলিক পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার খাতা। বসানো হয়েছে সিট। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রশ্নফাঁসের শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে শিক্ষাবোর্ড বলছে, প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ালে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। এদিকে, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা উপলক্ষে রবিবার থেকে স্কুলে আগামী ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠদান বন্ধ থাকবে। ২৪ নভেম্বর থেকে যথারীতি শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা আয়োজনের লক্ষ্যে এরইমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি বেঞ্চে দুজন করে পরীক্ষার্থী বসানো হবে। করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের হাত জীবাণুমুক্ত করে এবং তাপমাত্রা মেপে স্কুলে প্রবেশ করানো হবে। কারো শরীরের তাপমাত্রা বেশি আসলে এবং করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলে তাকে আলাদা রুমে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সেজন্য আইসোলেশন রুমও প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্র এলাকায় অভিভাবকদের বাড়তি চাপও নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
করোনার কারণে যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়নি ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষা। ছিল নানা অনিশ্চয়তা। সব বাধা কাটিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেয়া হচ্ছে পরীক্ষা। এবার পরীক্ষার সময় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। বিজ্ঞান শাখার পরীক্ষার্থীদের লিখিত অংশে ৮টি প্রশ্নের মধ্যে ২টি উত্তর দিতে হবে। আর এমসিকিউ অংশে ২৫টির মধ্যে ১২টির উত্তর। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পরীক্ষার্থীদের লিখিত অংশে ১১টির মধ্যে ৩টি এবং এমসিকিউ অংশে ৩০ টির মধ্যে ১৫টি উত্তর দিতে হবে।
আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব হোসেনে আরা খাতুন বলেছেন, আসন বিন্যাসে নিশ্চিত করা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিষয়টি। পরীক্ষার শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, প্রশ্নফাঁসের নামে গুজব ছড়ালে নেয়া হবে ব্যবস্থা। কোনো পরীক্ষার্থীর মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা গেলে আলাদাভাবে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রতি কেন্দ্রেই থাকবে আইসোলেশন সেন্টার।
এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা তিনটি বিষয়ে অনুষ্ঠিত হবে। থাকছে না আবশ্যিক ও চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান বা উচ্চতর গণিতে। মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীরা অংশ নেবে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা, ভূগোল ও পরিবেশ এবং অর্থনীতি/পৌরনীতি ও নাগরিকতা। আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থীরা অংশ নেবে ব্যবসায় উদ্যোগ, হিসাব বিজ্ঞান এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে।
পরিবর্তন এসেছে নম্বর বণ্টনেও, বিজ্ঞান বিভাগে লিখিত ৮টি প্রশ্নে মধ্যে ২টি প্রশের উত্তর দিতে হবে। প্রতি প্রশ্নের মান ১০। এছাড়া ১২ নভেম্বর এমসিকিউ থাকবে। লিখিত ২টি প্রশ্নের মানকে ৫০ নম্বরে কনভার্ট করে এবং ১২ নম্বরের এমসিকিউকে ২৫ নম্বরে কনভার্ট করে ফলাফল নির্ধারণ করবে বোর্ড। এছাড়া ২৮ নভেম্বরের মধ্যে ব্যবহারিকের ২৫ নম্বর বোর্ডকে জানাবে স্কুল। ঠিক একইভাবে বাণিজ্য ও মানিবক বিভাগে লিখিত ১১টি প্রশ্নের মধ্যে ৩টির উত্তর দিতে হবে। থাকবে ১৫ নম্বরের এমসিকিউ। নম্বর বণ্টনের ক্ষেত্রে লিখিত তিনিটি প্রশ্নকে ৭০ নম্বরে রূপান্তর করে এবং ১৫ নম্বরের এমসিকিউকে ৩০ নম্বরে রূপান্তর করে ফলাফল নির্ধারণ করবে বোর্ড।
প্রসঙ্গত, গত বছরের থেকে চলতি বছরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৪ জন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, চলতি বছর ৩ হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে মোট ২৯ হাজার ৩৫টি স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩জন পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেবে। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১৭ হাজার ৬৭৬টি স্কুলের ১৮ লাখ ৯৯৮ জন শিক্ষার্থী। আর ৯ হাজার ১১০টি মাদ্রাসার ৩ লাখ ১ হাজার ৮৮৭জন পরীক্ষার্থী ৭১০টি কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবে ২ হাজার ৩৪৯টি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ২৪ হাজার ২২৮ জন শিক্ষার্থী।