×

জাতীয়

বছরে শত বিলিয়ন ডলার তহবিলের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা উচিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২১, ০৯:২৭ পিএম

বছরে শত বিলিয়ন ডলার তহবিলের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা উচিত

স্কটল্যান্ডের কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

বছরে শত বিলিয়ন ডলার তহবিলের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা উচিত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্কটল্যান্ডের গ্ল্যাসগোয় সোমবার জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক সম্মেলন কপ-২৬-এ ভাষণ দেন। ছবি: পিএমও

স্কটল্যাণ্ডের গ্লাসগো শহরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্পর্কিত সম্মেলন কপ-২৬-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত ধনী দেশগুলোর। পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) জানাতে হবে এবং জাতীয় কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অভিযোজন বাস্তবায়ন করতে হবে।

সোমবার (১ নভোম্বর) রাতে সম্মেলনে  বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি পৃথিবীর সুরক্ষায় চার দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশেরও কম অবদান রাখলেও, বাংলাদেশ জলবায়ু-সংক্রান্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য, আমরা ২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করেছি। গত সাত বছরে আমরা জলবায়ু সংক্রান্ত ব্যয় দ্বিগুণ করেছি। বর্তমানে, আমরা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রস্তুত করছি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, সম্প্রতি আমরা একটি উচ্চাভিলাষী এবং আপডেটেড এনডিসি জমা দিয়েছি। বাংলাদেশের বিশ্বের অন্যতম বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ সৌর শক্তি কর্মসূচি রয়েছে। আমরা আশা করি ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের ৪০ শতাংশ শক্তি নবায়নযোগ্য উত্স থেকে পাওয়া যাবে। আমরা ১২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশী বিনিয়োগের ১০টি কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল করেছি। আমরা ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি- যা জলবায়ু নাজুকতা থেকে স্থিতিস্থাপকতা অর্জন ও জলবায়ু সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হচ্ছে। ১১ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক বা রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় আমরা জলবায়ু প্রভাবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভি-২০-এর চেয়ার হিসাবে, আমরা জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা ৪৮টি দেশের প্রয়োজন সামনে তুলে ধরছি। গ্লোবাল সেন্টার অফ অ্যাডাপটেশনস ঢাকার দক্ষিণ এশিয়া অফিসের মাধ্যমে আমরা আঞ্চলিকভাবে সেরা অনুশীলন এবং অভিযোজন জ্ঞান ভাগাভাগি করে নিচ্ছি। সিভিএফ-এর পক্ষ থেকে, বাংলাদেশ একটি জরুরি জলবায়ু চুক্তি (ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি প্যাক্ট) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

সরকার প্রধান তার ভাষণে আরও বলেন, আমি চারপি প্রস্তাব তুলে ধরে আমার বক্তব্য শেষ করবো। এগুলো হলো-

প্রথমত, প্রধান নির্গমনকারীদের অবশ্যই উচ্চাভিলাষী এনডিসি জমা দিতে হবে এবং সেগুলি বাস্তবায়ন করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, উন্নত দেশগুলির উচিত অভিযোজন এবং প্রশমনের জন্য ৫০:৫০ অনুপাতে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা।

তৃতীয়ত, উন্নত দেশগুলোর উচিত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়া। সিভিএফ দেশগুলোর উন্নয়ন চাহিদাও বিবেচনা করা প্রয়োজন।

চতুর্থত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদী ভাঙ্গন, বন্যা এবং খরার কারণে বাস্তুচ্যুত জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশ্বব্যাপী দায়বদ্ধতার ভাগাভাগি সহ ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়টি অবশ্যই সমাধান করতে হবে।

এরপর উপস্থিত বিশ্বনেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের ইতি টানেন।

গ্লাসগো শহরের মূল কেন্দ্র থেকে মাইল দেড়েক দূরে ক্লাইড নদীর পাড়ে দৃষ্টিনন্দন যে বিশাল ভবন এক্সিবিশন সেন্টারে জলবায়ু সম্মেলন চলছে, সেখানে সব মিলিয়ে বিশ্বের ৩০ হাজারের মত মানুষ হাজির হয়েছেন পৃথিবী বাঁচাতে। অন্যদিকে সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে এবং গ্লাসগো শহরের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ হঠাৎ জড়ো হয়ে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ করছেন কট্টোর পরিবেশবাদীরা। স্লোগান দিচ্ছেন, কেউ কেউ গান গাইছেন, আবার কেউ কেউ কার্বন ডাই অক্সাইড বেশি নিঃসরণ সহ পরিবেশ দূষণের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে গালিগালাজ করছেন।

এদিকে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা বা ডব্লিউএমওর নতুন একটি রিপোর্ট রেকর্ড অনুযায়ী ২০২০ সাল ছিল এশিয়ার সবচেয়ে উষ্ণ বছর। ১৯৮১-২০১০ পর্যন্ত সময়কালীন গড় যে তাপমাত্রা এশিয়ায় ছিল, তার চেয়ে ২০২০ সালের তাপমাত্রা ছিল ১ দশমিক ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এর এর ফলে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। বাস্তচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ এবং অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে শত শত কোটি ডলারের।

অন্যদিকে জাতিসংঘের আরেকটি রিপোর্ট বলছে, পৃথিবীর দেশগুলো স্বল্প এবং মধ্যমেয়াদে কার্বন নিঃসরন কমানোর যে পরিকল্পনা করেছে তাতে ২০৪০ সাল নাগাদ বর্তমানের তুলনায় নি:সরণ বাড়বে ১৬ শতাংশ। এবং পৃথিবীর উষ্ণতা ১৮৫০ সালের তুলনায় ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ছে যার অর্থ মানব সভ্যতা মহা-বিপর্যয়ে পড়বে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App