সড়ক দুর্ঘটনায় গত ছয় বছরে ৪৩ হাজার ৮৫৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ছয় বছরের হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, সড়ককে নিরাপদ করার কোনো প্রতিশ্রুতিই কাজ করছে না।

এ সময় মোজাম্মেল হক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বলেন, সারাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ৬৪ জনের প্রাণহানি হচ্ছে। আহত হচ্ছে ১৫০ এর বেশি।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে দেশে দুর্ঘটনা সংশ্লিষ্ট তথ্য নিয়মিত সংরক্ষণ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল। তাদের হিসাব অনুযায়ী গত ছয় বছরে ৩১ হাজার ৭৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৪৩ হাজার ৮৫৬ জনের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছেন ৯১ হাজার ৩৫৮ জন।

নিরাপদ সড়কের জন্য সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ধারাবাহিকভাবে তিনবারের ক্ষমতাসীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী নানা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলেও তৃতীয় মেয়াদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে রাজধানীর শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশে নজিরবিহীন আন্দোলনের সূচনা করে শিক্ষার্থীরা। তাতে সরকার নতুন করে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তারপরেও পরের বছর দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েই চলেছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭২২১ জনের প্রাণহানি হয়েছিল, ২০১৯ সালে ৭৮৫৫ জনের প্রাণহানি হয়।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের এমইএস এলাকায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব।

এর প্রতিবাদে সারাদেশে আন্দোলনে নেমে ‘বেপোরোয়া চালকের’ মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযোজন করাসহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। ওই বছরের শেষে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকারের মধ্যে নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতিও রাখা হয়। মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিরপত্তার জন্য আন্ডারপাস/ওভারপাস র্নিমাণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় সেখানে।

মোজাম্মেল হক বলেন, ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশব্যাপী লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকার পরও চার হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৬৮৬ জন প্রাণ হারিয়েছে। জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সালকে সড়ক নিরাপত্তা দশক ঘোষণা করে সদস্য দেশগুলোর সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদশ সে অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারেনি।