×

সারাদেশ

তিস্তায় হঠাৎ বন্যায় ক্ষতির মুখে হাজারো কৃষক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২১, ০৫:১৭ পিএম

তিস্তায় হঠাৎ বন্যায় ক্ষতির মুখে হাজারো কৃষক

তিস্তায় ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত পরিবারগুলো আশ্রয় নিচ্ছে তিস্তা ডান তীর প্রতিরক্ষা বাঁধে। ছবিটি তোলা হয়েছে বৃহস্পতিবার গঙ্গাচড়ার গান্নারপাড়া এলাকা থেকে

তিস্তায় হঠাৎ বন্যায় ক্ষতির মুখে হাজারো কৃষক

তিস্তা বন্যায় বুধবার ভেঙে গেছে রংপুর-বুড়িমারী সড়ক। ছবিটি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার রুদ্রেশ্বর (গঙ্গাচড়া সংলগ্ন) গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার তোলা হয়েছে

এক দিনেই নদীতে বিলীন হল এক হাজার ঘরবাড়ি, রংপুর-বুড়িমারী সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ

তিস্তা নদীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় একদিনেই রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ক্ষতির মুখে থাকা কৃষকরা দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার প্রায় এক মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ থেকে প্রবাহিত হচ্ছে বলে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।

পানির তোড়ে রুদ্রেশ্বর গ্রামে রংপুর-কাকিনা সড়ক ভেঙে গেছে। ফলে এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। গান্নারপাড় গ্রামে তিস্তা ডানতীর প্রতিরক্ষা মূল বাঁধ আংশিক ভেঙে গেছে। উপজেলায় তিস্তার চরাঞ্চল ও তীরবর্তী এলাকার প্রায় এক হাজার ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বন্যায় ভেসে গেছে আরো প্রায় দেড় হাজার পরিবারের ঘরবাড়ির আসবাবপত্র, মালামাল ও গৃহপালিত পশুপাখি।

এক হাজার ৭১৫ হেক্টর জমির আমন ধান, বাদাম ও মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা মূল্যের দেড় সহস্রাধিক পুকুরের প্রায় দেড় সহস্রাধিক মেট্রিক টন মাছ। বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া এক ব্যক্তি এখনও নিখোঁজ রয়েছে। নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ ও প্লাবিত পরিবারগুলোর মাঝে সরকারীভাবে শুকনা খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানসহ ভূক্তভোগীরা।

উপজেলার সংশ্লিষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, লহ্মিটারী ইউনিয়নের চল্লিশ সাল, শংকরদহ, পশ্চিম ইচলী, মধ্য ইচলী ও বাগের হাট গ্রাম; গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের গান্নারপাড় গ্রাম; গজঘণ্টা ইউনিয়নের চর ছালাপাক মহিষাসুর, কালির চর ও রমাকান্ত গ্রাম; কোলকোন্দ ইউনিয়নের মটুকপুর, উত্তর চিলাখাল, মধ্য চিলাখাল, বিনবিনা, খলাইর চর, শখের বাজার, আবুলিয়া, সাউদপাড়া ও আলেকিশামত গ্রাম; আলমবিদিতর ইউনিয়নের পাইকান হাজীপাড়া, ব্যঙ পাড়া ও সাউদপাড়া; নোহালী ইউনিয়নের চর নোহালী ও বাগডহরা এবং মর্নেয়া ইউনিয়নের আলালের চর, নীলারপাড়, তালপট্টির চর, হাজীরপাড়া নরসিংহ, চর মর্নেয়া গ্রামে বন্যায় প্রায় দুই হাজার ৫০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় এক হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে গত এক দিনেই। এ সময় আরও প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বাড়ীর মালামাল, আসবাবপত্র ও গৃহপালিত পশুপাখি পানির বাঁধভাঙা স্রোতে ভেসে গেছে।

[caption id="attachment_314075" align="aligncenter" width="700"] তিস্তায় ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত পরিবারগুলো আশ্রয় নিচ্ছে তিস্তা ডান তীর প্রতিরক্ষা বাঁধে। ছবিটি তোলা হয়েছে বৃহস্পতিবার গঙ্গাচড়ার গান্নারপাড়া এলাকা থেকে[/caption]

ইউপি চেয়ারম্যানরা আরও জানান, নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে লহ্মিটারী ইউনিয়নে ২৪০টি বাড়ী, গঙ্গাচড়া ইউনিয়নে ৩০টি, গজঘণ্টা ইউনিয়নে ৮০ টি, কোলকোন্দ ইউনিয়নে ৩৯০টি, আলমবিদিতরে ২০টি, নোহালী ইউনিয়নে ৯০টি ও মর্নেয়া ইউনিয়নে ৯৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি।

এ ছাড়া পানির স্রোতে বাড়ীঘরের আসবাবপত্র, মালামাল ও গৃহপালিত পশুপাখি ভেসে গেছে লহ্মিটারী ইউনিয়নে ৩০০ পরিবারের, গঙ্গাচড়া ইউনিয়নে ৩৫, গজঘণ্টা ইউনিয়নে ১০০, কোলকোন্দ ইউনিয়নে ৪০০, আলমবিদিতরে ১০০, নোহালী ইউনিয়নে ৫০০ ও মর্নেয়া ইউনিয়নে ৪০০ পরিবারের।

পুকুরে প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে গেছে প্রায় দেড় হাজার মেট্রিক টন। যার মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ইউনিয়নভিত্তিক পুকুরের সংখ্যা হচ্ছে লহ্মিটারী ইউনিয়নে ৩০০টি পরিবারের, গঙ্গাচড়া ইউনিয়নে ২০টি, গজঘন্টা ইউনিয়নে ১০০ টি, কোলকোন্দ ইউনিয়নে ৪০০টি, আলমবিদিতরে ১৫টি, নোহালী ইউনিয়নে ৩৫০টি ও মর্নেয়া ইউনিয়নে ৪০০টি।

লহ্মিটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল হাদী জানান, বন্যায় ইউনিয়নের উত্তর প্রান্তে (কালীগঞ্জ উপজেলায়) রুদ্রেশ্বর গ্রামে রংপুর-পাটগ্রাম সড়কের প্রায় ১০০ মিটার ভেঙ্গে গেছে। ফলে বুধবার রাত থেকেই সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

আব্দুল্লা আল হাদী আরও জানান, ঘরের আসবাবপত্র বাঁচাতে গিয়ে পানির তোড়ে ভেসে যায় ইচলী গ্রামের সহিদার রহমানের ছেলে নয়া মিয়া (৬৫)। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার বিকেল) তার কোন সন্ধান পাওয়া যায় নি।

কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, বুধবার রাত হতে বন্যার্তদের মাঝে ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রাথমিক হিসেবে বুধবারের (২০ অক্টোবর) বন্যায় উপজেলায় প্রায় এক হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির আম ক্ষেত, ৩০ হেক্টর জমির বাদাম ক্ষেত, ৩৫ হেক্টর জমির মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে।

বুধবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ প্রদান করেছেন রংপুর-১ আসনে এমপি মসিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, গঙ্গাচড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলীমা বেগম। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুনিমুল হক জানান, এখন পর্যন্ত বন্যার ক্ষতি, নদী ভাঙ্গনে বিলীন ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হিসাব পাওয়া যায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App