×

জাতীয়

প্রশ্ন রানা দাশগুপ্তের: ইকবাল ভবঘুরে হলে কুরআন চিনলেন কীভাবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৪৬ এএম

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন শরিফ রাখার ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে শনাক্ত যুবক ইকবাল হোসেনকে ‘ভবঘুরে’ বলা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল হোসেন নামে যাকে শনাক্ত করা হয়েছে, তার নামের আগে ভবঘুরে শব্দ জুড়ে দেয়া হয়েছে। আমার প্রশ্ন- ইকবাল হোসেন ভবঘুরে হলে কীভাবে কুরআন শরিফ চিনলেন? যদি সে ভবঘুরে হয়ে থাকে, যদি সে রাস্তার লোক হয়, তাহলে নতুন বই কোথা থেকে আনল, কে দিল? ভিডিওতে দেখা গেছে- হনুমানের গদাটা এমনভাবে সরালো যেন হাতের কিছু না হয়। আবার সেখানে পবিত্র কুরআন শরিফ দিয়ে দিল- এটি কোনো ভবঘুরের কাজ হতে পারে না।’ রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। চক্রান্তকারীরা পেছনে আছে। তাদের বের করে আনার দায়িত্ব রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সরকারকে নিতে হবে।’

চট্টগ্রামসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রেক্ষাপটে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রানা দাশগুপ্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার বাসায় যান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। উভয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা একান্তে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে রানা দাশগুপ্ত এসব কথা বলেন। বৈঠকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে প্রশাসনের গাফিলতির বিষয়টি উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত হামলার প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ও সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে উপমন্ত্রীকে জানান। জবাবে উপমন্ত্রী নওফেল হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘সংক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক, তবে সরকার এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সম্প্রদায়ের যেন দূরত্ব তৈরি না হয়।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘শুধু প্রশাসন দিয়ে শতভাগ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা কঠিন। এটা সারা পৃথিবীর বাস্তবতা। একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কথা আলোচনায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রীতি সমাবেশ ও মিছিল করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামীতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় এবং অঙ্গীকার অবশ্যই বাস্তবায়ন করব।’ সরকার শতভাগ সচেষ্ট আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এর আগের ঘটনায়ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দীর্ঘসূত্রতা আছে। কিন্তু বিচারিক প্রক্রিয়ার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। এই দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২১ বছর পর, সুতরাং বিচারিক প্রক্রিয়ার একটি দীর্ঘসূত্রতা থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, সম্প্রীতির বাংলাদেশে কোনো অপরাজনৈতিক শক্তি মাথাচাড়া দিতে পারবে না। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি। যে কোনো দেশের জন্য স্থিতিশীলতা, সামাজিক শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো আছে বলে বাংলাদেশে উন্নয়ন ও প্রগতি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হচ্ছে। এটা বিনষ্ট করার কেউ যদি অপচেষ্টা করে আমরা সেটা নস্যাৎ করে দেব।’

উপমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের যে কোনো নাগরিক সংক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ অবশ্যই করতে পারেন। এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার এবং নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি আমরা অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল। পাশাপাশি আহ্বানও জানাই, গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চায় সংক্ষুব্ধ সব পক্ষকে আমাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার জন্য। সংক্ষুব্ধ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, যে ঘটনা ঘটেছে, এতে সংক্ষুব্ধ হবেন সেটাই স্বাভাবিক।’ দূরত্ব তৈরি না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কি সংক্ষুব্ধ নয়? আমরা সরকারে থাকা অবস্থায় অপরাজনৈতিক শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তি যে কাজটি করেছে সেটাতে তো আমরাও সংক্ষুব্ধ। আমাদের দলের সংক্ষুব্ধ হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। তার জন্যই আমরা সম্প্রীতি সমাবেশ করছি।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App