×

মুক্তচিন্তা

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এপিঠ ওপিঠ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২১, ১২:৩৬ এএম

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সামগ্রিক প্রভাব আমাদের জীবনে খুবই বিস্তৃত এবং গভীর। এর উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবনগুলো হলো- রোবট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ড্রোন, ভিআর বা ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি, অগমেন্টেড রিয়্যালিটি, থ্রিডি প্রিন্টিং, আইওটি, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং আরো অনেক ক্ষেত্র। রোবটের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। মানুষের জন্য দুর্গম স্থানগুলোতে রোবটের সাহায্য নিয়ে কাজ করা যায়। ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির সাহায্যে আমরা স্কাই ডাইভিং, গুহার অভ্যন্তর, সমুদ্রের তলদেশসহ এমন আরো অনেক জায়গার আনন্দ উপভোগ করার মতো আনন্দ পেতে পারি। চিকিৎসাক্ষেত্রে এর রয়েছে বিস্তৃত ব্যবহার। অনেক জটিল অপারেশন ছুরি-কাঁচি ছাড়াই কম্পিউটারের সাহায্যে করা সম্ভব হচ্ছে। ‘ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস’সহ অনেক জনপ্রিয় মুভিতেই আমরা এ বিপ্লবের বহুমাত্রিক ব্যবহার দেখেছি। অন্যান্য উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারে পৌঁছে গেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এ যুগে বুদ্ধিমান যন্ত্র কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হচ্ছে শতভাগ। পকেটে রাখা এন্ড্রয়েড বা স্মার্ট মোবাইল ফোনটিও একটি কম্পিউটারই বটে। বাসা-বাড়ির সব ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতিতে সেন্সর লাগিয়ে তা মোবাইলে ব্লুটুথের মাধ্যমে কানেক্টেড করে যে কোনো স্থান থেকে অপারেট করা সম্ভব। ঘরের তাপমাত্রা পরিমাপ করে তা কমানো বা বাড়ানো যায় এর মাধ্যমে। আজকাল মানুষের আর শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় না বললেই চলে। শারীরিক পরিশ্রম বিমুখতায় মানুষের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিয়েছে প্রকট আকারে। হার্টের রোগী বেড়েছে কয়েকগুণ। শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটছে চরম পর্যায়ে। আত্মহত্যা প্রবণতাও বেড়েছে সমানুপাতিক হারে। শুধু শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যই নয়, অনেক স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ বর্তমান বিপ্লবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারায় পিছিয়ে পড়ছে। কায়িক পেশার চেয়ে মেধাভিত্তিক পেশার প্রয়োজন বাড়ছে ক্রমাগত। প্রকট হচ্ছে বেকার সমস্যা। হিসাবরক্ষক, আর্থিক বিশ্লেষক, কর উপদেষ্টা, গ্রন্থাগারিক, টেলিফোন অপারেটর, নিরাপত্তাকর্মী, কোষাধ্যক্ষ, বিক্রয়কর্মী, ফিলিং স্টেশনের কর্মী, রেস্টুরেন্টের ওয়েটার প্রভৃতি কর্মীর চাহিদা নেমে আসবে অনেক নিচে, ঠেকবে তলানিতে এসে। তাদের সেই শূন্যস্থান পূরণ করবে রোবট। সমাজে তৈরি হবে চরম বৈষম্য ও অর্থনৈতিক বিভাজন। প্রোগ্রামার, আইওটি, আইটি, এআই- এসব বিষয়ের ওপর অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার থাকবে। এছাড়া পারমাণবিক অস্ত্রের যুগে এখন ড্রোন ব্যবহার করে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে যুদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছে। এর মাধ্যমে যুদ্ধের পরিণতি আরো ভয়াবহরূপে প্রতীয়মান হতে পারে। এ নেতিবাচক দিকগুলোর মোকাবিলা করতে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা, পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা। বাংলাদেশও প্রস্তুত চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলা করার জন্য। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত সব খাতকেই গুরুত্ববহ করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের ই-গভর্নেন্স, সার্ভিস ডেলিভারি, পাবলিক পলিসি এন্ড ইমপিমেন্টেশন, আইটি, বিকেন্দ্রীকরণ, নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা, এসডিজি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ও প্রশাসনিক নীতি, ক্লাউড সার্ভার, আইওটি, এআই ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। চতুর্থ বিপ্লবে বাংলাদেশ সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে শিক্ষা খাতকে। এর জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল টেকনোলজি, ন্যানো টেকনোলজি, ই-কমার্স, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, নেটওয়ার্ক এন্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্ট, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, সাইবার নিরাপত্তা, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাদানসহ গবেষণায় উৎকর্ষ সাধনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ দুটি সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে সংযুক্ত এবং তৃতীয় সংযোগের কাজ চলমান রয়েছে। দেশের তরুণ প্রজন্মের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য আইসিটি বিভাগ ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং’ নামক ৫০ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এছাড়া ‘শি পাওয়ার’ বা ‘প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়ন’ নামক একটি প্রকল্প রয়েছে, যার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবেন নারীরা। সর্বোপরি বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে নিজেদের করে নেয়ার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে এবং সবাই আশাবাদী এই শিল্প বিপ্লব দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের হাতছানিতে আগামী কয়েক বছরেই মানুষের জীবনযাত্রায় দৃশ্যমান হবে ব্যাপক পরিবর্তন। এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিকই আমাদের সামনে প্রতীয়মান। তবে এর অগ্রযাত্রাকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করার জন্য আমাদের অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কর্মসংস্থান, গোপনীয়তা রক্ষাসহ এসব ক্ষেত্র থেকে নেতিবাচক প্রভাবগুলোকে রোধ করতে হবে। সর্বোপরি প্রযুক্তিকে সঠিক পন্থায় ব্যবহার করতে হবে, তবেই আমরা কাক্সিক্ষত সুফল লাভ করতে সক্ষম হবো।

শাহরীন তাবাসসুম : শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App