×

জাতীয়

সংগঠন সক্রিয়, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই বললেই চলে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২১, ০৮:১৭ এএম

সংগঠন সক্রিয়, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই বললেই চলে

বিএনপি। ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সেই মোতাবেক সারাদেশের তৃণমূলে সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এমন নির্দেশে বহুদিন ধরে সাংগঠনিকভাবে ঝিমিয়ে থাকা চট্টগ্রাম বিএনপি এখন পুরোদমে সচল ও সক্রিয়। এ বিভাগের জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড কমিটিগুলো গোছানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের আগেই কমিটি পুনর্গঠনের মাধ্যমে জেলা সম্মলন শেষ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, মূলত দল পুনর্গঠই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। তাইতো বদলে ফেলা হয়েছে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। আগের মতো কেন্দ্র থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ‘সুপার ফাইভ’ বা ‘সুপার সেভেন’ কমিটি আর হচ্ছে না। এখন থেকে কাউন্সিলররা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করছেন। দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে হলে এখন থেকে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সমর্থন পেতে হবে। সিন্ডিকেট কমিটি বা ‘পকেট কমিটির’ ব্যাপারে সতর্ক হচ্ছে বিএনপি।

ঘর গোছাতে তৎপর চট্টগ্রামের নেতারা

থানা, ওয়ার্ড ও নগর কমিটিগুলো দ্রুত গঠনের মাধ্যমে দলীয় কর্মকাণ্ড চাঙ্গা করার মিশন নিয়ে তারা মাঠে নেমেছেন। একই সঙ্গে তৃণমূলে আন্দোলনের বার্তাও দিচ্ছেন তারা। ভবিষ্যতে যেকোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলা ও এর অধীনে থাকা পৌর, উপজেলা, থানাসহ সব পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজও প্রায় শেষ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্র, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দলীয় হাইকমান্ডের তিন দিনের সিরিজ বৈঠকের পরে দীর্ঘদিন পর বিভাগীয় রাজনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। তৃণমূলকে গোছানোর অংশ হিসাবে প্রতিটি থানায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে মতবিনিময় সভা। প্রতিটি থানায় আলাদা সার্চ কমিটি করে ত্যাগীদের তুলে আনা হচ্ছে কমিটিতে।

চট্টগ্রাম বিএনপিতে ১ মহানগর ও ১০ সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। পাঁচটি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। বাকিগুলোর বেশিরভাগেই পূর্ণগঠন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরমধ্যে নোয়াখালী, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়িতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর রাঙ্গামটি জেলার সম্মেলনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটিগুলোর সম্মেলন শুরু হবে। চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা জানান, নগরীর ১৫টি থানায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে মতবিনিময় সভা করছেন নগর বিএনপি নেতারা। যা শেষ হবে ৯ ডিসেম্বর। এর মধ্যে কোতোয়ালি, পাঁচলাইশ, ইপিজেড ও চান্দগাঁওসহ চার থানায় মতবিনিময় শেষ হয়েছে। এসব সভায় নেতারা কর্মীদের চাঙা করে তোলার পাশাপাশি আন্দোলনের বার্তাও পৌঁছে দিচ্ছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ভোরের কাগজকে বলেন, নতুন কমিটি সিরিয়াসলি সংগঠন গোছানোর চেষ্টা করছে। বেশির ভাগ উপজেলায় ওয়ার্ড কমিটিগুলোও গোছানো শেষ। এখন সম্মেলনের অপেক্ষা। উপজেলা কমিটিগুলো শেষ হয়েছে, এখন ধারাবাহিকভাবে জেলা কমিটি নিয়ে কাজ করছি। এখানকার তৃণমূলে কোনো কোন্দল নেই, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। আমি নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো মনোমানিল্যের আঁচ পেলে মুখোমুখি বসিয়ে তাদের কথা শুনি এবং সমঝোতা করি।

মূল কমিটি ভেঙে দেওয়ায় কিছুটা সংকট

চট্টগ্রামে জেলার মূল কমিটি ভেঙে দেয়ায় নগর বিএনপিতে নেতৃত্বের কিছুটা সংকট রয়েছে। মূল কমিটি ভেঙে দিয়ে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর নগর বিএনপির ৩৯ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। মূল কমিটি না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ তিন সাংগঠনিক এলাকা মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার কর্মকান্ড চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। তিন মাসের জন্য গঠন করা এসব কমিটির মেয়াদও এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু ৯ মাস পার হলেও কমিটি হয়নি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, কমিটি পূর্ণগঠনের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছি আমরা। মূল কমিটি না থাকলেও আহ্বায়ক কমিটি মাধ্যমেই কাজ এগিয়ে চলছে। কোনো সংকট নেই। তিনি বলেন, আমরা আগে থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো করব। পরে সম্মেলনের মাধ্যমে নগর কমিটি হবে। মূলত এজন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হচ্ছে।

কোন্দল আছে, কোন্দল নেই

চট্টগ্রামে বিএনপিতে আভ্যন্তরীন কোন্দল তুলনামূলক খুবই কম। তবে বিভাগের তুলনায় কোন্দল বেশি চট্টগ্রাম জেলা বিএনপিতে। কিছু জেলায় ইউনিয়ন পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এর জেরে এ বিভাগের দক্ষিণ জেলার কমিটির কয়েকটি থানা ও পৌরসভা কমিটি গঠন করা হলেও দেখা দেয় চরম অসন্তোষ। ‘অনৈতিক সুবিধা’ নিয়ে কমিটি করার অভিযোগ ওঠে খোদ বিএনপির ভেতর থেকেই। দক্ষিণের একাংশে দেখা দেয় বিদ্রোহ। ঘোষণা করা হয় পাল্টা কমিটি। সেই বিদ্রোহ সামলাতে পরে বহিষ্কার করা হয় দক্ষিণের প্রভাবশালী তিন নেতাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App