×

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালো উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী: রানা দাশগুপ্ত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১২:২৮ এএম

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালো উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী: রানা দাশগুপ্ত

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে যা বলেছেন তার প্রতি যেনো বৃদ্ধাঙ্গুলিই প্রদর্শন করল শুক্রবার চট্টগ্রাম ও চৌমুহনীর ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলো। উগ্রবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠীর এই যে আস্ফালন তা আমাদের রাষ্ট্রব্যাবস্থা ও সংবিধানকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে বলেই মনে করি। পাশাপাশি শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর জে এম সেন হলে পূজামণ্ডপে প্রকাশ্য দিবালোকে এমন হামলায় মনে হচ্ছে- বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সত্য, কিন্তু এখনো পাকিস্তানিদের সেই প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভোরের কাগজের সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গেই এমন মন্তব্য করেন।

ভোরের কাগজ: যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে এত আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশের সৃষ্টি হোলো সেখানে স্বাধীনতার ৫০ বছর পুর্তিতেও এমন ঘটনা কেন ঘটছে বলে মনে হয় আপনার?

রানা দাশগুপ্ত: দুঃখ তো সেখানেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে যুক্ত হলো। তাও আবার নানাভাবে কাটাছেড়া করে এক ধরনের সংবিধান চলছে আমাদের। যেখানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামও আছে, আবার অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতাও সংবিধানও রয়েছে। বিষয়টিতো স্ববিরোধী। যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র তার সংবিধানকে যথাযথভাবে রক্ষা করবেনা বা সংবিধানকে নানাভাবে ব্যবহার করবে ততদিন পর্যন্ত এমন বিষয়গুলো ঘটতেই থাকবে। কারন বাংলাদেশ স্বাধীন হলো ঠিকই, কিন্তু একদম হাতেগোনা দুই-একটি উদাহরণ ছাড়া আর কোন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার হয়নি। এই যে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চলছে তা থেকে বের হতে না পারলে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধ হবেনা। চট্টগ্রামের উদাহরনই বলি- সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর না কি পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন ‘আপনারা কোন চিন্তা করবেন না, আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। ‘তো সেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার নমুনা কি তাতো চট্টগ্রামবাসী শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে দেখেছে। জিমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ থেকে নানা ধরনের শ্লোগান দিয়ে মিছেল বের হলো। কিন্তু তাতে কোন বাধা দেয়া হলো না। রহস্যজনকভাবে কোন পুলিশকে সেখানে দেখা গেলোনা। হামলাকারীরা নির্বিঘ্নে মিছিল নিয়ে জেএমসেন হলে হামলা চালাল, হামলা করে চলে গেলো। এর মধ্যে হামলাকারীরা পূজার তোড়ন ভাঙলো, ব্যানার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেললো, মণ্ডপে ইট পাথর নিক্ষেপ করলো। এই যদি পুলিশ প্রশাসনের ভুমিকা হয় তাহলে বাংলাদেশে বার বার এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

ভোরের কাগজ: ওই যে আপনি দায়মুক্তির কথা বলছিলেন, বিষয়টি আরেকটু যদি বলতেন..

রানা দাশগুপ্ত: দায়মুক্তির সংস্কৃতি এজন্যই বলছিলাম যে, ১৯৭২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত যতগুলো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে সেগুলোর তো কোন বিচার হয়নি সেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আমল থেকেই। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ৭২ এর অক্টোবর মাসে এই শারদীয়া দুর্গাপুজাতেই চট্টগ্রাম নগরীতেই অন্তত ১৫ টি পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করলো, জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মনোরঞ্জন ধর-এর ময়মনসিংহের বাড়ির পুজা মণ্ডপেও ভাঙচুর হোলো। কিন্তু কোন মামলা, গ্রেপ্তার, বিচার হলোনা। আমার স্পষ্ট মনে আছে চট্টগ্রামে তখন হামলাকারীদের শ্লোগান ছিল- ‘একটা দুইটা হিন্দু ধর সকাল বিকাল নাস্তা করো’, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি। আর এবার ২০২১ সালে পাকিস্তান জিন্দাবাদ শ্লোগান ছিল না, তবে অন্য শ্লোগান ছিল। যা আমাদেরকে হতাশ করে, শঙ্কিত করে তোলে। ১৯৯০ সালে এরশাদের আমলে সারাদেশে তিন দিন, ১৯৯২ সালে বিএনপির খালেদা জিয়ার আমলে ২৭ দিন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতন, খুন ও নির্যাতনসহ নানা ধরনের অত্যাচার- নির্যাতন করা হলো। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর হাইকোর্টে মামলা করা হলো। ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটিসহ অন্য মানবাধিকার সংগঠনের সহায়তায় ১৫ হাজার ঘটনার একটি তালিকা তৈরী করা হলো। সরকারের পক্ষ থেকে সাহাবুদ্দিন কমিশন গঠন করা হলো। সেই কমিশন ২০১১ সালে ৫ হাজার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের একটি বিশদ তালিকা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে দিলেন। সাহারা খাতুনের সঙ্গে দেখা করলাম আমরা, তিনি আশ্বাস দিলেন। কিন্তু কোন কাজ করলেন না। সাহারা খাতুনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন মহিউদ্দিন খান আলমগীর। তার কাছেও এসব ঘটনার বিচার চেয়ে দেখা করলাম। তিনিও আশ্বাস দিলেন, কিন্তু তা আশ্বাসেই রয়ে গেলো, কাজের কাজ কিছুই হলোনা। তাই বলছিলাম ‘দায়মুক্তির সংস্কৃতি’ চলছে আমাদের দেশে।

ভোরের কাগজ: আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল, প্রশাসন কি তাদের দায়িত্ব পালন করেছে বলে মনে হয়?

রানা দাশগুপ্ত : আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতির কতটুকু কি রাখে বা পালন করে আমাদের দেশে তাতো আপনারা দেখতেই পারছেন। আর প্রশাসনের কথা বলছেন? তারাতো রাজনৈতিক দলের মেজাজ-মর্জি অনুযায়ী চলে। তবে সবসময় আবার প্রশাসন কিন্তু রাজনৈতিক সরকারের নির্দেশনা মেনে চলে তা কিন্তু নয়। তাই যদি হতো তাহলে এর মধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে যে কথাগুলো বলেছেন এবং জাতিকে একটি মেসেজ দিয়েছেন তা কি আমাদের প্রশাসনের দায়িত্ববান ব্যক্তিগন শুনেছেন? যদি ঠিকভাবে প্রশাসন শুনতো বা প্রধানমন্ত্রী কি নির্দেশনা দিচ্ছেন তা সঠিকভাবে পালন করলে সাম্প্রতিককালেতো বটেই গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে যেসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে তা ঘটতো না। তাই আজ শনিবার আমরা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করে দেশের সাম্প্রতিক অবস্থা তুলে ধরবো জাতির কাছে। পরিশেষে বলতে চাই, শুধু মুখে বললেই তো হয় না- ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’। এর বাস্তবায়ন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App