×

সারাদেশ

ক্ষত বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন পীরগঞ্জের জেলেপল্লীর বাসিন্দারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৪৩ এএম

ক্ষত বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন পীরগঞ্জের জেলেপল্লীর বাসিন্দারা

রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লীতে সাম্প্রদায়িক হামলায় পুড়ে যাওয়া ভিটায় নতুন ঘর তুলছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। শনিবারের ছবি -ভোরের কাগজ

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের অজপাড়া বড়করিমপুর কসবা মাঝিপাড়া, যা জেলেপল্লী নামেও পরিচিত। গ্রামের ভিতরেই বড়বিলা নামের বিশাল একটি বিল। বিলের পাশে বিস্তৃত সবুজ ধান ক্ষেত। মাঝে মাঝে কয়েক ঘর হিন্দু বসতি। উন্মুক্ত এই বিলে মাছ ধরেই জীবন চলে জেলেপল্লীর মানুষের।

গত ১৭ অক্টোবর রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দুর্বৃত্তরা মাঝিপাড়ার হিন্দুপল্লীর বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে নির্বিচার লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। সেই সহিংস ঘটনার ভীতি কাটিয়ে হিন্দুপল্লীর বাসিন্দারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন। অগ্নিসন্ত্রাস ও ভাঙচুরে যারা মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে ছিলেন তারা আবার নতুন ঘরে উঠেছেন।

এর আগের কয়েক রাত তাদের কাটাতে হয়েছে শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দিরের মাঠে স্থাপিত তাঁবুতে। গত কয়েকদিন তাদের বাড়িতে চুলা না জ্বললেও গতকাল শনিবার থেকে আবার রান্নাবান্না শুরু হয়েছে।

শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান দ্বিতীয়বারের মতো ঐ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এদিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখন মাঝিপাড়ায় আতঙ্ক নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আর কোনো ভয়ভীতি নেই। সবাই বাড়ি ফিরেছেন। তারা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নতুন টিনে নতুন ঘর তৈরির কাজ প্রায় শেষ। সবার মুখে হাসি ফিরেছে।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, সরকারি ও বেসরকারি নানা সংগঠনের সহযোগিতা ও ভালোবাসায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখন স্বাভাবিক। তাদের চুলায় এখন রান্না হচ্ছে এবং কাজকর্মেও যোগ দিয়েছেন তারা।

জেলেপল্লীর বাসিন্দা সুকাল চন্দ্র জানান, তারা এখন অনেকটাই নিরাপদ মনে করছেন। কেননা পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা এখন নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। উজলী রানি জানান, পাঁচদিন পর গতকাল শনিবার নিজবাড়ির চুলায় রান্না করেছেন। অনুদান হিসেবে নগদ টাকা, টিন-শাড়ি পাওয়ার পরও লুট করে নিয়ে যাওয়া ৩টি ছাগলের কথা ভুলতে পারছেন না তিনি। গতকালও দেখা গেছে, দেবেন্দ্রনাথ ২টি গরুসহ পুড়ে যাওয়া ঘর মেরামতের কাজে ব্যস্ত। টিন চাপানো হচ্ছিল ঘরের উপরে।

জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত ৬৬টি পরিবারের মাঝে প্রায় ৬৫ লাখ টাকাসহ খাদ্য ও বস্ত্র সহযোগিতা বিতরণ করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ১৪টি ঘর নির্মাণ এবং ৪০টি ঘর মেরামত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে ১৬৬টি শাড়ি, ২৬৬টি লুঙ্গি, ১৬৬টি কম্বল,৪০০ শুকনা খাবার প্যাকেট, ২৫ প্যাকেট গোখাাদ্য, ৪০ প্যাকেট শিশুখাদ্য, ১০০ বান্ডিল টিন এবং নগদ ২৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও জীবিকা নির্বাহের জন্য মাছ ধরার জাল পেয়েছেন ১৫ জন জেলে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৪০ সেট নতুন বই এবং ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ১৬টি সার্টিফাইড কপি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রেড ক্রিসেন্ট, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও আরডিআরএসের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে মোট ৩৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং দুটি মন্দিরকে ১১ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে জেলা পুলিশ।

অন্যদিকে, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে এবং ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App