×

মুক্তচিন্তা

অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২১, ০৬:১২ এএম

চলতি সময়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সম্প্রীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাদের খারাপ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজামণ্ডপে মুসলমানদের পবিত্র কুরআন রেখে দেশে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। যারা এই ঘৃণিত কাজের সঙ্গে জড়িত তারা আসলে দুটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেয়ে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি করছে তা হলো দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে দেয়া। কারণ ঘন ঘন সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশটির আকর্ষণ হারায়। ব্লুমবার্গের একটি নিবন্ধে, দক্ষিণ এশিয়ার কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের সিনিয়র ফেলো অ্যালিসা আয়রেস, একটি স্বাধীন মার্কিনভিত্তিক থিংক-ট্যাংকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এই দৃষ্টিভঙ্গিকে দৃঢ় করে তোলে যে, একটি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো হুমকির মুখে। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) একটি শক্তিশালী অস্ত্র এবং দারিদ্র্য বিমোচন লক্ষ্যসহ দেশের আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের মূলধন গড়ে তোলা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, উৎপাদনক্ষমতা বিকাশ, প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে স্থানীয় শ্রমের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। বিদেশি বিনিয়োগ আমাদের দেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। বিদেশি বিনিয়োগ ধরে রাখার জন্য আমাদের দেশের জনগণকে সচেতন হতে হবে, কারণ দেশের ভেতর অভ্যন্তরীণ কোন্দল হিংসাত্মক ও নৈরাজ্যকর অবস্থা থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে নেয়। যেমন- যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যবিরোধ এবং হংকংয়ের ওপর চীনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের কারণে এশিয়ার বাণিজ্যিক কেন্দ্র হংকং থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন। অনেক বৈশ্বিক কোম্পানি তাদের প্রধান কার্যালয় সিঙ্গাপুরে সরিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপিতে বৈদেশিক বিনিয়োগের অবদান ১ শতাংশের কাছাকাছি। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) যদি ৫ থেকে ৬ শতাংশে উন্নীত করা যায়, তাহলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ। দেশকে কাক্সিক্ষত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে আমাদের সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে, যেন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কোনো উন্মাদনা না ছড়ায় দেশে। কারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেকটা নির্ভর করে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার ওপর। দেশে যদি অনুকূল পরিবেশ না থাকে তবে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ বন্ধ করে দেন। কারণ দেশে অভ্যন্তরীণ সমস্যা বিরাজ করলে তার ব্যবসা লোকসানসহ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের মঙ্গলের জন্য আমাদের সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। উন্নত জাতি গঠনের জন্য প্রয়োজন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতা, তাছাড়া আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দীনতা ঘুচবে না। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে আমাদের জাতিসত্তাকে বহির্বিশ্বের কাছে একটি শান্তিপ্রিয় ও শৃঙ্খল জাতি হিসেবে তুলে ধরতে হবে, যেন সারা বিশ্বের সব দেশের মানুষ আমাদের সৌজন্যতার জন্য শ্রদ্ধা করে ভালোবাসে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কিছু চিন্তা-ভাবনা না করে কিছু স্বার্থান্বেষী, বকধার্মিক মানুষ যে অস্থিরতা ও নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে তা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। কারণ এখন ধার্মিক যে ধর্মের হোক তারা অন্য ধর্মকে ছোট করে দেখবে না। অন্যের ক্ষতি ও অমঙ্গল হোক এমন কাজ করবে না। একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে যে কোনো বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ ও মন্তব্য করার আগে সেটি কতটুকু মানবিক ও দেশের জন্য মঙ্গলজনক তা চিন্তা করা। আসাদুজ্জামান বুলবুল শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App