×

জাতীয়

ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু পুরস্কার পেল উগান্ডার মোটিভ ক্রিয়েশন্‌স

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২১, ০১:৫৭ এএম

ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু পুরস্কার পেল উগান্ডার মোটিভ ক্রিয়েশন্‌স

সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ইউনেস্কো-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত উগান্ডার বেসরকারি সংস্থা মোটিভ ক্রিয়েশন্‌স লিমিটেড-এর প্রধান। ছবি: পিএমও

বাংলাদেশের উন্নয়নের সুবর্ণ দশককে একটি বিস্ময়কর পরিবর্তনের গল্প হিসেবে চিহ্নিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ‘সৃজনশীল অর্থনীতিতে’ অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউনেস্কোর সঙ্গে একটি বৈশ্বিক পুরস্কার চালু করেছে।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) প্যারিসে ইউনেস্কো সদরদপ্তরে জমকালো অনুষ্ঠানে পুরস্কারটি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজয়ীর নাম ঘোষণা ও পুরস্কার হস্তান্তরের আগে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ সময় দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছি।

ইউনেস্কো সদরদপ্তরে ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’র জন্য ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে স্থানীয় সময় ৭টা ২২ মিনিটে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছোটবোন শেখ রেহানা। শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর ছোট ভিডিও চিত্র দেখানো হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের ব্যাপক সমর্থনে গত মঙ্গলবার ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়া অড্রে আজৌলে। নারীর ক্ষমতায়নসহ বাংলাদেশের উন্নয়নের ব্যাপক প্রশংসা করেন তিনি।

নিজেদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আর্ত-সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে অবদান রাখতে নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কয়েক দশক ধরে আমাদের দেশের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদয় সমর্থনকে আমরা বিনীতভাবে স্বীকার করি। আমরা এখন আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে অবদান রাখতে চাই।

সৃজনশীল অর্থনীতিতে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, সৃজনশীল অর্থনীতিতে বিনিয়োগের ফলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সম্মিলিত লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে।

এ দিন প্রথমবারের মতো সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ইউনেস্কো-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদান করেছে ইউনেস্কো। এ বছর সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে ইউনেস্কো পুরস্কার পেয়েছে উগান্ডার মোটিভ ক্রিয়েশন্‌স লিমিটেড  (MoTIV Creations Limited)। সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে তরুণদের শিল্প উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে কর্মসূচি প্রণয়ন ও সহায়তার স্বীকৃতি হিসেবে বেসরকারি সংস্থাটিকে এ পুরস্কার দেয়া হয়।

পুরস্কারের জন্য মনোনিত ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকে উগান্ডার কাম্পালার প্রতিষ্ঠান মোটিভ ক্রিয়েশন্স লিমিটেডকে বাছাই করা হয়। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি, সম্মানের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ৫০ হাজার ডলার পাবে।

শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার বৈশ্বিক অগ্রাধিকার অর্থাৎ লিঙ্গ সমতা এবং গোষ্ঠী হিসেবে যুবকদের অগ্রাধিকারে অবদান রেখে সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইউনেস্কোর প্রচেষ্টাকে আরও বেগবান করবে।

ইউনেস্কোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ইউনেস্কো-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার’ প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত বিশ্ব মানবতা ও শান্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের প্রতি সবচেয়ে উপযুক্ত সম্মান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টিও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’ -এ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে।

শিক্ষার প্রসার ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় সর্বোত্তম বিনিয়োগ এবং তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক ঘোষণা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত সদ্য-স্বাধীন দেশে নানা ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক ও কর্মচারীর চাকরি জাতীয়করণ করেন। এই সাধারণ উদাহরণটিতেই শিক্ষাক্ষেত্রে এবং একটি জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ গঠনে তাঁর অগ্রাধিকারের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সরকারও শিক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে।

টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, আমরা দেশের প্রায় প্রতিটি প্রামে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছি। দেশে এখন প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার। এগুলোর মধ্যে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকার পরিচালিত। ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। এখন প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি বই বিতরণ করা হয়। পিছিয়ে-পড়া এলাকাগুলোতে প্রায় ২৯ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বর্তমানে এক কোটি ৩ লাখেরও বেশি প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএস, পিএইচডি এবং পোস্ট-ডক্টরাল অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য আমরা ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’ চালু করেছি। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৮০ জন স্কলারকে ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে।

উচ্চ শিক্ষার প্রসারের সরকারের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশে ২০টি নতুন সরকারি প্রযুক্তি এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। বর্তমানে দেশে মোট সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২। এছাড়াও, ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেশে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে নিয়োজিত আছে। বর্তমানে ৪৯২টি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হচ্ছে।

সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া প্রতিরোধে ব্যাপক সহায়তা করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক স্তরে ছাত্রভর্তির হার ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৭ সালে স্কুলে ছেলে-মেয়ের অনুপাত বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩:৪৭-এ দাঁড়িয়েছে, যা ২০০৯ সালে ছিল ৩৫:৬৫। ক্রমবর্ধমান হারে নারী শিক্ষা প্রসারের ফলে বাল্য বিবাহের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে,  বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মণি, পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App