×

জাতীয়

কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল সন্দেহে কক্সবাজারে একজন গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২১, ১০:৫৮ পিএম

কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল সন্দেহে কক্সবাজারে একজন গ্রেপ্তার

পূজামণ্ডপে হনুমানের পায়ের কাছে কোরআন রেখে গদা নিয়ে ফিরে যাওয়ার ঘটনায় ধর্ম অবমাননায় অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন / ফাইল ছবি

কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল সন্দেহে কক্সবাজারে একজন গ্রেপ্তার
কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল সন্দেহে কক্সবাজারে একজন গ্রেপ্তার
কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল সন্দেহে কক্সবাজারে একজন গ্রেপ্তার

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন রেখে গদা নিয়ে ফিরে যায় ইকবাল হোসেন। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত থেকে আটকের পর।

ইকবাল হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তিনি কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখা ইকবাল হোসেন কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) হাসানুজ্জামান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, রাত পৌনে ১১টার দিকে কলাতলি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে কক্সবাজারের থেকে কুমিল্লা নেওয়া হচ্ছে।

 চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন জানান, পর্যটক বেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল সে।

এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকারের নেতৃত্বে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম কক্সবাজারের উদ্দেশ্য রওনা করেছে। এর আগে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ থেকে অনেকটাই নিশ্চিত হন, কুমিল্লার নানুয়া দীঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখেছিলেন ইকবাল হোসেন নামে এ ক ব্যক্তি।

এর আগে এদিন সন্ধ্যায় কুমিল্লা জেলা পুলিশের ডিআইও (জেলা গোয়েন্দা কর্মকর্তা) মনির আহম্মদ নতুন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ গণমাধ্যমে পাঠান। বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে সংগ্রহ করা ১৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে সেই রাতে ইকবালের ঘোরাফেরার পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে এসেছে। এই ফুটেজের প্রথমে রয়েছে, প্রতিমায় হনুমানমূর্তির গদা আছে। কিন্তু ঘটনার পর (কোরআন রাখার পর) সেটা আর ছবিতে দেখা যাচ্ছে না। পরে হনুমানের পায়ের ওপর কোরআন শরিফ দেখা যাচ্ছে।

নতুন ফুটেজে সেই রাতে কুমিল্লায় ইকবালের ঘোরাফেরার চিত্র

[video width="1280" height="720" mp4="https://www.bhorerkagoj.com/wp-content/uploads/2021/10/99.mp4"][/video]  

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়,  কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার আগে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ান ইকবাল হোসেন। পথে দুজন নৈশপ্রহরীর সঙ্গে দেখা হয়। তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেন। মাজার থেকে কোরআন শরিফ নিয়ে বের হওয়ার আগে মাজারের এক খাদেম ও এক হাফেজের সঙ্গে বসেও ছিলেন তিনি।

এর আগে, বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে প্রথম ফুটেজ পাঠায় পুলিশ। দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন নগরের নানুয়া দিঘির উত্তর পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে ইকবাল হোসেন (৩৫) পবিত্র কোরআন রেখেছিলেন বলে সেই ফুটেজে শনাক্ত করা হয়। ইকবাল নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগরসংলগ্ন দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশের পাঠানো ফুটেজ ও এর বর্ণনায় উল্লেখ আছে, ইকবাল প্রায়ই মাজারে যাতায়াত করতেন। ঘটনার আগের দিনও (১২ অক্টোবর) দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টা ৪২ মিনিটে তাঁকে নগরের দারোগাবাড়ি মাজারে দেখা গেছে। তিনি মাজারে প্যান্ট ও গেঞ্জি পরে ঢুকছেন। ফুটেজে দেখা গেছে, মাজারের খেদমতকারী ফয়সল ও হাফেজ হুমায়ুন মসজিদে প্রবেশ করেন। এরপর ইকবাল মসজিদে প্রবেশ করেন। তিনি তাদের পাশে বসেন। এরপর তিনি মাজারের উত্তর দিকে চলে যান। হাফেজ হুমায়ুন ছিলেন সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা। তিনি আগে মাজার থেকে বের হয়ে যান। পরে খাদেম (কালো পোশাক পরা) ফয়সল বের হন। পরে ইকবাল দানবাক্সের ওপর থেকে কোরআন শরিফ নিয়ে মেঝেতে বসেন। এরপর কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে মাজারের উত্তর পাশের সড়ক দিয়ে চলে যান।

পরে তিনি চকবাজার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক মোড় ঘুরে পূজামণ্ডপের দিকে রওনা হন। এ সময় তার সঙ্গে দুজন নৈশপ্রহরীর দেখা হয়। তাদের সঙ্গে ইকবালের কথাও হয়। এরপর ইকবাল কোরআন হাতে নিয়ে ডিগাম্বরীতলা সড়ক দিয়ে নানুয়া দিঘির পূজামণ্ডপে প্রবেশ করেন। পরে মূল পূজামণ্ডপের বাইরে সড়কের পাশে থাকা ফুটপাতের ওপর সীতার তিনটি প্রতিমার পাশে থাকা হনুমানের প্রতিমার পায়ের ওপর কোরআন রাখেন। এরপর হনুমানের হাতে থাকা গদা কাঁধে নিয়ে চলে যান।
[caption id="attachment_313961" align="aligncenter" width="700"] হনুমান ঠাকুরের গদা হাতে ও গদা শূন্য হনুমান ঠাকুর।[/caption]
পুলিশ বলছে, ইকবাল দারোগাবাড়ি মসজিদ ও মাজার থেকে কোরআন হাতে নিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তারপর পূজামণ্ডপে রাখেন। স্থানীয়রা বলছেন, নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগরসংলগ্ন দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা।

ইকবালের পরিবারের দাবি, তিনি কখনো বাসচালকের সহকারী, কখনো রংমিস্ত্রির কাজ করেন। বিয়ে করেছেন দুটি। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ বছর আগে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। সেই সংসারে তাঁর এক ছেলে আছে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে গেছেন। এ সংসারে তাঁর একটি মেয়ে আছে। গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ইকবালের বাবা নুর আহমেদ আলম, মামা তাজুল ইসলাম ও ভাই সাফায়েত হোসেনকে পুলিশ নিয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, ইকবাল হোসেন মাদকাসক্ত। মাদকের টাকার জন্য পরিবারের সদস্যদের যন্ত্রণা করতেন তিনি। ইকবালের মূল বাড়ি ছিল তেলিকোনা এলাকায়। ওই এলাকার ভিটাবাড়ি বিক্রি করে তাঁরা ভাড়া থাকেন দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুরপাড় এলাকায়। নুর আহমেদ আলম ও বিবি আমেনা বেগমের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ইকবাল হোসেন সবার বড়।

[caption id="attachment_314134" align="aligncenter" width="700"] ইকবালের ঘোরাফেরার ভিডিও ফুটেজ থেকে সংগৃহীত।[/caption]

উল্লেখ্য, কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে হনুমানের মূর্তির ওপর পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। ওই মণ্ডপের পাশাপাশি আক্রান্ত হয় নগরীর আরও বেশ কিছু পূজামণ্ডপ। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App