×

জাতীয়

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে না ফেরালে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে বিশ্ব: প্রধানমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২১, ১২:৪৮ এএম

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে না ফেরালে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে বিশ্ব: প্রধানমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত প্যারিস শান্তি সম্মেলনে বিশ্ব সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরাতে না পারলে বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত প্যারিস শান্তি সম্মেলনে তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই সতর্কবার্তা শোনান।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়ে বড় ধরনের আঞ্চলিক সংকট এড়াতে সহায়তা করেছে। তাদের মধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। এসব মানুষের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্বকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা নাহলে এ সংকট থেকে উদ্ভূত নিরাপত্তা ঝুঁকি শুধু আমাদের সীমান্তে আবদ্ধ থাকবে না। আমরা এর মধ্যেই তার আলামত দেখেছি।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে বিপুল সংখ্যক এই শরণার্থী এখন ‘বোঝা’ হিসেবে দেখছে সরকার। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের অগাস্টে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলেছে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারকে চাপ দিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।

বাংলাদেশে সৃষ্ট শরণার্থী সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমার যাতে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করে, সেজন্য নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তোলার উদ্যোগ চার বছর আগে নিয়েছিল যুক্তরাজ্য। তবে চীন ও রাশিয়া ওই উদ্যোগ বর্জন করে।

কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই শরণার্থী শিবির বাংলাদেশের জন্য বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। অন্ধকার নামতেই রাখঢাক ছাড়াই অস্ত্র-মাদকের ব্যবহার গা সওয়া হয়ে গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে।

সম্প্রতি নিজ কার্যালয়ে প্রত্যাবাসনে সোচ্চার রোহিঙ্গা নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ খুনের পর হত্যাকা- ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে সামনে এনেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, তাদের মধ্যে জঙ্গিবাদ ঢুকে পড়ছে, তা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তাদের অপরাধ প্রবণতা নিয়ে কথা হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অবশ্যই সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির অঞ্চল হতে হবে। এই অঞ্চলের জন্য আমাদের লক্ষ্য হলো- একে অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক।

তিনি বলেন, এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান যারা রাখে তাদের উচতি হবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতার ভিত্তিতে সকল অংশীদারের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার উন্নয়নে ফ্রান্স অন্যন্য অবদান রাখছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, যে ধরিত্রীকে আমরা আমাদের ঘর বলি, তা উত্তর ও দক্ষিণে বিভাজিত না থাকুক। ‘এক ধরিত্রীর’ নাগরিক হিসেবে সকলের সহমর্মিতা, মানবতা ও বৈচিত্র্য দিয়ে বিশ্বের এই ঐক্যকে এগিয়ে নেবার আহ্বাণ জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App