×

জাতীয়

ওয়াসা কর্মচারী সমিতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২১, ০৬:০৯ পিএম

ওয়াসা কর্মচারী সমিতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

শনিবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ অভিযোগ তুলেন ‘ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর একাংশ। ছবি: ভোরের কাগজ

ওয়াসা কর্মচারী সমিতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

শনিবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ অভিযোগ তুলেন ‘ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর বর্তমান কমিটি। ছবি: ভোরের কাগজ

ওয়াসা কর্মচারী সমিতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

শনিবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ অভিযোগ তুলেন ‘ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর বর্তমান কমিটি। ছবি: ভোরের কাগজ

ঢাকা ওয়াসার কর্মচারী সমিতির ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছে ‘ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর বর্তমান কমিটি। এদিকে সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত হয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনকারীদের অবৈধ বলে দাবি করেছেন আগের কমিটির কয়েকজন। এ সময় দুপক্ষ বাকযুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ে।

শনিবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর একাংশ।

এই কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আতাউল করিম ও সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন সরকার। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা দাবি করেন, ঢাকা ওয়াসার কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডে সংগঠিত বিভিন্ন অনিয়ম ও সমিতির ১৩২ কোটি টাকা ঢাকা ওয়াসারই কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আত্মসাত করেছেন। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নির্বাচিত কমিটি ১০ মাসেও দায়িত্ব বুঝে পায়নি বলে অভিযোগ করেন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনকারীরা।

এদিকে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় এ নির্বাচন আয়োজনে আপত্তি ছিল ওয়াসা কর্তৃপক্ষের। এ বিষয়ে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর এক অফিস আদেশ জারি করে ঢাকা ওয়াসা।

ওই আদেশে জানানো হয়, কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে ওই বছরের ১ ডিসেম্বর ওয়াসা একটি অফিস আদেশ জারি করেছিল। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে কর্মচারীরা এক কক্ষে ২০-৩০ জন অবস্থান করছেন। যা ওয়াসার ওই অফিস আদেশের পরিপন্থি।

ওয়াসা সচিব প্রকৌশলী শারমিন হক আমীর স্বাক্ষরিত ২৪ ডিসেম্বরের ওই অফিস আদেশে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধে এবং ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহের মত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সব রকমের সভাসমাবেশ/নির্বাচন/জমায়েত/নির্বাচনী প্রচারণা/ভোটদান হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হল। অন্যথায় উক্ত আদেশ প্রতিপালনে ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে এই অফিস আদেশ অমান্য করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনকারীদের ভাষ্যমতে, নির্বাচনের পর পর্যায়ক্রমে নির্বাচিত কমিটির ১০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

যদিও সংবাদ সম্মেলনে নতুন কমিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতার জন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ধন্যবাদও জানিয়েছে। আবার নির্বাচন করার কারণে করা বিভাগীয় মামলা ও কারণ দর্শানোসহ অন্যান্য নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা তুলে নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। আর ওয়াসার কাছ থেকে সমিতির প্রাপ্ততা আগামী এক মাসের মধ্যে ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করেছে নতুন কমিটি।

ওই নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট পড়েছিল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি সংবাদ সম্মেলন আয়োজনকারী কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক। কমিটির সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমরা এ দিকে যাব না।’

এ সময় সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত সাবেক কমিটির একজন বলে ওঠেন, ‘এটা তো কোনো নির্বাচনই হয় নাই। ভোট পড়েছে অনলি টু পারসেন্ট (মাত্র দুই শতাংশ)।’

লিখিত বক্তব্যে নতুন কমিটি বলছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সমবায় অধিদপ্তর থেকে সমিতির ২০১৮-২০২০ সময়কালের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ১৬/০৭/২০১৭ তারিখ হতে ৩০/০৬/২০১৮ তারিখ পর্যন্ত চুক্তি মোতাবেক পিপিআই নামীয় প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা হতে রাজস্ব আদায়ে ঠিকাদারি বিল বাবদ সমিতি সর্বমোট ৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ১৭৩ টাকা এবং এ বিপুল পরিমাণ অর্থ থেকে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে হিসাব বিবরণীতে মাত্র এক কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৩ টাকা হিসাবভূক্ত করা হয়।

গত কমিটির অর্থ আত্মসাতের হিসাব দিয়ে তারা বলেন, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থ বছরের অবশিষ্ট ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকার কোনো হিসাব নেই। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ সমিতির তৎকালিন অবৈধ ব্যবস্থাপনা কমিটির হাফিজ উদ্দিন, আতাউর রহমান মিয়া ও বাতিলকৃত ব্যবস্থাপনা কমিটির মো. আক্তারুজ্জামান, মো. জাকির হোসেন এবং পিপিআই পরিচালনা পর্ষদ হাফিজ উদ্দিন, মিঞা মো. মিজানুর রহমান, মো. আক্তারুজ্জামান, মিঞা মো. মিজানুর রহমান গং বিধি বহির্ভূত ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে খরচ ও আত্মসাৎ করেছেন। বর্ণিত কমিটি ও পরিচালনা পর্ষদ গং কর্তৃক ২০১৬ সাল হতে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচন পূর্ব পর্যন্ত সময়ে সমিতি ও পিপিআই প্রকল্প নামীয় বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হিসাব হতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত ব্যতীত প্রায় ৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। যার হিসাবও পাওয়া যায়নি বলে অডিট রিপোর্টে ওঠে এসেছে।

বর্তমান কমিটির দাবি, সাবেক কমিটির নেতারা এই টাকা লোপাট করেছেন। ওয়াসা কর্তৃপক্ষও বর্তমান কমিটিকে ওয়াসা ভবনে বসতে দেয় না। তাদের বারবার আবেদনের বিষয়েও কর্ণপাত করছে না ওয়াসা। সমিতির ২০০ কোটি টাকা মূল্যমানের সম্পদ ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দখলে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

তবে তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনকারীরা।

সংবাদ সম্মেলন শেষে সাবেক ও বর্তমানদের কয়েকজন বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় সাবেক কমিটির কয়েকজন জানান, তাদের কাছে এ বিষয়ক বেশ কিছু কাগজপত্র রয়েছে। যা নিয়ে শিগগিরই তারাও গণমাধ্যমের সামনে আসবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App