×

জাতীয়

ভূমি নিয়ে ভোগান্তি কমাতে ই-রেজিস্ট্রেশন ও নিজস্ব আর্কাইভ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২১, ০৬:০৬ পিএম

ভূমি নিয়ে ভোগান্তি কমাতে ই-রেজিস্ট্রেশন ও  নিজস্ব আর্কাইভ

শহীদুল আলম ঝিনুক

মানুষের ভোগান্তি নিরসনে দেশের ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ই-রেজিস্ট্রেশন চালু হয়েছে। এই স্টাডি প্রকল্পের মধ্যদিয়ে ভূমি রেজিস্ট্রেশনে জনগনের দুর্ভোগ অনেক কমবে। সার্ভে শেষে দ্রুত সময়ে মধ্যে সারাদেশে এই সেবা চালু হবে। এতে আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের কর্নিয়া সম্পৃক্ত করা, নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র উইং এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সরাসরি যোগাযোগ থাকছে। ফলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন ও জাল দলিলের সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে, রাজস্ব বাড়বে। সবধরণের জমির রেকর্ড স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের নিজস্ব আর্কাইভ করা হবে।

নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহীদুল আলম ঝিনুক তার দপ্তরে এ প্রতিবেদককে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা এবং আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর নির্দেশে ভূমি রেজিস্ট্রেশন আধুনিকায় করতে ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের ৬১টি জেলায় ৫০১টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে (তিন পার্বত্য জেলায় রেজিস্ট্রেশন আইন প্রয়োজ্য নয়)। সমীক্ষা শেষে ১৭টি অফিসে পরীক্ষামূলকভাবে ই-রেজিস্ট্রেশন চালু হওয়ায় সাধারণ মানুষ সুফল পেতে শুরু করছে। এতে ভূমি অফিসে মিউটেশন সহজতর হচ্ছে।

এই প্রক্রিয়ায় এক লাখ টাকার উপরের দলিল সম্পাদন করতে গেলে তার টিআইএন নম্বর প্রয়োজন হবে। এতে পে-অর্ডার সঠিক কিনা তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সার্ভারে ঢুকে অফিসে বসেই নিশ্চিত হতে পারেন সাব-রেজিস্ট্রার। দলিলের সত্যায়িত কপি পাওয়া যাচ্ছে সম্পাদনের দুদিনেই। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সাব-রেজিস্ট্রারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হওয়ায় টেম্পারিং ও জাল দলিলের সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আগামি বছর সারাদেশে এই সেবা ছড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

রশিদ ব্যতিত নেয়া সব টাকাই অবৈধ জানিয়ে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিস্ট্রেশন (আইজিআর) বলেন, সেরেস্তা বলতে কোনো কিছু নেই। দলিল লেখক সমিতির নামে লেখকদের কাছ থেকে এজন্য কোনো টাকা নেয়া হলে তা সম্পূর্ন অবৈধ। এ ব্যাপারে তথ্য ভিত্তিক সুনির্দিস্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে ৬০ হাজার দলিল লেখক রয়েছে। তাদের সঙ্গে অনেক পরিবার সম্পৃক্ত। সবদিক বিবেচনা করে রেজিস্ট্রেশনে অনলাইনের পাশাপাশি ম্যানুওয়ালি কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে। টিপছাপা বইয়ের সাথে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে এনআইডির সঙ্গে মিল রেখে এর কার্যক্রম চলছে। এতে (আইরিশ) চোখের কর্নিয়ার ছাপ যুক্ত করার উদ্যোগে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভূমি রেজিস্ট্রেশন ডিজিটাল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

অর্গানোগ্রামে সাব-রেজিস্টি অফিসে জনবল মাত্র পাঁচজন। মানুষের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে জনবল কাঠামো সময় উপযোগী করতে হবে জানিয়ে সিনিয়র এই দায়রা জজ বলেন, বৃটিশ শাসনামলে ১৮১৮ সালে ভূমি রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। এরপর থেকে সবই সংরক্ষিত আছে। অনেক দলিলের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। কয়েক’শ বছরের পুরানো সব দলিল সংরক্ষণ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এজন্য সব দলিলকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে রেজিস্ট্রেশন বিভাগের নিজস্ব আর্কাইভ তৈরি করা হবে। ৫৮টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা রেজিস্ট্রার অফিস চারতলা এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দোতলা ভবন করা হচ্ছে। সব পুরানো রেজিস্ট্রি অফিস ভেঙে নতুন করে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রারের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এবছর ৬৬ জন সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগ পেয়েছেন ও শূন্য পদে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম চলছে।

সাব-রেজিস্ট্রার ও অফিসের সরকারি স্টাফদের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযান, কমিশন ও নকলে বাড়তি টাকা আদায় এবং দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিস্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যায় বা অপরাধ করে কারো ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি। আইজিআর বলেন, দলিল লেখক ও নকল নবীশকারক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। সব অফিসে জনবল বাড়াতে চাহিদাপত্র তৈরি করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা বিবেচনায় নেই বলেও জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App