পূজামণ্ডপে হামলা: চৌমুহনীতে আরও এক লাশ উদ্ধার, বিক্ষোভ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২১, ০৩:৫৫ পিএম
শনিবার সকালে মিছিলটি চৌমুহনীর কলেজ রোড়স্থ ইসকন মন্দির থেকে বের হয়ে হোসেন মার্কেটের সামনে এসে শেষ হয়। ছবি: ভোরের কাগজ
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল
কুমিল্লার জের ধরে নোয়াখালীর বানিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার পর দিন প্রান্ত চন্দ্র দাস (২৫) নামে আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে ইসকন মন্দিরের পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। দুপুরের দিকে নিহতের লাশ পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
এর আগে ঘটনার দিন শুক্রবার দুপুরে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে মন্দির ও বাড়িঘরে সহিংসতার ঘটনায় আতংকিত হয়ে হার্ট এ্যাটাকে যতন কুমার সাহা (৪২) নামের একজন নিহত হন। পুলিশ সদস্যসহ আহত হয় অর্ধশতাধিক লোক। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রান্ত চন্দ্র দাসের লাশ নিয়ে একটি মিছিল চৌমুহনীর কলেজ রোড়ের ইসকন মন্দির থেকে বের হয়ে হোসেন মার্কেটের সামনে এসে শেষ হয়। তারপর হোসেন মার্কেটের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত ছিলো। এসময় মিছিলকারীদের লাঠি চার্জ করেও থামাতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নিহত প্রান্ত চন্দ্র দাস চাটখিল উপজেলার শ্যামপাড়া গ্রামের নকুল চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি চৌমুহনীর কলেজ রোড়ের ইসকন মন্দিরের সদস্য ছিলো।ইসকন চট্টগ্রামের বিভাগীয় সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী বলছেন যারা মরদেহ পাওয়া গেছে তার নাম প্রান্ত চন্দ্র দাস। তিনি গতকাল সংঘর্ষের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন।
চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী বলেন, ছেলেটিকে আমরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না, রাতে অনেক খুঁজেছি, জলাশয়ে খুঁজেছি। যেহেতু ছেলেটাকে আগেই মেরে ফেলা হয়েছে কোপ দিয়ে, প্রচণ্ড আঘাত করা হয়েছে। সকালের দিকে তার লাশটা ভেসে উঠে। পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস এসে উদ্ধার করে।
তবে পুলিশ বলছে, মৃতদেহ উদ্ধার করা হলেও, তিনি হামলায় মারা গেছেন কিনা, তা ময়না তদন্তের পর নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান শিকদার বলেন, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল ও বিক্ষোভ করছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
এদিকে শনিবার বেলা ১২টার দিকে চৌমুহনীতে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব প্রাপ্ত) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির নেতৃত্বে এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক খায়রুল আনম সেলিম, যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন ও শহিদ উল্যাহ খান সোহেল উপস্থিত ছিলেন।
[caption id="attachment_313122" align="aligncenter" width="700"] প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ করায় মিছিলকারীদের লাঠি চার্জ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী[/caption]অপরদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। তিনি সনাতন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস প্রদান করেন।
নোয়াখালী পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কিশোর চন্দ্র শীল জানান, সম্প্রীতি বজায় রাখতে বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল, ডিআইজি, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতবৃন্দের ব্যাপক আলোচনা হয়।
ইসকন মন্দিরের প্রভু গোবিন্দ দাস বলেন, গতকাল যে হামলা চালানো হয়েছে তখন প্রান্ত চন্দ্র দাসকে মেরে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা রাত ১২ টার পর পুকুরে তাকে অনেক খোঁজাখুজি করেছি। কিন্তু সকাল ৭ টার দিকে তার মরদেহ ভেসে উঠে।
হিন্দু- বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট নোয়াখালীর সভাপতি রনি চৌধুরী ইমন জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রশাসনের দায়ের করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ইসকন ভক্ত প্রান্ত চন্দ্র দাসের লাশ নিয়ে নোয়াখালী-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার সুষ্ঠ বিচার না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, চৌমুহনীর আইনশৃঙ্খলা বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইসকন মন্দিরের পুকুর থেকে উদ্ধারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতনকে জানিয়েছি। দুপুরের দিকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ ঢাকায় আজ বিকেলে বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। পরিষদের একজন নেতা অসিম কুমার রায় বলেন হামলা-ভাঙচুরের প্রতিবাদ এবং প্রকৃত অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার জন্য তারা এই সমাবেশ করেছেন।
অসিম কুমার রায় বলেন, আমরা শান্তিপ্রিয় লোক। তবে এই ঘটনার প্রকৃত অপরাধী যে সে যে ধর্মেরই হোক তার বিচার হওয়া উচিত। ইতিমধ্যে উৎঘাটন হয়েছে যে এটা একটা পরিকল্পিত ঘটনা। কিন্তু এটার সঠিক বিচার হবে কিনা আমাদের মধ্যে সন্দেহ আছে।