×

মুক্তচিন্তা

ফেসবুক মানসিক চাপ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২১, ০১:৫২ এএম

ফেসবুক মানেই একটা সময় ছিল বিনোদন, আনন্দ, শেয়ারিংয়ের জায়গা। যদিও কেয়েরিং কখনোই ছিল না, তবে আজকের মতো এতটা অস্বস্তিকর পরিবেশও ছিল না। আর এই পরিবেশটা এখন অনেকের জন্য মানসিক চাপ বৃদ্ধির কারণ। মানসিক চাপকে অনেকেই হালকাভাবে দেখে থাকেন, অথচ এটি ভীষণ স্পর্শকাতর একটি বিষয়। মানসিক চাপ আমাদের ব্যক্তি জীবনে নানা সমস্যা তৈরি করে। তাই ফেসবুকে আমাদের পোস্ট কনটেন্ট, মন্তব্য, আচরণ, একে অন্যের প্রতি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার ধরন, এসব বিষয় অ্যাকশনের যাবার আগে একটু ভেবে নেয়া দরকার। এবং এজন্য প্রয়োজন গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তবেই ফেসবুকের পরিবেশটা অনেকটাই উপভোগযোগ্য হতে পারে। দাপাদাপি, প্রচার-প্রসার, কৌশল, কথা-আচরণে একে অন্যকে আহত করা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার এখানে। মোট কথা- ‘আই এম দ্য অনলি ওয়ান হিরো’, সর্বক্ষেত্রে এই বিষয়টা উপস্থাপন করা যেন এখন সময়ের দাবি। আমাকে বুঝতে হবে যে, আমি যদি আজ দুটি গান লিখে গীতিকার হয়ে যাই, দুটি তথ্যমূলক আর্টিক্যাল লিখে যদি গবেষক হয়ে যাই, দুদিন তর্ক-বিতর্কে গিয়ে যদি পলিটিক্যাল ফিগার হয়ে যাই কিংবা পত্রিকার পাতায় দুটি কবিতা ছাপা হলেই যদি বিশাল কোনো কবি হয়ে যাই, তবে আমি সফল, কিন্তু সার্থক নই। সার্থক তখনই হবো যখন আমার কণ্ঠ, প্রতিটি পদক্ষেপ বা সাফল্য কোনো ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের কোনো উপকারে আসবে বা প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটাবে। কিছু বিষয়ে ঈর্ষান্বিত হওয়ার ব্যাপারটিতে আমরা যুক্তি খুঁজে পেতে পারি। পরীমনির কথাই ধারা যাক। মাত্র ২-৩ বছরের চলচ্চিত্রের যাত্রা তার। তার হিট করা কোনো মুভিও নেই। অথচ কোটি টাকার মালিক, দামি বাড়ি গাড়িতে চড়েন। হাঁচি দিলেও সাংবাদিকরা ঝাঁপিয়ে পড়েন তার ওপর। সভা-সমিতিতে সামনের চেয়ারে তিনি বসেন। অথচ বহু অভিনেতা-অভিনেত্রীকে এখনো দেখি যারা সর্বকালের হিট অভিনেতা-অভিনেত্রী, তারা এখনো আর্থিক সংকটে উন্নত চিকিৎসা করতে পারেন না। তারা এখনো পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবহার করেন। কাজেই বছর বছর ধরে পরিশ্রম করে অডিয়েন্সকে সবটুকু দিয়ে দিয়েও আর্থিক সংকটে থাকা একজন সুপরিচিত অভিনেত্রী যদি এখন পরীমনিকে হিংসা করেন, তবে সেটা অপরাধ হওয়ার কথা না, বরং যুক্তিমূলক হওয়ার কথা। মানুষ তো, ফেরেশতা নই আমরা। পরিশ্রম করে প্রাপ্য মূল্য না পাওয়া আমি নিজেও অন্যকে বিনা পরিশ্রমে সবটুকু পেতে দেখলে, রাগ বা ঈর্ষান্বিত হওয়ার যথেষ্ট যুক্তি রাখি। তবে এখানে আমাদের যা করণীয় তা হলো, নিজের আবেগ-অনুভূতি ও আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা। আমাদের মনে কারণে-অকারণে রাগ, ক্ষোভ, হিংসা, বিদ্বেষ আসতেই পারে, তবে সেটা যেন কোনোভাবে অন্যকে আঘাত বা ক্ষতিগ্রস্ত না করে, তা লক্ষ্য রাখা খুব জরুরি। আমাদের নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে এবং আমরা যেন নিজেকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে অন্যকে অবমূল্যায়ন না করি। আমিই যে সর্বাবস্থায় সব জানি বা সব বিষয়ে জ্ঞান রাখি, কিংবা সব প্রাপ্তি কেবল আমারই, বিষয়টা তা কিন্তু নয়। আমার থেকেও একটা শব্দ, বাক্য, ঘটনা, ধারণা, ভিন্ন চিন্তাশক্তি বা উৎপাদনশীলতায় যে এগিয়ে আছেন, সেই ব্যক্তিই আমার থেকে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ বলে ধরে নেয়া যায়। সর্বাবস্থায় নিজেকে নিয়ে ভাবা মন্দ কিছু নয়। তবে সর্বাবস্থায় নিজেকে হিরো ভাবা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এমন ভাবনা আমাদের নিজেদের এবং অন্যদের উভয় পক্ষকেই মানসিক চাপে ফেলে। চাপ আমাদের ভীতিজনক একটি কারণ অর্থাৎ ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ লড়াই কর অথবা পালাও প্রতিক্রিয়া। আমাদের শরীর এবং মনের জন্য যা হুমকিস্বরূপ তাই মনের ওপর চাপ। এবং সেই হুমকি বা প্রতিকূল পরিবেশটাতে আমাদের শরীর ও মন কীভাবে সাড়া দিচ্ছে, সেটা হলো ‘স্ট্রেস রেসপন্স।’ এসব ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা জরুরি হলেও সবাই সেটা করতে পারেন না। এই চাপ একেকজনের ওপর একেক রকমভাবে প্রভাব বিস্তার করে। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপে থাকা একজন ব্যক্তির আবেগ নিয়ন্ত্রণহীন হয়। আবেগের অস্থিতিশীলতায় চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হয়, নেতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধি পায় এবং মেজাজ, আচরণ পরিবর্তন হয়। এই চাপ যদি দীর্ঘদিন চলতে থাকে এবং আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, তবে এক পর্যায়ে সেটা মানসিক রোগে পরিণত হতে পারে। যেমন- অ্যাংজাইটি ডিসর্ডার, ডিপ্রেশনে! আর যখন মানসিক রোগ মন-মস্তিষ্ককে ধরে ফেলে, তখন আমাদের শরীর খুব ভয়ানকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এইচ বি রিতা কবি ও লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App