মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়ায় ২৭ অক্টোবর ১৪টি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও পাঁচটি মোটরসাইকেল নিয়ে ৫ নম্বর ঘাট পন্টুন এলাকায় ডুবে যায় ফেরি আমানত শাহ। ফেরিডুবির পর উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা। অভিযানের শেষদিকে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার সঙ্গে অংশ নেয় উদ্ধারকারী অপর জাহাজ রুস্তম।

চার দিনের অভিযানে উদ্ধার করা হয় ডুবে যাওয়া সকল যানবাহন। তবে ফেরিডুবির পর ১০ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো উদ্ধার করা যায়নি ফেরি আমানত শাহ। উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা এবং রুস্তম কর্তৃপক্ষ ফেরিটি উদ্ধারে সক্ষম না হওয়ায় দুই কোটি টাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ চুক্তিবদ্ধ হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেনুইন কোম্পানির সাথে।

চুক্তির পর জেনুইন কর্তৃপক্ষের ডুবুরি দল এসে ফেরির নিচে ড্রেজিংসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এখনো ঘটনাস্থলে আসেনি বিশেষ উদ্ধারকারী জাহাজের পুরো টিম। এমতাক আটকে আছে ফেরি উদ্ধারের প্রধান কার্যক্রম। কবে নাগাদ ফেরি উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন হতে পারে সে বিষয়েও অবগত নয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। ফেরি উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে ফেরিঘাটের ৫ নম্বর পন্টুন।

এদিকে ৫ নম্বর ঘাট পন্টুন দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের উভয় ফেরিঘাট এলাকায় আগত যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকদের। আধ ঘণ্টার নৌরুট পারাপারের জন্য অপেক্ষামাণ থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন। অতি তাড়াতাড়ি  এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়ার বিকল্প কোন উপায় নেই বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার কমান্ডার এসএম ছানোয়ার হোসেন বলেন, উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা এবং রুস্তমের প্রতিটির উদ্ধার ক্ষমতা প্রায় ৬০ টন। এদিকে ডুবে যাওয়া ফেরিটির ওজন ৪৮০ টন। যে কারণে হামজা এবং রুস্তম নামের উদ্ধারকারী জাহাজ দুইটি দিয়ে ফেরি উদ্ধার করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, পাটুরিয়ায় ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেনুইন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তারা প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে ফেরিটি উদ্ধার কাজ সম্পন্ন হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেনুইন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের সিইও বদিউল আলম বলেন, ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারের জন্য চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধারকারী বিশেষ জাহাজ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে কিছু কার্যক্রম শেষে মূল উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হবে।

পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় অপেক্ষমাণ যানবাহনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, ফেরি আমানত শাহ ডুবে যাওয়ার পর থেকে ৫ নম্বর ঘাট পন্টুন দিয়ে লোড-আনলোড কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যে কারণে ঘাট এলাকায় ভোগান্তি বাড়ছে।

এদিকে গতকাল থেকে ফেরি ঘাট এলাকায় ছড়াচ্ছে বিকট দুর্গন্ধ। উৎসুক জনতা দুর্গন্ধের কারণ খুঁজতে ক্রমেই ভিড় জমাচ্ছে ঘাট এলাকায়।

দুর্গন্ধের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক (উদ্ধার) মো. ফজলুর রহমান জানান, ফেরির ক্যান্টিনে থাকা ফ্রিজ থেকে এ পঁচা গন্ধ বের হচ্ছে। তবে ফেরি উদ্ধারের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।