×

মুক্তচিন্তা

বিশ্বের নেতা শেখ হাসিনা আমাদের অহংকার

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২১, ০১:২১ এএম

বিশ্বের নেতা শেখ হাসিনা আমাদের অহংকার

জননেত্রী, মানবতার জননী, দেশরতœ, অন্যতম প্রভাবশালী বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও দূরদৃষ্টি দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের ঈর্ষণীয় স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। অনন্য অবদানের জন্য বহু আগে থেকেই তিনি বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি ও অন্যান্য পুরস্কার লাভ করেন। এবারো জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে এসডিজির অগ্রগতির জন্য পুরস্কার লাভ করেছেন। উচ্ছ¡সিত প্রশংসা পেয়েছেন। সবকিছুর মূলে রয়েছে জনগণের কল্যাণ সুনিশ্চিত করার জন্য তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। পিতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠাই তার একমাত্র লক্ষ্য। ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়। বিভ্রান্ত হয় জাতি। পাকিস্তানের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতকরা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আবার পাকিস্তানি ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠা করে। ভূলুণ্ঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক ও স্বৈর শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট করে। গণতান্ত্রিক সমাজের অন্যতম ভিত্তি নির্বাচন। সে নির্বাচনকে ঠাট্টা-তামাশার পরিণত করা হয়। ভোটের বাক্স তুলে নিয়ে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী ফল ঘোষণা করে। হ্যাঁ-না ভোটের প্রচলন করে খুনি জিয়া। মোট ভোটের চেয়ে বেশি ভোট দেয়া হয় বহু কেন্দ্রে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়। প্রচলিত কথা ছিল ১০ জন গুণ্ডা আর ১০টি হোন্ডা হলেই সবকিছু ঠাণ্ডা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালু হয় সমাজে। সমাজের শান্তি বিনষ্ট হয়। বছরের পর বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। বিদ্যুতের অভাবে মানুষ দিশাহারা হয়ে যায়। খাদ্য ঘাটতি ছিল। অভাব ছিল। উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা (দুর্ভিক্ষ) পীড়িত এলাকার মানুষ বছরের পর বছর খাদ্যের অভাবে দিন যাপন করতে বাধ্য হতো। সারের দাবিতে আন্দোলন করায় ২৪ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়। দেশের উন্নয়ন নয়, মানুষের উন্নয়ন নয়, শাসকদের উন্নয়নই ছিল লক্ষ্য। কথা বলার অধিকার ছিল না। হাজার হাজার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক সরকার ও তাদের মদতপুষ্ট সরকারের ২১ বছরের ছিল এই সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও সেদিন লাখ লাখ মানুষ বিমানবন্দরে এবং গোটা ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় উপস্থিত থেকে তাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানায়। স্বৈরাচার খুনি জিয়ার ক্ষমতার ভিত কেঁপে ওঠে। ফলে শেখ হাসিনাকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। শাহাদতবরণকারী বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, শহীদ শেখ কামাল, শহীদ শেখ জামাল, শহীদ শেখ রাসেল, শহীদ শেখ সুলতানা কামাল, শহীদ শেখ রোজী কামাল এবং শহীদ শেখ নাসেরসহ ১৫ আগস্ট শাহাদতবরণকারীদের আত্মার শান্তির জন্য রাস্তায় বসে মিলাদ ও দোয়া পড়তে হয়। এই ছিল সেদিন বাংলাদেশের অবস্থা। নেত্রী দেশে ফিরে নতুন উদ্যমে নিজের দল সংগঠিত এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন। শত বাধা বিপত্তি এবং নির্যাতন সহ্য করে নেত্রী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যান। এক স্বৈরশাসক যায়। আরেক স্বৈরশাসক আসে। তার মধ্য দিয়েই তাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। বারবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। স্বৈরশাসক এরশাদের সময় চট্টগ্রামে তার সভায় গুলি চালিয়ে কয়েকজনকে হত্যা করা হয়। লক্ষ্য ছিল নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। আল্লাহর অশেষ রহমত ও মানুষের দোয়ায় তিনি বেঁচে যান। স্বৈরাচার বিতাড়নের পর ’৯১ সালে যে নির্বাচন হয়। সূ² কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ২১ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করতে সময় লাগে। তারপরও ওই সময়ে সাধারণ মানুষের কল্যাণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয় এবং ৫ বছর মেয়াদ শেষে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর আগে কেউ ৫ বছর মেয়াদ শেষে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেননি। কিন্তু দুর্ভাগ্য ২০০১ সালের নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১ কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার বাতিল করা হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে এই ভুয়া ভোট বাতিল হওয়ার পর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেন। তখন দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল। বিদ্যুৎ ছিল না বললেই চলে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল খুবই কম। হাজারো সমস্যা মোকাবিলা করে আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশের তালিকায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত। দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তব। ঢাকা শহরে মেট্রোরেল প্রায় বাস্তব অবস্থায়। সারাদেশে সড়ক-সেতু নির্মাণ করে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করা হয়েছে। আজ বাংলাদেশ ডিজিটালাইজড। বাংলাদেশ ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ (একশ বছরের পরিকল্পনা) নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার। অথচ ক্ষমতা নেয়ার সময় ছিল ১ বিলিয়ন ডলার। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের এবং ’২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার সরকার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ নেয়। ২০০৯ সালে নেয়া উদ্যোগগুলোর মধ্যে আছে- একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ডিজাটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক, মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ বিকাশ ও পরিবেশ সুরক্ষা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন। বৈশ্বিক সমস্যা কোভিড ১৯-এর মধ্যেও বহু দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাবেই বলা হচ্ছে। বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতিও সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। অনেকের আগে আমরাই গত জানুয়ারিতে টিকাদান কর্মসূচি চালু করি। তখনো বাংলাদেশের বিরোধী দলের নীতি-নির্ধারক নেতারা বলেছেন, ভারত থেকে এ টিকা আনা হয়েছে মানুষ মারার জন্য। এ কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়। অথচ তারা টিকা নিয়েছেন। কিন্তু নিজেদের ভুলও স্বীকার করেননি। করোনা পরিস্থিতিতে সামর্থ্য অনুযায়ী জনগণের পাশেও দাঁড়াননি। বলেছেন অসংখ্য লাশ রাস্তায় পড়ে থাকবে। তাদের সেই মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়নি। করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের জন্য যেমন ভাবেন, তেমনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য ভাবেন। তিনি অসুস্থ ও দুস্থ শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকদের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেন। সরকারি কর্মকর্তারা যেন ভালোভাবে জীবন চালাতে পারেন সেজন্য বেতন বৃদ্ধি করেন। তিনি সাংবাদিকদের জন্য একটি কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছেন। ১০ কোটি টাকা এককালীন অনুদান দিয়েছেন। আইন করে এমন ব্যবস্থা করেছেন যাতে সরকার পরিবর্তন হলেও এ ট্রাস্ট পরিচালনায় কোনো অসুবিধা না হয়। পনেরো আগস্ট হৃদয় বিদারক মর্মান্তিক ঘটনার পর এ জাতি স্বপ্ন দেখতে ভুলে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একমাত্র নেতা, যিনি জাতিকে পুনরায় স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ ও কৌশল শিখিয়েছেন। তাই আজ দেশের মানুষের এত উন্নয়ন, দেশের এত অগ্রগতি। জাতিসংঘ মহাসচিবও উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশের উন্নয়নের এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের।

আবুল কালাম আজাদ : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App