×

বিনোদন

নির্যাতন সইতে না পেরে নানার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ মনীষার!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১০:১৬ এএম

নির্যাতন সইতে না পেরে নানার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ মনীষার!

ভারতীয় অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা / ছবি : সংগৃহীত

নির্যাতন সইতে না পেরে নানার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ মনীষার!
নির্যাতন সইতে না পেরে নানার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ মনীষার!

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মনীষা কৈরালা। সারা শরীর বিভিন্ন নলে জড়ানো। চোখ বন্ধ। কিন্তু অভিনেত্রীর হাতের মু্দ্রা বলছে, ‘সব ঠিক আছে’। হাসিমুখে মারণরোগকে জয় করেছিলেন তিনি। রবিবার (৭ নভেম্বর) জাতীয় ক্যানসার সচেতনতা দিবসে সেই কঠিন দিনের স্মৃতিচারণ করেন মনীষা। সেসব দিনের ছবি ইন্সটাগ্রামেও পোস্ট করেছেন তিনি।

চারটি ছবির সবগুলোতেই মনীষার মুখে হাসি। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন চিহ্ন বলছে, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। কোনো ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তার মাথায় চুল নেই, কোনোটায় আবার হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আছেন। ২০১২ সালের পর থেকে জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি তুলে ধরে আসছেন তিনি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

মারণব্যাধি ক্যানসারও হারাতে পারেনি যাকে, তাকে ক্যারিয়ারের শুরুতে পর পর ব্যর্থতা কীভাবে দমিয়ে রাখবে? সে কারণেই ব্যর্থতার খোলস থেকে বেরিয়ে নিজেকে যোগ্য অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। এ ভাবেও ফিরে আসা যায়, দেখিয়ে দিয়েছেন মনীষা কৈরালা।

নেপালের কাঠমাণ্ডুতে দুঁদে রাজনীতিকদের পরিবারে জন্ম, ১৯৭০ সালের ১৬ অগস্ট। তাঁর বাবা প্রকাশ কৈরালা নেপালের প্রাক্তন মন্ত্রী। ঠাকুরদা বিশ্বেশ্বরপ্রসাদ কৈরালা ছিলেন নেপালের বাইশতম প্রধানমন্ত্রী।

নেপালের ইতিহাসে কৈরালা বংশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বংশের প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণপ্রসাদ কৈরালাকে বিহারে নির্বাসিত করেছিলেন নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহারাজা চন্দ্র সামসের জঙ্গ বাহাদুর রানা। পরে দেশে ফিরে গিয়ে গণতন্ত্র স্থাপনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন সমাজকর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ।

শৈশব থেকেই মনীষার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিবিড়। তার ছোটবেলা কেটেছে বারানসীতে, দাদু-দিদিমার কাছে। পরে দিল্লি এবং মুম্বাইয়ে। তখন থেকেই ভারত ছিল মনীষার দ্বিতীয় বাড়ি।

স্কুলে পড়ার সময় মনীষা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু চিকিৎসক বা বংশের ধারা মেনে রাজনীতি, কোনোটাই হওয়া সম্ভব হলো না। পেশা হিসেবে বেছে নিলেন মডেলিং ও অভিনয়।

বারানসীর বসন্তকন্যা মহাবিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মনীষা। ক্লাস টেনের চূড়ান্ত পরীক্ষার পরে নেপালি ভাষার সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু হয় তার। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় সেই ‘ফেরি ভেতৌলা’ সিনেমা।

অভিনয়কেই ক্যারিয়ার করবেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে মনীষা চলে আসেন মুম্বাই। সুভাষ ঘাইয়ের পরিচালনায় মনীষার প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘সওদাগর’ মুক্তি পায় ১৯৯১ সালে।

কিন্তু এরপর একটানা ব্যর্থতা। ‘ফার্স্ট লভ লেটার’, ‘আনমোল’ এবং ‘ধনবান’ মুখ থুবড়ে পড়ে বক্স অফিসে। প্রযোজকদের কাছে মনীষার পরিচয় হয়ে যায় ‘অপয়া’। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ান তিনি ‘১৯৪২ আ লাভ স্টোরি’ সিনেমার হাত ধরে। যদিও ছবির প্রথম অডিশনে বিধুবিনোদ চোপড়া বাদ দিয়েছিলেন মনীষাকে। তার মনে হয়েছিল মনীষা অভিনেত্রী হিসেবে ভয়ংকর। পরে দ্বিতীয় অডিশনে বাজিমাত করেন মনীষা। মাধুরী দীক্ষিতের পরিবর্তে ছবির ‘রাজেশ্বরী’ বা ‘রাজ্জো’ চরিত্রে বিধুবিনোদ নির্বাচন করেন মনীষাকেই।

বক্স অফিসে সফল না হলেও এই ছবিটি অনেক দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এই ছবিটি প্রথম ‘ইউনিভার্সাল/অ্যাডাল্ট’ তকমা পায়। রাহুল দেব বর্মণের শেষ তথা অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ এই ছবিতেই। বলা যায়, ‘১৯৪২ এ লভ স্টোরি’ ছিল আর ডি বর্মনের ‘শেষের কবিতা’।

এরপর ‘বম্বে’, ‘অগ্নিসাক্ষী’, ‘ইয়ারানা’, ‘দারার’, ‘ইন্ডিয়ান’, ‘খামোশি দ্য মিউজিক্যাল’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম সারির নায়িকা হয়ে ওঠেন মনীষা। ‘খামোশি’ ছবিতে মনীষার অভিনয় বলিউডের আইকনিক কাজগুলির মধ্যে অন্যতম। বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও এই ছবি মনীষার মুকুটে নতুন পালক যোগ করে।

মনীষার ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ’, ‘দিল সে’, ‘কচ্চে ধগে’, ‘মন’, ‘যুগপুরুষ’ এবং ‘আকেলে হাম আকেলে তুম’। আমির খানের সঙ্গে মনীষার রসায়ন বক্স অফিসে তুমুল সফল হয়। বলিউডের পাশাপাশি দক্ষিণী ভাষার ছবিতেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি।

২০০০ সাল নাগাদ কেরিয়ারে ভাটার টান আসতে মনীষা সরে আসেন টেলিভিশনে। ২০০৪ সালে তিনি চলে যান নিউ ইয়র্ক। ফিল্ম মেকিংয়ের উপর ডিপ্লোমা করেন নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে এসে আবার অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু মনীষার নতুন ইনিংস সাফল্য পায়নি। নায়িকা বা সহ অভিনেত্রী, সব ভূমিকাই এ বার দর্শকমনে দাগ কাটতে ব্যর্থ হন তিনি। এই পর্যায়ে তার ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য কাজ হল ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘খেলা’ ছবিতে অভিনয়।

২০১০ সালের ১৯ জুন মনীষা বিয়ে করে নেপালি শিল্পপতি সম্রাট দাহালকে। তাদের আলাপ হয়েছিল ফেসবুকে। সনাতনী নেপালি রীতিতে বিয়ে করেন দুজন। মধুচন্দ্রিমা হয় ফ্লোরিডায়। কিন্তু দুবছরের মাথায় ভেঙে যায় সে সংসার।

২০১২ সাল মনীষার কাছে একাধিক দুঃসংবাদ বয়ে আনে। বিয়ে ভাঙার পাশাপাশি সে বছরই জানা যায়, তিনি ওভারিয়ান ক্যানসারে আক্রান্ত। প্রথমে মুম্বই, তারপর যুক্তরাষ্ট্রে তার চিকিৎসা হয়।

সফল অস্ত্রোপচার, একটানা কেমোথেরাপির পর মনীষাকে ২০১৭ সালে ক্যানসারমুক্ত বলে জানান চিকিৎসকরা। ক্যানসারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে এখন অন্যতম মুখ মনীষা কৈরালা। পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবার কাজে যুক্ত আছেন তিনি।

ক্যানসারকে হারিয়ে ফিরে এসে মনীষার প্রথম ছবি ‘চেহরে: এ মডার্ন ডে ক্লাসিক’। সম্প্রতি প্রশংসিত হয়েছে ‘ডিয়ার মায়া’ এবং ‘সঞ্জু’ ছবিতে মনীষার অভিনয়।

বিভিন্ন সময় একাধিক পুরুষের সঙ্গে তার নাম জড়িয়েছে। বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষ এসেছেন তার জীবনে। নানা পাটেকর এবং মনীষার প্রেম তো একসময় ছিল ইন্ডাস্ট্রির বহুচর্চিত গুঞ্জন। শোনা গেছে, শারীরিক নিগ্রহ সইতে না পেরে নানার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেন মনীষা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App