×

জাতীয়

পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লীতে হামলা-আগুন: সবার মধ্যে এখন আতঙ্ক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০২:৩০ পিএম

পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লীতে হামলা-আগুন: সবার মধ্যে এখন আতঙ্ক

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লীতে আগুন দেওয়ার পরদিন আগুনে ছাই হয়ে যাওয়া ঘরের দিকে কান্নারত এক নারীর পাশে আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে আছেন অপরজন। ছবি: সংগৃহীত

পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লীতে হামলা-আগুন: সবার মধ্যে এখন আতঙ্ক

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড়করিমপুর গ্রামের সবার চোখে-মুখে এখন আতঙ্কের ছাপ। গ্রামটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা।

গতকাল রবিবার (১৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বসত বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করার পর থেকে বাসিন্দারা আতঙ্কে সময় পার করছেন। আগুনে পুড়ে গেছে ২৬টি বাড়ির সবকিছু। হামলাকারীরা লুট করে নিয়ে গেছে টাকা-পয়সা, সোনা, গরুসহ ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র। এ পর্যন্ত ঘটনার মূল হোতাসহ ৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা বাড়ি-ঘর হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে একটি মন্দিরে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাশের মাঝিপাড়া গ্রামের পরিতোষ রায় নামের এক কিশোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে একদল লোক সেখানে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করেন। ঘটনা আঁচ করতে পেরে সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে পুলিশ মাঝিপাড়া গ্রামের পরিতোষের বাড়িসহ আশপাশের বাড়িতে নিরাপত্তা দেয়। তখন উত্তেজিত শত শত লোক ওই গ্রামের পাশের বড়করিমপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন।

স্থানীয় একজন জানান, ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে বসতবাড়িতে ঢুকে দুর্বৃত্তরা গ্রামজুড়ে তাণ্ডব চালায়। এসময় তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে মারধর করে, হুমকি দেয়, অকথ্য ও আপত্তিকর ভাষায় গালাগাল করে। প্রাণ বাঁচাতে নারী, পুরুষ ও শিশুরা বাড়ি ছেড়ে পাশের ধানক্ষেতে আশ্রয় নেয়। দুর্বৃত্তরা তখন একের পর এক বাড়ি আগুন ধরিয়ে দেয়।

অপর এক ভুক্তভোগী জানান, হামলাকারীরা গ্রামের বসতবাড়িতে ঢুকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তান্ডবলীলা চালালেও পুলিশের ভূমিকা দৃশ্যমান ছিল না। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর পুলিশ গ্রামে গেলে ধান খেতে আশ্রয় নেয়া লোকজন বাড়িতে ফেরেন।

রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিশ্বাস জানান, দুর্বৃত্তরা যখন মাঝিপাড়া গ্রামে হামলা চালোনোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়, তখন আশপাশের গ্রাম থেকে কিছু মানুষ এসে তাদের উপর হামলা করে তাদের বাড়ি-ঘর, সোনাদানা, টাকা-পয়সা, গরু-ছাগলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।

[caption id="attachment_313481" align="alignnone" width="720"] রবিবার রাতে হামলার পর আশ্রয়হীন নারী শিশু বসে আছেন খোলা আকাশের নিচে। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

যারা এঘটনা ঘটিয়েছে তাদের মধ্যে নেতৃত্বদানকারী ২০ জনকে আমরা চিহৃত করতে পেরেছি। এছাড়া সকালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হিন্দু পরিবারগুলোর মাঝে চাল, কম্বল, শাড়ি বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে, বিভিন্ন মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে সোমবার সকালে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই সমাবেশে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ, সনাতন সংঘ, ইসকনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারা মন্দির ভাঙচুর, হামলা ও অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা করে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। পরে একটি মিছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App