×

সারাদেশ

কুষ্টিয়ায় হত্যা মামলার নকল আসামির আত্মসমর্পণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২১, ১২:০২ এএম

কুষ্টিয়ায় হত্যা মামলার নকল আসামির আত্মসমর্পণ

আদালতে আত্মসমর্পণকারী নকল পীর নাজিম উদ্দিন ও কল্যাণপুর দরবার শরিফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদ। ছবি : ভোরের কাগজ।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কথিত এক পীরের দরবারে খাদেম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ওই দরবারের প্রধান সৈয়দ তাছের আহমেদের পরিবর্তে নাজিম উদ্দিন নামে একজন নকল আসামি আত্মসমর্পণ করেছেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আসল পীর নন, পীরের বদলে নিজেই পীর সেজে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বলে সিআইডির কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদের বদলে তার মুরিদ নাজিম উদ্দিন নিজেই পীরের পরিচয়ে গত ১৭ অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে মূল ঘটনা জানতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোমবার (২৫ অক্টোবর) কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে ‘আসামির’ পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এ সময় আদালত ওই ব্যক্তির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরদিন মঙ্গলবার তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাাসাবাদ শুরু করে সিআইডি। তবে রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে তিনি ডামি বা নকল আসামি বলে স্বীকারোক্তি দেন। এ কারণে রিমান্ডের জন্য নির্ধারিত তিনদিন শেষ হওয়ার একদিন আগেই বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির ইন্সপেক্টর মো. সেলিম সাংবাদিকদের জানান, মামলার সাক্ষীরা আদালতে আত্মসমর্পণকারী আসামি চরদিয়াড় দরবারের প্রধান সৈয়দ তাছের আহমেদ নন বলে অভিযোগ আনেন। পরে আদালত আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি আসল পীর নন, এটা স্বীকার করায় রিমান্ডের একদিন আগেই বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আদালতের কাছে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে ইন্সপেক্টর মো. সেলিম জানিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো. সেলিম আরো জানান, তাছের পীরের পরিচয় দাবি করা ওই ব্যক্তি দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর এলাকার মৃত করিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে নাজিম উদ্দিন প্রামাণিক। তিনি ওই পীরের আরেক মুরিদের (একই এলাকার) মাধ্যমে নিজেই পীর সেজে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এর আগে গত ১৭ অক্টোবর হত্যা মামলার আসাসি ওই দরবার শরিফের পীর তাছের আহমেদের ছবির জায়গায় তার মুরিদ আত্মসমর্পণকারী নকল পীর নাজিম উদ্দিন কম্পিউটারের সাহায্যে নিজের ছবি বসিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে আদালতে জমা দেন।

জানা যায়, চলতি বছর ৬ জুন দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের চরদিয়াড় কল্যাণপুরে অবস্থিত ‘দরবার-এ রেসালাতে মোজাদ্দেদীয়া’ নামক দরবার শরিফের খাদেম রাশেদুল ইসলাম রাশেদকে (২৮) ওই দরবার শরিফের বাগানের মধ্যে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত রাশেদ এ উপজেলার হরিণগাছি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের চার-পাঁচ মাস আগে থেকেই রাশেদ ওই দরবার শরিফের খাদেম হিসেবে সেখানে বসবাস করতেন। মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে সে সময় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

এ হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় দরবার শরিফের কথিত পীর হিসেবে পরিচিত সৈয়দ তাছের আহমেদকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দৌলতপুর থানা পুলিশ ছয় জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মামলার অন্যতম আসামি দরবার শরিফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদসহ তার ভক্ত অনুসারীরা আত্মগোপন করেন। তাছের আহমেদ দৌলতপুর উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের মৃত আজের প্রামাণিকের ছেলে।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটির তদন্তভার কিছুদিন পরেই দৌলতপুর থানা পুলিশের কাছ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকায় গত ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার আদালতে ওই দরবার শরিফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদের মুরিদ নাজিম উদ্দিনকে আসল পীর (সৈয়দ তাছের আহমেদ) সাজিয়ে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে আত্মসমর্পণ করানো হয়। এ ঘটনা নিয়ে কয়েকদিন ধরে জেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। কল্যাণপুরী পীর সৈয়দ তাছের আহমেদকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App