×

মুক্তচিন্তা

ধর্মকে কেন বারবার আঘাত করা হয়?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২১, ০১:০০ এএম

দিন দিন যেন দেশে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ বাড়ছে। আমাদের সমাজে দেখতে পাই মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং উপাসনালয়ে হামলা হতে। ভেঙে দেয়া হয় মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা। সম্প্রতি যা ঘটে গেল সেটা তো আমরা দেখলাম। রংপুরের পীরগঞ্জে জেলেপাড়ায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কিছু সন্ত্রাসী। এর আগে কুমিল্লায় পবিত্র কুরআন শরিফ রেখে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেছে কিছু সন্ত্রাসী। যাতে বাংলার হিন্দু-মুসলমান আলাদা হয়ে যেতে পারে, দাঙ্গায় জড়াতে পারে। সেটা তারা পেরেছেও, যার ফল হিসেবে কিছু ধর্মান্ধ যাচাই-বাছাই ছাড়া পূজামণ্ডপে ভাঙচুর চালিয়েছে। এরপর ফেনী বড় মসজিদে কিছু সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এভাবে এর শেষ কোথায় হয়, সেটাই বড় প্রশ্ন এখন! আমরা যদি একদম অতীতে ফিরে দেখি তবে দেখতে পাব ২০০২ সালের রঘুনাথ মন্দির হামলা, ২০১২ সালের কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা, ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিএনএস ইশা খাঁ ঘাঁটি সংলঘœ মসজিদে বোমা হামলা চালানো হয়। এছাড়া ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাজশাহীর বাগমারা এলাকায় একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় কিছু আত্মঘাতী হামলাকারী। এই হামলায় দুর্বৃত্তরাসহ নিহত হয় একজন এবং আহত হয় ৩০ জনেরও অধিক। ২০১৬ সালের ৮ জুন বগুড়ার শিয়া মসজিদের হামলা সম্পর্কেও আমাদের অজানা কিছু নয়। ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার একটি গ্রামে কালী মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ রকম হাজারো নথি আমাদের কাছে থাকতে পারে। কিন্তু এরপরও এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো সচেতনতা কিংবা আইনি পদক্ষেপ আমরা দেখছি না। আমরা মসজিদ ভাঙলে হিন্দুদের দোষারোপ করি আর মন্দির ভাঙলে মুসলমানদের দোষারোপ করে থাকি। কিন্তু মূলত অপরাধী কারা তা আমরা যাচাই করি না। আসলে অপরাধী কোনো ধর্মের নয়। এরা অন্য একটি দল কিংবা গোত্র। যারা ধর্ম বিশ্বাস করে না তারাই এসব কর্মকাণ্ড করে থাকে। আসলে এদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের দাঙ্গা তৈরি করে দেয়া। ইসলাম কখনোই এসব সমর্থন করে না। আমার জানা মতে কোনো ধর্মেই এসব নোংরা কাজ সমর্থন করে না। প্রতিটা ধর্মই শান্তি চায়। সারাদেশে ২ লাখ ৫০ হাজার ৩১৯টিরও অধিক মসজিদ রয়েছে। ধর্মপরায়ণ মানুষ না থাকলে এত মসজিদ তৈরি হতো না বাংলাদেশে। একইভাবে মন্দিরের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশে। ধর্মের প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে বলেই দেশে এত বেশি বেশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। কোনো ধর্মে মারামারি, হানাহানি এবং হামলা সমর্থন করে না। এটা কোনো ধর্মে উল্লেখও নেই। যারা এসব কথা বলে মানুষকে বিপথগামী করে তুলে তারা আসলেই ধর্মবিরোধী, দেশ ও জনগণের শত্রæ। তাই বর্তমান সরকারের কাছে প্রত্যাশা এসব কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের দেশ থেকে অতিদ্রুত উচ্ছেদ করা। সরকারেরও ধর্মের প্রতি আরো সহনশীল হতে হবে। বর্তমান সরকারের প্রতি মানুষের বিশ্বাস এবং ভালোবাসা আছে। তাই আমি আশা করি বর্তমান সরকার কোনো ধর্মকেই অবহেলা করবে না। প্রতিটা ধর্মের মানুষকে সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। বঙ্গবন্ধুর এই সাজানো সোনার বাংলায় যেন সব ধর্মের মানুষ সুন্দর এবং স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে সেটাই আমাদের কাম্য। দেশে যেন আর কোনো মসজিদ, মন্দির এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙতে না পারে সেদিকে নজর দেয়া অতীব জরুরি। আশা করি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টাকে গুরুত্বসহকারে দেখবেন। দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকলে তাদের ধর্মের প্রতি কখনোই আঘাত হানতে দেবে না বর্তমান সরকার। এটা আমরা বিশ্বাস। আমাদের এই সোনার বাংলায় ধর্মকে হাতিয়ার করে যেন কোনো ধরনের রাজনীতি করা না হয় সেটাও সবার মাথায় রাখতে হবে। আমাদের সবার এক হতে হবে। মুসলমানদের পাশে হিন্দু, হিন্দুর পাশে মুসলমান, এভাবেই সবার এক থাকতে হবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমানসহ সব ধর্মের মানুষ যদি এক হয়ে কাজ করতে পারে তবে আমাদের এই সোনার বাংলা বিশ্বের মাঝে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে থাকবে। চাই শুধু একতা। সম্মান দিতে হবে প্রতিটা ধর্মের মানুষকে। সম্মান দিতে হবে প্রতিটা ধর্মকে।

আজহার মাহমুদ : শিক্ষার্থী, ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App