×

মুক্তচিন্তা

সংকটের মুখে মানবস্বাস্থ্য

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২১, ০১:১৫ এএম

পরিবেশ নোংরা ও ধ্বংস করার সবচেয়ে সহজ এবং ভয়ংকর উপাদান হলো প্লাস্টিক। এক কথায় বর্তমান সময়ে পরিবেশ দূষণের জন্য যেসব কারক দায়ী তার মধ্যে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সারাবিশ্বের কাছে মাথাব্যথার গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত প্লাস্টিকের ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে মানবজীবন। খাবার রাখার পাত্র থেকে পানি রাখার বোতল পর্যন্ত সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে নানা প্রকার বিষ। ফলে অল্প বয়সে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুরোগসহ নানা প্রকার রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবজাতি অস্বাভাবিক মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে। এ প্লাস্টিক থেকেই বায়ুমণ্ডলে মিশে যাচ্ছে কার্বন-ডাই অক্সাইডের চেয়েও বেশি গেøাবাল ওয়ার্মিং বাড়ানো ক্ষমতাশালী গ্যাস মিথেন। ফলে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের বহুল ব্যবহার ও লাগামহীনভাবে বেড়ে চলা দূষণ বিশ্ব উষ্ণায়নেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বায়ুমণ্ডল এবং প্রাণী জগতেও। তাই প্লাস্টিকের দূষণ কমাতে ও রোধ করতে সারা বিশ্বের পরিবেশ আন্দোলনকারীরা বারবার দাবি তুলছেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগমুক্ত দিবস উপলক্ষে এসডো আয়োজিত ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বিভিন্ন দেশের গবেষকরা একটি তথ্য তুলে ধরেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৫ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার হয়। প্রতি সেকেন্ডে যার সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার। অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তি বছরে ৭০০টিরও বেশি প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করেন।’ পরিবেশ বিজ্ঞানীরা যা মানবজাতির অনাগত ভবিষ্যতের চরম সর্বনাশের কথা আগাম জানিয়ে দিচ্ছেন। তারপরও মানুষ সতর্ক হচ্ছেন না। প্রতিদিন জঞ্জাল হিসেবে ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি নালা-নর্দমায় পড়ে পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে বন্যার সৃষ্টি হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরে তো বৃষ্টি হওয়া লাগে না, জোয়ারের পানিতেই নালা-নর্দমার নোংরা পানি জমে মানুষের দুরবস্থা সৃষ্টি করে। কেননা অপচ্য পদার্থ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এ প্লাস্টিক এমন এক রাসায়নিক পদার্থ, যা পরিবেশে সহজে পচে না এবং পুনঃচক্রায়ন হতেও যথেষ্ট সময় লাগে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, পৃথিবীর প্রথম তৈরি প্লাস্টিকটি আজো পচেনি। ক্লোরিনযুক্ত প্লাস্টিক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে ভূগর্ভস্থ পানি ও ভূপৃষ্ঠের পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে আমাদের খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ে, যাতে মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ প্লাস্টিক বেশকিছু যৌগের পলিমার রূপ। প্লাস্টিকে ব্যবহৃত যৌগগুলো মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া তৈরি করে। আবার সমুদ্রের পানিতে মিশে প্লাস্টিক সামুদ্রিক প্রাণীর মারাত্মক ক্ষতি করছে। এতে সমুদ্র দূষণে ও এসব বর্জ্য খাবার হিসেবে গ্রহণ করায় বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে জলজ প্রাণীগুলো মারা যাচ্ছে। ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর একটা জাতীয় দৈনিকের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত হয়, স্পেনের মাদ্রিদে জলবায়ু সম্মেলন চলাকালে সমুদ্রের দূষণের কবলে পড়ে মারা যায় এক বিশাল তিমি, যা স্কটিশ আইল্যান্ডের হ্যারিসে ভেসে উঠে ও যার পেট ছিঁড়ে পাওয়া যায় ১০০ কেজি আবর্জনা। যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জাল, দড়ি, ব্যাগ ও প্লাস্টিক কাপ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ পরিমাণ ময়লা পেটে থাকা ও সমুদ্রের দূষণের কারণে তিমিটি মারা যায়। এছাড়া সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রধান খাদ্য হলো জেলিফিশ। আর জেলিফিশ দেখতে অনেকটা পলিথিনের মতো। তাই জেলিফিশ মনে করে পলিথিন খেয়ে ও দূষণের কবলে পড়ে প্ল্যাঙ্কটন নষ্ট হওয়ায় খাদ্যাভাবে পড়ে প্লাস্টিক বর্জ্য খেয়ে খাদ্য নালিকা বন্ধ হয়ে প্রচুর পরিমাণে কচ্ছপসহ সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে বলে দাবি করেন সামুদ্রিক বিজ্ঞানীরা। তাই প্লাস্টিকের এমন দূষণ থেকে মুক্তি লাভের জন্য বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে আমেরিকা, কানাডাসহ ইউরোপিয়ান দেশগুলো বাচ্চাদের বোতল ও কাপে বিপিএ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সরকারের ‘খাবার জল ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা’ মন্ত্রণালয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগকে খাবার জল প্রদানে প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার বন্ধ করে প্লাস্টিক বর্জ্য বৃদ্ধি করে না, এমন উপায়ে খাবার জল প্রদান করতে অনুরোধ করেছেন। আমাদের দেশেও প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে সরকারি প্রচার-প্রচারণা চলছে। কিন্তু জনগণের সচেতনতার অভাবে এবং পাটের ব্যাগ সহজলভ্য ও দামে সহজ না হওয়ায় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সুতরাং স্থলজ-জলজ জীবজগত, উদ্ভিদ জগতের বিপন্নতা রক্ষার্থে প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা ও বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে সহজলভ্য করে সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যেতে পারে।

গোপাল নাথ বাবুল  : দোহাজারী, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App