×

জাতীয়

ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য চাই আরো বেশি জলবায়ু তহবিল: প্রধানমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২১, ০৪:১৩ পিএম

ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য চাই আরো বেশি জলবায়ু তহবিল: প্রধানমন্ত্রী

সূর্যাস্তে সুন্দর বন। এই ম্যানগ্রোভ বন জলবায়ু পরিবর্তনে ঝিুঁকিতে রয়েছে। ছবি: সংগ্রহীত

করোনা শুরুর পর আন্তর্জাতিক মহল যেভাবে দ্রুত সাড়া দিয়েছিল, মানবজাতির সামনে অস্তিত্বের হুমকি হয়ে ওঠা জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ মোকাবেলায় একইরকম উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসা জরুরি। গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনের প্রাক্কালে বিশ্বনেতাদের প্রতি জোরালো এই আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক ভারকুইজেনের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা এই নিবন্ধে তিনি বলেছেন, জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় এই বিশ্বকে আরও বড় পরিসরে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।

নিউজউইকে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব থেকে অধিক ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোকে রক্ষার জন্য আরো তহবিলের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

তিনি বলেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) দেশগুলোকে আরও বেশি তহবিল দেওয়া দরকার। তাহলে জলবায়ু ঝুঁকি থেকে উত্তরিত হয়ে দেশগুলো জলবায়ু সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ৪৮ দেশ নয়, হুমকিতে থাকা সব দেশের জন্যই এ পদক্ষেপ ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। বর্তমান বাস্তবতায় এটাই হচ্ছে সঠিক পদক্ষেপ।

[caption id="attachment_315992" align="aligncenter" width="790"] সূর্যাস্তে সুন্দর বন। এই ম্যানগ্রোভ বন জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিতে রয়েছে। ছবি: সংগ্রহীত[/caption]

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা ৪৮ দেশের জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি। পৃথিবীর সুরক্ষায় তিনি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত রাখা, জলবায়ু তহবিলের কার্যকর বাস্তবায়নসহ তিনটি প্রস্তাব বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন এবারের জলবায়ু সম্মেলনে।

২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতারা জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে সংকট প্রশমন ও এর সঙ্গে অভিযোজনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য একটি তহবিল গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি হয়নি।

শেখ হাসিনা ও প্যাট্রিক ভারকুইজেন তাদের নিবন্ধে লিখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সঙ্কট। তবে সব দেশে এর প্রভাব সমান নয়। চার মহাদেশের ৪৮ দেশের জন্য এটা স্রেফ অস্তিত্বের সঙ্কট। এটা কোনো অত্যুক্তি নয়।

সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় ভানুয়াতু, মালদ্বীপ আর মার্শাল আইল্যান্ডের মত দ্বীপরাষ্ট্রগুলো তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের আবাসভূমি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা লবণাক্ততার কবলে পড়ে বন্ধ্যা ভূমিতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাপদাহ আর খরা মধ্যপ্রাচের অনেক এলাকাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে। সেখানে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার বিশ্বের গড়ের প্রায় দ্বিগুণ।

নিবন্ধে বলা হয়, এই পরিবর্তনের গতি কমানো ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের দেশগুলোর জন্য এখনই জরুরি। দেরি করার সময় আর নেই।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, আগামী এক দশকে বিশ্ব অর্থনীতিকে পরিবেশবান্ধব করতে ৬ থেকে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। অথচ সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর বেশিরভাগই স্বল্পোন্নত বা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। আর বড়জোর মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ।

প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য এসব দেশের তহবিলের পাশাপাশি কারিগরি সহযোগিতাও প্রয়োজন।

শিল্পায়ন ও জীবাশ্ম জ্বালানির অতি ব্যবহারে বায়ুমণ্ডলে বাড়ছে কার্বন। এতে বাড়ছে বিশ্বের তাপমাত্রা। উনিশ শতকের তুলনায় পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এখন ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিপর্যয় এড়াতে হলে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির গতি কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য ২১০০ সাল পর্যন্ত সময়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। তা করতে হলে, ব্যাপক মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। এ লক্ষ্যে তেল-গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে ব্যবহার করতে হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। আর জ্বালানি ব্যবস্থার এই রূপান্তরের জন্য ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর প্রয়োজন বিপুল অর্থ। জলবায়ু সঙ্কটে সুবিচার নিশ্চিত করতেই উন্নত দেশগুলোকে ওই অর্থ যোগাতে হবে।

শেখ হাসিনা ও প্যাট্রিক ভারকুইজেন লিখেছেন, ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে এই সুরক্ষা দিতে না পারলে বিশ্বের কার্বন নির্গমনের পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টায় সাফল্য আসবে না। লক্ষ্য পূরণে দরকার তহবিল। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিল হিসেবে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জাতিসংঘে দেওয়া হলেও তা পূরণ করা হয়নি। এ নিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো উদ্বিগ্ন।

নিবন্ধে শেখ হাসিনা ও প্যাট্রিক ভারকুইজেন বলেন, এ জন্য দুই দফা দাবি আমরা তুলে ধরছি। প্রতিবছর উন্নত দেশগুলোর কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি জলবায়ু তহবিলের অর্থ ছাড়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আমরা আশা করছি এবারের জলবায়ু সম্মেলনেই আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে। আর এই ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্ধেক, অর্থাৎ ৫০ বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর অভিযোজনের জন্য বরাদ্দের ওপর জোর দিতে হবে। যাতে ওই অর্থ ব্যবহার করে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো ‘জলবায়ু সমৃদ্ধির’ পথে এগিয়ে যেতে পারে।

গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের তথ্য তুলে ধরে নিবন্ধে বলা হয়, পূর্বাভাস ব্যবস্থা, জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো, শুষ্ক এলাকায় চাষাবাদ, ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সুরক্ষা এবং পানি ব্যবস্থাপনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা দরকার। আশা করা যায়, এ পদক্ষেপ ৭.১ ট্রিলিয়ন ডলারের সুফল বয়ে আনবে।

শেখ হাসিনা ও প্যাট্রিক ভারকুইজেন লিখেছেন, টিকে থাকতে হলে সবাই একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারীতে বিশ্বের দেশগুলো যেভাবে সাড়া দিয়েছে তাতে স্পষ্ট, বিপদের মুখে একজোট থাকলে কী না করা সম্ভব। অস্তিত্বের হুমকি তৈরি করা জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলার জন্য আমাদের একইভাবে উদ্যোগী হতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App