×

খেলা

উইলিয়ামসন-ফিঞ্চের বিশ্বজয়ের লড়াই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১০:২৪ পিএম

ওয়ানডেতে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। অথচ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি এখনো ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাদের। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড। তবে যারাই জিতুক ওশেনিয়া মহাদেশ প্রথমবারের মতো মাতবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের আনন্দে। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে বিশ্বকাপ জয়ের লড়াইয়ে মাঠে নামবে কেন উইলিয়ামসন ও অ্যারন ফিঞ্চরা।

২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড হেরেছিল দুর্ভাগ্যকে সঙ্গী করে। রানের হিসাবে ম্যাচ টাই হলেও আইসিসির নিয়মের গ্যাড়াকলে বাউন্ডারির হিসেবে পিছিয়ে থেকে শিরোপা হাতছাড়া করে কিউইরা। তবে সে প্রতিশোধ চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে মিটিয়েছে উইলিয়ামসনরা। এর আগে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে আইসিসির বড় কোনো শিরোপ হাতছাড়া করেছিল নিউজিল্যান্ড। এবার তারা আবারো ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে। সংস্করণটা ভিন্ন হলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের সে হিসেবে এ আসরে চুকাতে চাইবে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। পিছিয়ে নেই অজিরাও। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ৫টি ট্রফি যাদের ঘরে, তারা একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি জিতে সে অপূর্ণতা পূরণের প্রত্যাশায় আছেন। শেষবার ২০১০ সালে তৃতীয় বিশ্ব আসরে তারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে হেরে আক্ষেপে পুড়েছিল। এবার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সিডনিবাসীদের মন জয় করতে চান অ্যারন ফিঞ্চরা।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই ওশেনীয়দের মধ্য দেখা হয়েছে মাত্র একবার। ২০১৬ সালে ভারতের ধর্মশালায় সে ম্যাচটি অবশ্য জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। ১৪৩ রানের স্বল্প লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অজিরা ম্যাচটি হারে ৮ রানের ব্যবধানে। তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচের হিসেবে এগিয়ে অজিরা। ১৫ বারের দেখায় ৯ জয় অজিদের, বাকি ৫ ম্যাচ কিউইদের। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচের যাত্রাটা হয়েছিল এই দুই দলের মাধ্যমে। ২০০৫ সালে প্রথমবার বিশ্ব ক্রিকেট ২০ ওভারের ম্যাচের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল। সে ম্যাচটিতে কিউইদের বিপক্ষে ৪৪ রানের জয় তুলে নিয়েছিল অজিরা।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট স্বল্প ওভারের ম্যাচ। একজন বোলার অথবা একজন ব্যাটসম্যানই পুরো ম্যাচের গতিপথ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। আইসিসি টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা তিন দল ইংল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান ইতোমধ্যে আসর থেকে বিদায় নিয়েছেন। ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ড র‌্যাঙ্কিংয়ের চারে, অন্য প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া আছে র‌্যাঙ্কিংয়ের ছয়ে। র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা দলগুলো তাদের বিপক্ষে হেরেই আসর থেকে বিদায় নিয়েছে। সুতরাং অতীত পরিসংখ্যান কিংবা র‌্যাঙ্কিংয়ের হিসাব না করে চলতি আসরে পারফরমেন্স বিচারে কারা শিরোপার লড়াইয়ে এগিয়ে তা পরখ করা যাক। ক্রিকেট যদিও একটি দলীয় খেলা, তবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ একজন ব্যাটসম্যান বা বোলারের হাতেই থাকে। তাই দুই দলের ম্যাচ নিয়ন্ত্রক বোলার ও ব্যাটসম্যানদের চলতি বিশ্বকাপের পারফরমেন্স আলোচনা করা যাক।

দুবাইয়ের ফাইনালে ওপেনিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভরসা অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ এবং ডেভিড ওয়ার্নার। টপ অর্ডারে অজি দলের ট্রাম্পকার্ড মিচেল মার্শ। ফিনিশিংয়ে তাদের মূল ভরসা মার্কাস স্টয়নিস। বোলিংয়ে অজিদের ট্রাম্পকার্ড ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড এবং স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডেরও ব্যাটিংয়ে মূল ভরসা ওপেনিংয়ে। ড্যারেল মিচেল ও মার্টিন গাপটিল নিজেদের মেলে ধরতে পারলে রান পাহাড়ে চাপা পড়বে অজিরা। ম্যাচে তাদের হাল ধরার কারিগর অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ফিনিশিংয়ে তাদের ট্রাম্পকার্ড জিমি নিশাম। ফাইনালে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারেন দুই ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি, স্পিনার ইশ সোধি যে কোনো মুহূর্তে বদলে দিতে পারেন ম্যাচের গতিপথ।

ডেভিড ওয়ার্নার : বিশ্বকাপের পূর্বে ফর্মহীন ডেভিড ওয়ার্নারকে দলে নেয়ায় অনেক সমালোচনা হয়েছিল। তবে বিশ্বকাপে এসে নিজের জাত চেনাতে ভুল করেননি তিনি। তার সঙ্গে সমালোচকদের মুখও বন্দ করেছেন। চলতি বিশ্বকাপে তার সর্বোচ্চ রান ৮৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ম্যাচটিতে অপরাজিত ছিলেন ওয়ার্নার। ৬ ম্যাচে ২ ফিফটি হাঁকানো অজি ওপেনারের ফিফটি হতে পারত ৩টি। কিন্তু আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত ও নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণে ৪৯ রানে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। বল ব্যাটে না লাগলেও ক্যাচের আউটের শিকার তিনি। চলতি বিশ্বকাপে ৪৭ গড়ে ২৩৬ রান সংগ্রহ করে আসরে রান সংগ্রাহকের তালিকায় সেরা চারে ওয়ার্নার।

অ্যারন ফিঞ্চ : বিশ্বকাপে খুব একটা জ্বলে উঠতে পারেননি অ্যারন ফিঞ্চ। তবে নিজেকে মেলে ধরতে পারলে তার চেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান আর কে হতে পারেন! টি-টোয়েন্টিতে দুটি ১৫০ এর অধিক রানের ইনিংস আছে শুধু তার নামের পাশেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার ১৭২ রানের ইনিংস এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত কোনো রানের ইনিংস। চলতি বিশ্বকাপে তার সংগ্রহ ১৩০ রান।

মিচেল মার্শ : ওপেনিংয়ে ওয়ার্নার-ফিঞ্চরা ব্যর্থ হলে ম্যাচের হাল ধরবেন মিচেল মার্শ। চলতি বিশ্বকাপে এক ফিফটির সাহায্য তার রান সংগ্রহ ১০৮।

মার্কাস স্টয়নিস : ফিনিশিংয়ে অজি দলের জন্য স্টয়নিস কতটা কার্যকরী হতে পারেন তা পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচ দেখেছেন তারাই জানেন। পাকদের বিপক্ষে তার ৩১ বলে ৪০ রানের অপরাজিত ইনিংস দলকে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে সাহায্য করেছে।

মার্টিন গাপটিল : বিধ্বংসী মার্টিন গাপটিল। ক্রিজে দাঁড়াতে পারলে নিউজিল্যান্ডকে রানে বেঁধে রাখা কঠিন যে কোনো দলের জন্য। ৬ ম্যাচে তার রান সংগ্রহ ১৮০। তার বিধ্বংসী ইনিংস ৫৬ বলে ৯৩ সুপার টুয়েলভে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। ফাইনালে এমন কিছু হলে ম্যাচ জিতবে নিউজিল্যান্ড।

ড্যারেল মিচেল : টি-টোয়েন্টিতে ড্যারেল মিচেলের পথচলা খুব বেশি দিনের না। তবে বিশ^কাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৭ বলে ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে এখন তিনিই ফাইনালের নেপথ্য নায়ক।

কেন উইলিয়ামসন : কিউই ওপেনিং বিভাগ ব্যর্থ হলে, ম্যাচের হাল ধরার দায়িত্ব থাকবে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের কাঁধে। চলতি বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচের মধ্য ২ ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

জিমি নিশাম : ম্যাচ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ফিনিশিংয়ে থাকা ব্যাটসম্যান। নিউজিল্যান্ড দলে সে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার নিশাম। সেমিফাইনালে ১১ বলে ২৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করার ম্যাচে মূল নায়ক ছিলেন জিমি নিশাম।

কিউই বোলারদের মধ্য আক্রমণাত্মক হতে পারেন দুই ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি। ১১ উইকেট শিকার করে আসরের সেরা তৃতীয় বোলার বোল্ট। টুর্নামেন্টে ফাস্ট বোলারদের মধ্য সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। চলতি আসরে ৮ উইকেট শিকার করেছেন সুইয়ের মাস্টার টিম সাউদি। কিউইদের স্পিনে মূল ভরসা ইশ সোধি। আসরে ৯ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।

অন্যদিকে অজি দলের দুই ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজেলউডের ওপর নির্ভর করছেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। স্টার্ক ৯ এবং হ্যাজেলউড ৮ উইকেট শিকার করেছেন চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরে। তবে ফাইনালে অজিদের বোলিংয়ে ট্রাম্পকার্ড অ্যাডাম জাম্পা। ১২ উইকেট শিকার করে তিনি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেরা উইকেট শিকারি। আসরের সর্বোচ্চ (১৬) উইকেট শিকারি শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App