×

খেলা

যেসব কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ম্যাচ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১২:৩৩ পিএম

যেসব কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ম্যাচ

মাহমুদুল্লাহ

টি-টোয়েন্টি অনেক ছোট খেলা, আমরা নিজেদের দিনে কী করতে পারি সেটা সবাই জানে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আজকের ম্যাচের আগে এই বক্তব্য দেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা।

যদিও বাংলাদেশ মনে করছে, শারজাহ'র যে মাঠটিতে রবিবারের ম্যাচটি হবে সেটি অনেকটা ঢাকার মিরপুরের মতই এবং ঢাকার ই মাঠে সাম্প্রতিক মুখোমুখি ম্যাচগুলোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভাল করেছে বাংলাদেশ।

পরিসংখ্যানের বিচারে গত ৫টি মুখোমুখি ম্যাচে যদিও বাংলাদেশের চাইতে পিছিয়ে শ্রীলঙ্কা, কিন্তু দাসুন শানাকা মনে করেন বর্তমান অবস্থানে সাকিব-মাহমুদুল্লাহর দলটির চেয়ে এগিয়ে আছেন তারা।

তিনি বলেছেন, বাছাইপর্বে বাংলাদেশ ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনির সাথে জিতে ফর্মে ফিরেছে কিন্তু সামগ্রিকভাবে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে, শ্রীলঙ্কার জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। তিনি ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেছেন।

শানাকার মতে ক্রিকেট খুবই স্বল্প সময়ের খেলা এখানে কোনও পূর্বানুমান নাও খাটতে পারে।

বাংলাদেশকে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা প্রস্তুতি ম্যাচে হারিয়েছে, এটা নিশ্চিতভাবেই দলটিকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে। প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ দ্রুত শ্রীলঙ্কার ছয়টি উইকেট ফেলে দেয়ার পরেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি।

বাংলাদেশ এই আসরে যে তিনটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছে সেখানেই একই অবস্থা দেখা গেছে।

বিশেষত স্কটল্যান্ডের সাথে ৫৩ রানে ৬ উইকেট ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশের বোলাররা, এরপর আর চেপে ধরতে পারেননি তারা। আরো ৮৭ রান যোগ করে স্কটল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপের লোয়ার অর্ডার। শেষ পর্যন্ত এই ম্যাচটিতে ৬ রানের ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ। এই ম্যাচে হারার পর বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়।

পরের দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ মূল পর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে বটে, কিন্তু ওমানের বিপক্ষে এবং পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরে আর তেমন বাড়তি আক্রমণ দেখা যায়নি। যেটা দেখা গেছে শ্রীলংকার এই ক্রিকেট দলটিতে।

শ্রীলঙ্কার জবাব দেয়ার মঞ্চ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট সামগ্রিকভাবেই অর্থের অভাবে, খেলার মানের পড়তি অবস্থা এবং বোর্ডের নানা রাজনৈতিক বিবাদের কারণে একটা নেতিবাচক অবস্থানে আছে গত বছর দুয়েক ধরে।

এর মধ্যে নানা পর্যায়ে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের তদন্ত এবং সেখানে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের বড় বড় নামের বিরুদ্ধে শাস্তির ঘোষণাও দিয়েছে আইসিসি।

দাসুন শানাকা ও তার দল পুরো বিষয়টাকে বদলে দিতে চান। তারা মনে করেন একমাত্র মাঠের খেলা ভালো হলেই বিশ্ব ক্রিকেটে তারা সম্মান পাবেন এবং সেজন্য প্রয়োজন ইতিবাচক মনোভাব এবং আগ্রাসী ক্রিকেট। সেটাই তারা খেলছেন বলে মনে করেন দাসুন শানাকা।

এই বিশ্বকাপ শুরুর আগে নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট দলের অধিনায়ক পিটার সিলার শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এভাবে, "চার দলের মধ্যে শ্রীলঙ্কা কোনওভাবেই নিজেদের সেরা বলতে পারবে না এখনই। তাদের কঠিন সময়ের মধ্য দিয়েই মূলপর্ব নিশ্চিত করতে হবে।"

নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও নামিবিয়ার গ্রুপে শ্রীলঙ্কা তিন ম্যাচেই বেশ দাপটের সাথে জয় তুলে নেয়, নেদারল্যান্ডসকে ৪৪ রানে অলআউট করে দেয় দলটি, নামিবিয়া ৯৪ এবং আয়ারল্যান্ড ১০১ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

অর্থাৎ বাছাইপর্বের ম্যাচের তিনটিতে দুই ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের প্রতিপক্ষ ১০০ রানও করতে পারেনি। একটিতে ৫০ও স্পর্শ করতে পারেনি। মুস্তাফিজ, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কথা আলাদাভাবে বলেছেন দাসুন শানাকা। তিনি মনে করেন, এই ক্রিকেটাররা ম্যাচের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট তবে নিজেদের দলের ক্রিকেটারদের ওপর পূর্ণ আস্থা আছে তার।

কার কোথায় শক্তির জায়গা কোথায় শ্রীলঙ্কার এই দলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। মাত্র ২৮ ম্যাচের ক্যারিয়ারেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ডাক পেয়েছেন, ভিরাট কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে।

২৮ ম্যাচে ৪২টি উইকেট নিয়েছেন, যদিও ব্যাট হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তেমন সফল নন এখনও কিন্তু তার হাতে বড় শট আছে এটার প্রমাণ দিয়েছেন হরহামেশাই। বাংলাদেশ দলে সাকিব আল হাসানকে কেন্দ্র করে ব্যাটিং ও বোলিং ভিত দাঁড়াবে- বাছাইপর্বে রান ও উইকেটের তালিকায় ওপরের দিকে আছেন তিনি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারদের একজন সাকিব, পাকিস্তানের ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদির সাথে যৌথভাবে ৩৯ উইকেট নিয়ে উইকেট শিকারিদের তালিকায় শীর্ষে আছেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও সাকিব সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।

বাংলাদেশের জন্য শ্রীলঙ্কার অধিনায়কের উল্লেখ করা তিনজন ক্রিকেটারের বাইরেও বড় নাম হয়ে উঠতে পারেন মুশফিকুর রহিম। যদিও তিনি বেশ বাজে একটা সময় অতিক্রম করছেন ব্যাট হাতে, কিন্তু স্পিন খেলতে পারার যে সহজাত ক্ষমতা তাতে শ্রীলঙ্কার মতো স্পিন নির্ভর দলের বিপক্ষে নির্ভরতার জায়গা হয়ে উঠতে পারেন তিনি।

মুস্তাফিজুর রহমানের দিকে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের বাড়তি নজর থাকবে, আইপিএলের দল রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে গত এক মাস ধরেই তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন, শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যে ধরনের মাঠ তা মুস্তাফিজের জন্য আদর্শ- বল গ্রিপ করা, মাটি কামড়ে মুভমেন্ট নেয়া, স্লোয়ার কাটারে বাড়তি ধার পাওয়া সম্ভব এই মাঠে।

উত্তপ্ত লড়াই আর বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার আগে শ্রীলঙ্কার এই দলটি তেতে থাকবে, ২০১৮ সাল থেকেই শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের ক্রিকেটে বৈরি সম্পর্ক।

২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফির একটি ম্যাচে মাঠেই আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এই ম্যাচ শেষে বিখ্যাত 'নাগিন ড্যান্স' দিয়ে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলের সামনে উদযাপন করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

এরপর ২০২০ সালে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে কোভিড পরিস্থিতিতে কিছু শর্ত দিয়ে টেস্ট খেলতে আমন্ত্রণ জানায়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তখন বলেছিলেন, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচের জন্য শ্রীলঙ্কা তাদের দেশে যেসব শর্ত দিয়েছে তা মেনে খেলা সম্ভব হবে না বাংলাদেশের।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মতে শর্তগুলো ছিল 'অবাস্তব ও কঠিন'।শেষ পর্যন্ত আর শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন একটা ইতিবাচক অবস্থানে আছে বলে মনে করেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।

এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে যে ধরনের উইকেটে খেলা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আশাবাদী, তিনি বলেই দিয়েছেন মিরপুরের সাথে অনেক মিল খুঁজে পাচ্ছেন তিনি। কে জানে বহুল সমালোচিত মিরপুরের অভিজ্ঞতাই বাংলাদেশের কাজে আসে কি না এই বিশ্বকাপের মঞ্চে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App