×

জাতীয়

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে ভর্তিতে উদ্ভট শর্ত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৪৬ এএম

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে ভর্তিতে উদ্ভট শর্ত

ফাইল ছবি

নতুন বছরে প্লে গ্রুপে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে উদ্ভট যোগ্যতা ও নিয়মাবলি বেঁধে দিয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল এন্ড কলেজ। ‘শিক্ষার্থীর যোগ্যতা’ অংশে বয়স, উচ্চতা, ওজন, দুধদাঁত, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাসংক্রান্ত নানা শর্ত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শর্তে বলা হয়েছে, ভর্তি হতে শিশুর ওজন ১৩ থেকে ২১ কেজি মধ্যে হতে হবে।

ভর্তির যোগ্যতা ও নিয়মাবলিতে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছে, লটারিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও যদি কোনো শিক্ষার্থী প্রাতিষ্ঠানিক শর্ত (শিক্ষার্থীর যোগ্যতা) পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে সে ভর্তির জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ শর্তের অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজন, বেশি লম্বা বা খর্ব কোনো শিশু স্কুলটিতে ভর্তি হতে পারবে না।

শিশু শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে এ ধরনের শর্তারোপকে উদ্ভট বলছেন ভর্তিচ্ছুদের অভিভাবকরা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, এরা কী স্কুলের শিক্ষার্থী খুঁজছে নাকি অন্য কিছু? নয়তো কী করে স্কুলের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে লেখে, উচ্চতা ৩ ফুট ৮ ইঞ্চির বেশি হতে পারবে না, মুখে ২০টা দুধদাত থাকতে হবে। এ ধরনের শর্তারোপকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন বলেন, ১৯৭৬ সাল থেকে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে। কখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। এখন যেহেতু বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে, বিষয়টি পরিবর্তনে কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন। শিক্ষার্থীদের দুধদাঁতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুধদাঁত পড়ে গেলে ওই বাচ্চার কথা বলতে সমস্যা হয়, কথা স্পষ্ট বলতে পারে না। এ কারণে আমরা মূলত দুধদাঁতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলি। এছাড়া এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কখনো কোনো অভিযোগ পাইনি।

‘শিক্ষার্থীদের ওজন বেশি হলে ভর্তি করা হয় না’- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো অভিভাবক কখনো অভিযোগ করেননি। তাছাড়া ওজন বেশি হলে আমাদের এখানে ভর্তি না নেয়ার কারণ- এটা কমিটির সিদ্ধান্ত। এছাড়া আগে থেকেই এই নিয়মে ভর্তি করানো হচ্ছে। ভর্তি নীতিমালায় এ ধরনের কোনো কথা নেই। তবুও আপনারা বলছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি একই জবাব দেন এবং বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ নিয়ম চলে আসছে। আগে এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আসেনি। যেহেতু এখন অভিযোগ আসছে, বিষয়টি রিভিউ করা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, এ ধরনের শর্ত দেয়া হাস্যকর। এটা আমাদের নজরে আসেনি। ভর্তি নীতিমালায় এ ধরনের কোনো শর্ত দেয়া হয়নি। যদি অভিযোগ আসে তবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্লে গ্রুপে শিশুশিক্ষার্থী ভর্তির জন্য স্কুলটিতে ২২ অক্টোবর লটারি হয়। এখন চলছে

ভর্তির অন্যান্য প্রক্রিয়া। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার প্লে গ্রুপে বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণে ২০০ মেয়ে ও ৯০ জন ছেলে হিসাবে মোট ৫৮০ শিশুকে নেয়া হবে। স্কুলটির ওয়েবসাইটে ২০২২ খ্রিস্টাব্দের প্লে গ্রুপে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর যোগ্যতা ও নিয়মাবলির একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া আছে। কয়েকজন অভিভাবকের সে বিজ্ঞপ্তিটি পোস্ট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ‘শিক্ষার্থীর যোগ্যতা’ অংশে তিনটি শর্ত দেয়া আছে। এগুলো হলো- বয়স, উচ্চতা ও ওজন। বয়সের শর্তে লেখা আছে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি বয়স চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে হতে হবে। উচ্চতার শর্তে বলা হয়েছে, তিন ফুট থেকে তিন ফুট আট ইঞ্চির মধ্যে হতে হবে। ওজনের শর্তে লেখা আছে, ১৩ থেকে ২১ কেজির মধ্যে হতে হবে। ওজনের অংশে তিনটি উপশর্ত দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো- শিক্ষার্থীর সব দুধদাঁত (২০টি) অটুট থাকতে হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। ছোঁয়াচে রোগ থাকলে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে না।

প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে স্কুল প্রতিষ্ঠার সময়ই এই যোগ্যতাগুলো ঠিক করা হয়। তখন থেকেই এই নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে। নিয়মে আর পরিবর্তন আনা হয়নি। এ বিষয়ে স্কুলের অভিভাবক কমিটির মধ্যে দুয়েকজন ছাড়া অন্য কেউ জোরালোভাবে আপত্তি জানাননি। এ কারণে নিয়ম পরিবর্তন হয়নি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু ভর্তির ক্ষেত্রে বয়স ছাড়া আর কোনো শর্ত নেই। প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তির জন্য শিশুর বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। ওজন, দুধদাঁত নিয়ে শর্ত নেই। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ভর্তি করার ব্যাপারেও কোনো বাধা নেই।

এসব শর্তের কারণ হিসেবে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বেলায়েত হুসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের উদ্দেশ্য, শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলে সুন্দর একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা। মোটা বাচ্চারা দুষ্টু বেশি হয়। তাদের চেয়ে অন্য বাচ্চাদের সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। শিক্ষার্থীকে ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে’ বলতে কি বোঝানো হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিবন্ধী শিশুরা পড়তে পারে না। এখানে অভিভাবকরা অনেক টাকা খরচ করে সন্তানদের পড়ান। প্রতিবন্ধী শিশুরা পিছিয়ে থাকে। তাদের দিকে আলাদা নজর দেয়ার মতো শিক্ষক আমাদের নেই।

সাধারণ অভিভাবকরা বলছেন, ভর্তির বিজ্ঞপ্তিটি ‘অগ্রহণযোগ্য’, ‘আপত্তিকর’ ও ‘বৈষম্যমূলক’। দ্রুত এসব নিয়ম বাতিল এবং ওই স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবক নেতাদের কাউন্সিলিং দাবি করছি। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকসহ সবার বিবেক ও বোধ সত্যিকারের শিক্ষকদের মতো হোক এই কামনা। উল্লেখ্য, কিছুদিন পরপর নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে আলোচনায় আসে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল এন্ড কলেজ। বেশি বেশি ভর্তি ও অন্যান্য ফি নেয়াসহ নানা অভিযোগ এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App