×

সারাদেশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের সরকারি গাছ বিক্রি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২১, ০৭:৫৪ পিএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের সরকারি গাছ বিক্রি

সরজন জোড় পাইকড়তলা মোড়ে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র গাছ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও একজন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। তারা ওই ইউনিয়নের সরজন জোড় পাইকড়তলা মোড়ে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র গাছ বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে।

একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, সরজন জোড় পাইকড়তলা মোড়ের তিনটি কড়ই গাছের কাঠ ও খড়ি বিক্রি করেছেন তারা। গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসজাদুর রহমান মান্নু মিয়ার নির্দেশে এক নং ওয়ার্ড সদস্য মশিউর রহমান সান্তাজুল এসব গাছের কাঠ ও খড়ি বিক্রি করেছেন। এ ঘটনা জানার পর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন এবং রাস্তার ধারের গাছগুলোর মালিকানা বিএমডিএ’র আওতাধীন নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১০ দিন আগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কারণে গাছগুলো কেটে রেখে যায়। এরপর গাছের ডালপালাগুলো রাস্তার ধারেই পড়েছিল। পরে চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে সেগুলো বিক্রি করেন ইউপি সদস্য মশিউর রহমান সান্তাজুল।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা গরিবুল্লাহ (৫০) বলেন, কয়েকদিন আগে সরকারি কারেন্টের লোকজন (বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীরা) গাছগুলো এসে কেটেছে। শুনলাম কারেন্টের তারের নাকি অসুবিধা হচ্ছিলো তাই কেটেছে। কিন্তু তারা সরকারি লোক হলেও কয়েকদিন পড়ে থাকা কাটা গাছগুলো নিয়ে যায়নি। আর গত সোমবার (১৮ অক্টোবর) থেকে শ্রমিকরা গাছগুলো কাটা শুরু করেছে এবং গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে।তাদেরকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, তারা নাকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছ থেকে গাছগুলো কিনে নিয়েছে।

এ বিষয়ে কাঠ ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রায় চার দশকের বেশি বয়সের তিনটি কড়ই গাছের মোটা ডাল ও খড়ির বাজার মূল্য অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু পানির দামে মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকায় গাছের কাঠ ও খড়ি কিনে নিয়েছেন একই ইউনিয়নের সরজন গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী কবির আলী। আর বিএমডিএ’র কোনরকম অনুমতি বা যোগাযোগ ছাড়াই এসব কাঠ ও খড়ি বিক্রি করেছেন ইউপি সদস্য।

ইউপি সদস্যের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা বায়না (প্রাথমিক জামানত) দিয়ে গাছগুলো উঠিয়ে নিয়ে যাবার কাজ শুরু করেছিলেন কবির আলী। তিনি বলেন, কার গাছ বা গাছের মালিককে এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন গাছগুলো কেটে রেখে যাবার পর গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসজাদুর রহমান মান্নু মিয়ার সাথে কথা বলে মশিউর রহমান মেম্বার আমার কাছে কাটা গাছ বিক্রি করেছে। প্রথম দিনে একটি গাছের ৪৪ মণ খড়ি পাঠিয়েছি। আর বাকি খড়ি ও কাঠ পড়ে আছে। যা আজকে নিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে কবির আলীর নিয়োজিত এক শ্রমিক জানান, প্রথম দিন বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনের উপস্থিতিতে গাছগুলো আমরাই কেটেছিলাম। পরে কয়েকদিন পড়ে থাকার পর মেম্বার-চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আমাদের মহাজন গাছগুলো কিনে নিয়েছে। রাস্তার ধারের গাছগুলো কার এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, গাছগুলো সরকারি, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু চেয়ারম্যান-মেম্বারের থেকে কিনে নিয়েই কাটা গাছগুলো উঠানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান সান্তাজুল জানান, আমি সরকারি লোক। সরকারি গাছ কেটেছি। যার যা ইচ্ছে করবে। চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেই গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে।

আর ইউপি চেয়ারম্যান আসজাদুর রহমান মান্নু মিয়া বলেন, বিএমডিএ’র গাছগুলো আমরা বিক্রি করেছি। সেখান থেকে যা অর্থ আসবে ইউনিয়ন পরিষদের কোষাগারে জমা করা হবে। বিএমডিএ’র অনুমোদন নিয়ে বিক্রি করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি গাছ বিক্রি করেছি। এতে আমার নামে মামলা হলে সেখানে মোকাবেলা করবো।

এদিকে মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র সহকারী প্রকৌশলী আবু শাদাত মোহাম্মদ সায়েম। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিশ্চিত হয়েছি গাছগুলো বিএমডিএ’র। বৈদ্যুতিক তার সংযোগ দেয়ার জন্য গাছগুলো কাটা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ না করে বা কোন অনুমতি ছাড়াই পড়ে থাকা গাছগুলো বিক্রি করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য। এর বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App