×

জাতীয়

আবারো পুনরাবৃত্তি করছি মামলা নিষ্পত্তি করা হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২১, ০৬:০৪ পিএম

আবারো পুনরাবৃত্তি করছি মামলা নিষ্পত্তি করা হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সোমবার দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবষের ৩য় বর্ষপূর্তি ও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি: ভোরের কাগজ

ওয়াদা করেছিলাম খুন ও ধর্ষণ ছাড়া অন্যান্য মামলার নিষ্পত্তির বিষয়গুলো আমরা দেখবো। আবারো পুনরাবৃত্তি করছি মামলা নিষ্পত্তি করা হবে। আপনারা বলেছেন যা অনুদান পাচ্ছেন তার বেশীরভাগ মামলায় খরচ হয়ে যাচ্ছে। প্রক্রিয়ার ধীর গতির কারনে হয়তো একটু দেরী হচ্ছে। আবারো বলছি মামলার নিষ্পত্তির বিষয়ে কাজ হচ্ছে।

সোমবার (১ নভেম্বর) দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবষের ৩য় বর্ষপূর্তি ও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে বর্ষপূর্তি ও আত্মসমর্পণকৃতদের পুনর্বাসন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে। তিনি আপনাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখেন। আপনাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি তার চিন্তায় রয়েছে। তবে শুনতে পাচ্ছি অনেকেই আবার আগের পথে ফিরতে চাইছেন। দয়া করে যারা আত্মসমর্পণ করেছেন এমন চিন্তা করবেন না। কখনো ভাববেন না আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্বল। তারা সব খবর রাখেন। যারা আবার চিন্তা করবেন ফেরার তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি হতে হবে। আপনাদের ভুলে গেছি মনে করবেন না। সবাই মিলেমিশে থাকবেন।

তিনি আরো বলেন, আপনারা দেখেছেন কিছুদিন আগে পূজাকে কেন্দ্র করে গুজব তৈরি করে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তা আমরা মোকাবেলা করেছি। যারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছেন তাদের আশায় গুড়ে বালি হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন র‍্যাবের অধীনে নিরাপদ রাখতে একটি স্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করতে চাইছি। চাইলেই যেন কেউ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। জলদস্যু আত্মসমর্পণে সাংবাদিক মহসিনুল হাকিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের ৪০ বছরের ইতিহাসে সুন্দরবনকে অশান্ত করা হয়েছে। তবে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় এ বন দস্যুমুক্ত হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। একদিন হয়তো এসব বিষয় নিয়ে একটি বই লিখবো। তবে মানুষ ভুলে যায় তাই একসময় সুন্দর বনের দস্যুভিত্তির কথাও হয়তো ভুলে যাবে। এ কারনে আমরা একটি ছবি বানিয়েছি অপারেশন সুন্দরবন। আমি র‍্যাব ডিজিকে অনুরোধ করবো ছবিটি মুক্তির ব্যবস্থা নিতে।

সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র বিপর্যয়ের পেছনে সমন্বয়হীনতার বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি আরো বলেন, একটি জাতীয় পত্রিকায় দেখলাম লেখা হয়েছে বনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। পুলিশ কিছু করছে না। কিন্তু বনে এমন পন্থায় মাছ শিকারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আমার কাজ না। আসলে আমাদের পানি দেখেন একজন মৎস ও প্রাণী সম্পদ বিভাগ দেখেন আরেকজন। আবার বন বিভাগও আলাদা। এ বিষয়গুলো দেখার প্রয়োজন রয়েছে।

পুলিশ প্রধান বলেন, দস্যুমুক্ত বন ধরে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই পরিকল্পনা ছিল সুন্দরবনে ৪টি ক্যাম্প করার। যদিও দুটির বেশী করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও বলবো আত্নসমর্পনকারীদের মধ্যে যারা খুন ও ধর্ষণ মামলার আসামি, তাদের ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। বাকীদের মামলা নিস্পত্তিতে আমরা সহায়তা করব। আর যারা দস্যুতার পথ থেকে ফিরে এসেছেন তাদের বুকে টেনে নিন। স্থানীয়দের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি এ সময় বলেন, তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে সহায়তা করুন।

র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা  রয়েছে সে বিষয়ে এখানকার বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কিছুদিন আগেও এসে আলোচনা করেছি। হত্যা, ধর্ষণ মামলা ছাড়া অন্য সকল মামলা প্রত্যাহারের জন্য আলোচনা করেছি। পিপিদের নিয়েও বসা হয়েছে। এখান থেকে বেশ কিছু মামলা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় গিয়েছে। যেসব মামলা আমরা নিতে পারিনি সেগুলো জেলা কমিটির কাছে গিয়েছে। সেখান থেকে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যাবে। এছাড়া অন্যান্য মামলাগুলো যাতে দ্রুতগতিতে নিষ্পত্তি হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের সঙ্গে না থেকে যারা বিপথে যেত চাইবে, তাতের বিরুদ্ধে থাকা কোনো মামলার নিষ্পত্তি করা হবে না উল্টো তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

র‍্যাব ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে আরো উপঅস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩০ এর এমপি গ্লোরিয়া ঝর্না সরকার, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সভাপতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এমপি মো. শামসুল হক টুকু, খুলনা-২ আসনের এমপি সেখ সালাহউদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এমপি মো. হাবিবুর রহমান, এমপি পীর ফজলুর রহমান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন।

এর আগে আত্নসমর্পণকারী দস্যুদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১০২টি ঘর, ৯০টি মুদিদোকান (মালামালসহ), ১২টি জাল ও মাছ ধরার নৌকা, আটটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও ২২৮টি গবাদিপশু হস্তান্তর করেন।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে উপকূলীয় অধিবাসীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবন ও জীবিকা। তবে জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের আগে তাদের বড় আতঙ্ক ছিল জলদস্যু ও বন দস্যুদের উৎপাত। ওই বছর র‌্যাবের কাছে সর্বমোট ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দেন জলদস্যুরা। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই হিসাবে আজ ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’র তৃতীয় বর্ষপূর্তি। প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা, দিকনির্দেশনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও র‌্যাবের কর্মতৎপরতায় দস্যুমুক্ত হয় সুন্দরবন। এ সাফল্য অর্জনে র‌্যাব পেয়েছে দেশবাসীর আকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App