×

জাতীয়

৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখন জাতীয় দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২১, ০৮:০০ পিএম

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতির মতো বিষয়গুলোতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে আসে। ‘বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ এখন জাতীয় দাবি। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে নির্মূল কমিটির সহযোগিতায় কাজ করলে এই দাবি পূরণ হবে বলে আমি আশা করি। শনিবার (১৬ অক্টোবর) একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং পাকিস্তানি গণহত্যাকারীদের বিচার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, আমাদের দূতাবাসগুলো বাংলাদেশের একাত্তরের গণহত্যার নৃশংসতা, ভয়াবহতা বহির্বিশ্বের নিকট তুলে ধরার কাজে সর্বদা নিয়োজিত। তারপরও আমাদের ত্রুটি বিচ্যুতি আছে। সরকারের বিচ্যুতি ও ভুল-ভ্রান্তি তুলে ধরার ক্ষেত্রে নির্মূল কমিটি তার ভূমিকা সাফল্যের সঙ্গে পালন করছে। আমরা বিশ্বাস করি, যে জাতি তার ইতিহাসকে লালন করে না, সে জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। যে চার মূলনীতির ভিত্তিতে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, এগুলোর একটি থেকেও বিচ্যুত হলে আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারব না। জাতির পিতার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তোলার চেষ্টায় অঙ্গীকারবদ্ধ।

নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সর্বইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সভাপতি মানবাধিকার নেতা তরুণকান্তি চৌধুরী, প্রজন্ম ’৭১-এর সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, নির্মূল কমিটির সুইজারল্যান্ড শাখার সভাপতি খলিলুর রহমান, নির্মূল কমিটির অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডা. একরাম চৌধুরী, নির্মূল কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার নির্বাহী সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম, নির্মূল কমিটির বেলজিয়াম শাখার সাধারণ সম্পাদক আনার চৌধুরী, দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার সাংবাদিক আবু সালেহ রনি, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার সাংবাদিক আরাফাত মুন্না, ৭১ টিভির বিশেষ প্রতিনিধি সাংবাদিক মিল্টন আনোয়ার, দৈনিক ভোরের কাগজের ডেপুটি চিফ রিপোর্টার সাংবাদিক ঝর্ণা মনি এবং নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।

নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, এ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালে আমাদের মনে রাখতে হবে ২০২১ সাল বাংলাদেশের গণহত্যারও ৫০ বছর। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির কারণে বর্তমান সরকার ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিলেও বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি, যা গণহত্যাকারীদের বিচারের জন্য অত্যন্ত জরুরি। নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে আমরা গত ১৫ বছর ধরে দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি এবং গণহত্যাকারীদের বিচারের জন্য আন্দোলন করছি। মুক্তিযুদ্ধকালে ভারত ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সরকার, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার ভয়বতা ও ব্যাপকতা তুলে ধরে এর প্রতিবাদ করেছেন। নির্মূল কমিটি ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে সব সংগঠন ও ব্যক্তি কাজ করছেন তারাও বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়টি তুলে ধরে গণহত্যাকারীদের বিচারের পক্ষে জনমত সংগঠিত করছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগহীনতা দুর্ভাগ্যজনক।

মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না যে, ৭১’ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস সময় পাকিস্তানি হানাদার এবং তাদের বাঙালি দোসররা যে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ অন্যান্য নির্যাতন চালিয়েছিল তা এমন কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার চেয়েও প্রকট ছিল। আমাদের স্বাধীনতার পর পর চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ পাকিস্তানের পক্ষ নেয়ায় বাংলাদেশের গণহত্যা এখনো জাতিসংঘে স্বীকৃতি পায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমাদের এই দাবি নিয়ে নতুন করে এগুতে হবে, যার জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক লবি। এ বিষয়ে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App