×

আন্তর্জাতিক

জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় চাই কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার: আইপিসিসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২১, ০৩:৫৫ পিএম

জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় চাই কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার: আইপিসিসি

ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)

গ্লাসগোতে আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় ধনী দেশগুলো বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার করে সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা ও দাবদাহের মতো একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করতে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন।

শুক্রবার (১২ নভেম্বর) গ্লাসগোতে কপ ২৬ জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিন। তবে আগামী বছরের শুরুতে আইপিসিস ‘র খসড়া প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এর আগেই এএফপি এই প্রতিবেদন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।

আগের হিসাব–নিকাশ বদলে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে খরচের যে পরিমাণ ধারণা করা হয়েছিল, দেখা যাচ্ছে তা যথেষ্ট নয় বলে চার হাজার পাতার ওই খসড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ছয় বছর আগে প্রাক্‌-শিল্পায়নের সময় থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য ১৯৬টি দেশ প্যারিস চুক্তিতে সম্মত হয়। এর মধ্যেই ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রাক্‌-শিল্পযুগ থেকে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এতেই বিশ্বব্যাপী বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, দাবানলসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে।

জাতিসংঘের হিসাব বলছে, এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর কথা বললেও, তাপমাত্রা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়াবে। এদিকে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে আইপিসিসি সতর্কতা জারি করেছে। তারা বলছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানেই এর প্রভাব থেকে মানুষকে বাঁচাতে খরচ বেড়ে যাওয়া। ২০৫০ সালের মধ্যে এই খরচের পরিমাণ বছরে এক ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। আর তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে শুধু আফ্রিকাতেই প্রতিবছর কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০০৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সামলাতে ভুক্তভোগী দেশগুলোকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার করে সহায়তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের মধ্যে এই সহায়তা কার্যকর হবে। তবে তা আবার ২০২৩ সাল পর্যন্ত পেছানো হয়েছে।

প্রায় এক দশক পুরোনো ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার পরিমাণকে একেবারেই সেকেলে বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিয়ন অব কনসার্নড সায়েন্টিস্টের অর্থনীতিবিদ রাচেল ক্লিটাস। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ২০২৫ সালের পরের কথা বলি, তখন আদতে ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন পড়বে।’

কেনিয়ার থিঙ্কট্যাংক পাওয়ার শিফট আফ্রিকার প্রধান মোহাম্মদ আদৌও একই কথা বলছেন। তিনি বলছেন, জলবায়ু–সংকট মোকাবিলায় উন্নয়নশীল বিশ্বের আর্থিক চাহিদার কানাকড়িও মিটবে না ১০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তায়।

জলবায়ু-সংকটের কারণে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব। আইপিসিসি বলছে, অভিযোজন ব্যয় বাড়ালে ক্ষতি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান পরিস্থিতিতে আগে থেকেই বন্যা ঠেকানো বা এ ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে শুধু চীনের গুয়াংঝাউ এলাকায় বন্যায় বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে এক ট্রিলিয়ন ডলারের চার ভাগের এক ভাগ। তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে সংকট আরও গভীর হবে। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হলে বছরে শহরটিতে ক্ষতির পরিমাণ হবে এক ট্রিলিয়ন ডলারের পুরোটাই। একই ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে ভারতের মুম্বাইসহ নিচু এলাকার শহরগুলোও।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, বন্যার কারণে আফ্রিকায় প্রতিবছর গড়ে ২৭ লাখ মানুষ বসবাসের স্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবে। এটা ঘটবে চলতি শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই। এ ছাড়া শস্যের ফলন কমবে। পড়তির দিকে যাবে ফসলের পুষ্টিগুণও। এতে পুষ্টিহীনতা দেখা দেবে। শুধু তা–ই নয়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানুষের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেবে। চাপ পড়বে স্বাস্থ্যসেবার ওপর।

জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় অবকাঠামো নির্মাণ, কৃষিকাজ, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষণের মতো খাতগুলোতে আগামী এক দশকে ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করলে তা থেকে ৭ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যাবে বলে আইপিসিসির মত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App