×

সারাদেশ

অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে নান্দনিক ‘পায়রা সেতু’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২১, ০৯:২১ এএম

অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে নান্দনিক ‘পায়রা সেতু’

পায়রা সেতু

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ‘পদ্মা ও পায়রা সেতু’ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সর্বশেষ স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর পুরো কাঠামো। এর পরই দৃশ্যমান হয় পায়রা নদীর ওপর নির্মিত সেতু। সম্প্রতি এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেতু নির্মাণ প্রকল্পে মূল ব্যয়ের চেয়ে সাড়ে তিনগুণ বেশি ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৫ বছর বেশি সময় লেগেছে। আগামী ২৪ অক্টোবর সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সেতুটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে, পটুয়াখালীর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রথম শহীদ পটুয়াখালীর কৃর্তি সন্তান আলাউদ্দিনের নামে নামকরণের দাবি উঠেছে। অপরদিকে, সেতু পারাপারের জন্য ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের নির্ধারিত টোল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, পদ্মা ও পায়রা সেতুকে ঘিরে বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠছে হোটেল-মোটেলসহ ছোট-বড় অনেক শিল্প কলকারখানা। সেতু দুটিতে যান চলাচল শুরু এবং রেল যোগাযোগের আওতায় এলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিপ্লব ঘটবে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য দুয়ার খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে। পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল হালিম বলেন, সেতুটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেতুতে হেল্প মনিটরিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। যাতে ভূমিকম্প বজ্রপাতসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা ওভার লোডেড গাড়ির কারণে ক্ষতি এড়াতে পূর্বাভাস মিলবে মনিটরিং সিস্টেম থেকে।

ভাগ্য বদল : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করবে পদ্মা ও পায়রা সেতু। পর্যটন করপোরেশনের কুয়াকাটার ব্যবস্থাপক সুভাষ চন্দ্র নন্দী জানান, পদ্মা ও পায়রা সেতুকে সামনে রেখেই পায়রা সমুদ্রবন্দর, গঙ্গামতী, কাউয়ারচর, কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় গড়ে উঠছে আধুনিক মানের হোটেল-মোটেল, শিল্পায়নসহ নানা স্থাপনা। একই সঙ্গে এসব অঞ্চলের সঙ্গে গড়ে উঠবে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়িক সম্পর্ক।

মাত্রাতিরিক্ত টোল : দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের লেবুখালী পায়রা সেতুতে মাত্রাতিরিক্ত টোল নির্ধারণে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহনের মালিক-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে পায়রা সেতু পারাপারে অতিরিক্ত টোল নির্ধারণের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র বিতর্কের ঝড় বইছে। গত ১৮ মার্চ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের (টোল অধিশাখা) উপসচিব ফাহমিদা হক খান স্বাক্ষরিত এক গেজেটে সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বরিশাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন বলেন, ফেরি ও সেতুর টোলের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। সড়ক পরিবহন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে টোল নির্ধারিত হয়ে থাকে। এতে আমাদের কোনো হাত নেই।

৪০ বছরের দুর্ভোগের অবসান : পায়রা সেতু উদ্বোধনের পরই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ফেরিপথ লেবুখালী ফেরিঘাট। দীর্ঘদিন এ ঘাটের কর্মচাঞ্চল্য হারালেও খুশি এখানকার বাসিন্দারা। ফেরি মাস্টার মো. শাহ আলম বলেন, ফেরি বন্ধ হলে ১০ জন চালক ছাড়া বাকিদের অন্য কোথাও বদলি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ তারা সরকারি তালিকাভুক্ত নয়। জানা যায়, ১৯৮০ সালের দিকে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে কয়েকটি নদীতে ফেরি চলাচল চালু করে তৎকালীন সরকার। লেবুখালী ফেরিঘাট সুপারভাইজার মো. আফজাল হোসেন জানান, এ ঘাটে চারটি নতুন এবং দুটি পুরনো ফেরি চলাচল করে। পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান জানান, সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে ফেরির বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App