×

সারাদেশ

ভরাট দখলে বংশী এখন মরা গাঙ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৩০ পিএম

ভরাট দখলে বংশী এখন মরা গাঙ

মরা গাঙ। ছবি: ভোরের কাগজ।

সাভারে এক সময়ের খরস্রোতা যমুনার শাখা নদী বংশীর অনেক অংশ ভরাট হয়ে সরু খাল বা নালায় পরিণত হয়েছে। পলি পরে যেমন ভরাট হয়েছে তেমনিভাবে দখল হয়ে গেছে অনেক অংশ। দখলের কারণে মুখ আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে পানি প্রবাহ। ৪০ বছরেও ড্রেজিং না হওয়ায় খরস্রোতা নদী এখন মরা গাঙে পরিণত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে নৌপথে যোগাযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যমুনা নদীর ধানতারা-নৈহাটী বাজার-বেনুপুর হাটখোলা দিয়ে আসা পানিতে শাখা নদী বংশী এক সময় ছিল খরস্রোতা। এই নদীর গাজীবাড়ি-নাল্লাপোল্লা-মুনসুরবাগ-স্বামেরটেকী-রাঙ্গামাটি এলাকায় চলতো মালবাহী পালতোলা নৌকা। বড় বড় লঞ্চে চলাচল করতেন মানুষ। এই পথ ধরে নয়ারহাট-সাভার হয়ে ধলেশ^রী-বুড়িগঙ্গা-তুরাগ নদীতে যোগাযোগ ছিল। অন্যদিকে যাতায়াত হতো টাঙ্গাইলে। যার সবই এখন স্মৃতি। উত্তর নাল্লাপোল্লা গ্রামের রাকিব হাসান হাসান, ধামরাইয়ের বাইশাকান্দা গুংগ্রাম এলাকায় যমুনা থেকে বংশী নদীর সংযোগ মুখে ঘরবাড়ি বানিয়েছে একাধিক ব্যক্তি। এতে বন্ধ হয়ে গেছে নদীর পানি প্রবাহ। ফলে শুকিয়ে খরস্রোতা নদী এখন মরা গাঙে পরিণত হয়েছে। ভরাট হয়েছে নদীর ধানতারা বাজার ও মাইঝাইল অংশ। মুনসুরবাগ গ্রামের আতাউর হমান খান আলমগীর জানান, নদীর পুরানো গতিপথ পাল্টে যাওয়ায় আশির দশকে একবার নদীর অনেক অংশ পুন:খনন করা হয়।

এরআগে এই নদীতে পালতোলা মালবাহী নৌকা ও লঞ্চ চলাচল করতে। যা ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। ২৫-৩০ বছর আগে বন্যার সময় নদীতে পলিমাটি পরে ভরাট শুরু হয়। সময় পরিক্রমায় নদী তার চিহ্ন হারিয়েছে। তিনি বলেন, নদীর উজান পথ আটকে দেয়ায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বংশী নদী রক্ষায় ড্রেজিং ও উচ্ছেদ উভয়ই জরুরী। একই গ্রামের মনিরুল ইসলাম খান মৃদুল জানান, লঞ্চে করে বাড়ির মুরুব্বীরা এই পথে আসা যাওয়া করতেন সেই গল্প শুনেছেন, বাস্তবে দেখেননি। বর্ষা মৌসুমে নদীতে কয়েদিন স্যালু নৌকা চলাচল করলেও সারাবছর পানির দেখা মিলে না। নদীর বুকজুড়ে রোপণ করা হয় ধানের চারা। আস্তে আস্তে নির্বিচারে নদীর পার দখল ও ভরাট করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। আষাড়িয়াটেকী গ্রামের লক্ষণ চন্দ্র সরকার জানান, এই নদীতে সারাবছরই সুস্বাদু হরেক রকম মাছ পাওয়া যেত। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে তা বাজারে বিক্রি হতো। নদীতে পানিই থাকে না তাই মাছের দেখাও মিলে না। অনেক স্থানে পানি আটকে থাকায় সেখানে জমে থাকে কচুরিপানা। নদীর আর পূর্বের রুপ নেই বলেও জানান তিনি।

এদিকে নদীতে পানি না থাকায় চাষাবাদও ব্যাহত হচ্ছে। নদীর সঙ্গে পানির মেশিন বসিয়ে পাইপ সংযোগ দিয়ে ও নালা কেটে ক্ষেতে পানি দেয়া হতো। নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে। তাদেরকে বেশী অর্থ ব্যয়ে বিকল্পভাবে পানির যোগান দিতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাজারুল ইসলাম বলেছেন, বিআইডব্লিটিএ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড এ নিয়ে কাজ করে থাকে। প্রাকৃতিক কারণে পলি পড়ে ভরাট এবং দখলের বিষয়ে অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App