×

খেলা

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টার্গেট কী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১১:১০ পিএম

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টার্গেট কী

টাইগারদের এমনি করে উল্লাসে দেখতে মরিয়া সমর্থকরা।

সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রবিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ খেলতে নামবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। ওমানের মাসকটের আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হবে রাত আটটায় হবে ম্যাচটি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ কয়েকটি ওয়ানডে ম্যাচ খেললেও, দেশটির বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ খেলার খুব বেশি অভিজ্ঞতা নেই তাদের। স্কটিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশ শুধু একবারই টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উল্লেখ করার মতো সাফল্য নেই টারগারদের। তবে এবার ভালো কিছু করার লক্ষ্য তাদের। বিশেষ করে সেমিফাইনালে খেলা। বাংলাদেশ ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। এরপর ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে খেলেছে। যেহেতু আইসিসির আগের ২টি আসরে ভালো পর্যায়ে গেছে। ফলে এবার বিশ্বকাপে টাইগাররা সেমিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিশ্বকাপে টাইগাররা জ্বলে উঠলে অন্য দলগুলোর যে বিপদে পড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবালও শুক্রবার বলেছেন এবার বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলতে পারে। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন এটি কোনো অসম্ভব ব্যাপার নয়। তাছাড়া কয়েক দিন আগে খালেদ মাহমুদ সুজনও বলেছেন টাইগাররা সেমিফাইনালে খেলবে। বাংলাদেশের এ সক্ষমতা আছে বলেও মনে করেন সবাই। বাংলাদেশ দল যদি সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারে তাহলে তা হবে অসাধারণ ব্যাপার।

তামিম বলেছেন, আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালে খেলতে পারলে, তা দারুণ অর্জন হবে। দল তো ভালো খেলছে, অবশ্যই সেমিফাইনালে খেলতে পারি আমরা।

অপরদিকে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন, আমার প্রত্যাশা সব সময় ভালো। আমি চিন্তা করি, বাংলাদেশ নিজেদের খেলাটা খেলবে। আমি বলেছি, বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলব বলে আমি বিশ্বাস করি। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারে, নিউজিল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো বড় বড় দল থাকতে আমরা কীভাবে সেমিফাইনাল খেলব। আমি বলব, এই সংস্করণটা এমন, যে কেউ এখানে যে কাউকে হারাতে পারে।

এদিকে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের এ ম্যাচটির মাধ্যমে দলে ফিরছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান। আইপিএল খেলতে শুক্রবার পর্যন্ত কলকাতার সঙ্গে আরব আমিরাতে থাকবেন সাকিব। এরপর এখন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। জানা গেছে সাকিব যেহেতু বায়ো সিকিউরিটি বাবলের মধ্যে আছেন তাই সাকিবকে একদিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে না। তিনি সরাসরি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। আর তিনি যেহেতু খেলার মধ্যেই আছেন ফলে তার প্রস্তুতিরও কোনো ঘাটতি নেই। আরব আমিরাত থেকে ওমানে আসতে বিমানে মাত্র ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগে। তাই আরব আমিরাত থেকে ওমানে যেতে খুব বেশি সময়ও লাগবেন না তার। ফলে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচেই মাহমুদউল্লাহ ও সাকিবের সার্ভিস পেতে যাচ্ছে।

বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুটি ম্যাচেই হেরে যায় তারা। তবে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা প্রস্তুতি ম্যাচটিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান খেলেননি। ফলে পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে খেলতে পারেনি টাইগাররা। এখন স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলতে যাচ্ছে পুরো শক্তি নিয়ে। এমনকি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ শুরু থেকেই ভালো করবে। আইসিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটি জানিয়েছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, বাংলাদেশের বোলিং বিভাগ বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। স্পিন ও পেস দুই বিভাগেই ভালো করার সক্ষমতা আছে।

এদিকে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ ভালো করতে না পারলেও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড দুটি ম্যাচের মধ্যে দুটিতেই জয় তুলে নেয়। তারা নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে খেলতে নামে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। সে ম্যাচটিতে স্কটল্যান্ড মাত্র ১২২ রান করতে সমর্থ হয়। কিন্তু তারা তাদের বোলিং নৈপুণ্য দিয়ে ডাচদের মাত্র ৯০ রানে অলআউট করে দেয়।

এরপর তারা নিজেদের দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে খেলতে নামে নামিবিয়ার বিপক্ষে। সে ম্যাচটিতে তারা ২০৪ রান করে প্রথমে ব্যাট করে। তবে এদিন ব্যাটিং কারিশমা দেখায় নামিবিয়াও। যদিও তারা শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নিতে পারেনি। নামিবিয়া ১৮৪ রানে থামে। ২টি প্রস্তুতি ম্যাচেই ব্যাটিং ও বোলিং দুই দিকেই নিজেদের শক্তি দেখিয়েছে স্কটল্যান্ড।

অপরদিকে বাংলাদেশ প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং বা বোলিং কোথাও নিজেদের তেমন সাফল্যের ছাপ রাখতে পারেনি। এমনকি আরব আমিরাতের ব্যাটিং পিচেও বাংলাদেশ পার করতে পারেনি ১৫০-এর ঘর। যেখানে আয়ারল্যান্ড ঠিকই ১৫০ রান পার করেছে এবং বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছে।

যদিও প্রস্তুতি ম্যাচ হলো শুধুই প্রস্তুতি ম্যাচ। এই ম্যাচগুলোতে দলগুলো নিজেদের ঝালিয়ে নেন। কিন্তু তবুও যেহেতু বাংলাদেশ নিজেদের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে হেরেছে ফলে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ একটু শঙ্কিত।

এদিকে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ একমাত্র যে টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলেছে সেটি ২০১২ সালে। ম্যাচটি হয়েছিল স্কটল্যান্ডের মাটিতে। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ সেই ম্যাচটিতে হেরে যায়। তখনো বাংলাদেশ স্কটিশদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিতে ২০ ওভার খেলে ১৬২ রান করে স্কটিশরা। জবাবে টাইগাররা ১৮ ওভার খেলে ১২৮ রানে অলআউট হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশ ৩৪ রানের বড় ব্যবধানে হারে।

এবার বিশ্বকাপে খেলতে আসা স্কটল্যান্ড দলটি বেশ শক্তিশালী। এখন সব টাইগার সমর্থকদের প্রত্যাশা থাকবে স্কটিশদের বিপক্ষে ২০১২ সালের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। এটি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ দলে ফিরছেন দুই নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান। মাহমুদউল্লাহ প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে না খেলায় একটি শঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে তিনি কি আবার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতেও খেলতে পারবেন না?। তবে সে শঙ্কা মাহমুদউল্লাহ নিজেই উড়িয়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জানিয়েছেন, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেই মাঠে নামবেন। আইসিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকার এমনটি জানান তিনি। এ ব্যাপারে মাহমুদউল্লাহ বললেন, ইনজুরিটা ক্রমেই ভালোর দিকে যাচ্ছে। পিঠে একটু ব্যথা থাকায় প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে খেলিনি। কয়েক মাস আগেও চোটে পড়েছিলাম। টিম ম্যানেজমেন্ট এবার কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি। তবে আমি আশাবাদী, প্রথম ম্যাচ থেকেই খেলতে পারব।

বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে যেমন আশার বাণী শুনিয়ে গেছেন মাহমুদউল্লাহ, ওমানে গিয়েও একই সুরে কথা বলেছেন। জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি কথা বলেছেন মধ্যপ্রাচ্যের কন্ডিশনে নিজেদের বোলিং বিভাগ নিয়ে।

মাহমুদউল্লাহ বলেন, আমি মনে করি এটি বিশ্বকাপের আগে ভালো বিল্ডআপ ছিল। জিম্বাবুয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ভালো সিরিজ কাটিয়েছি। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছি। এটা আমাদের দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।

সঙ্গে যোগ করেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক, স্পিনাররা অনেক বছর ধরেই আমাদের হাতিয়ার। গত কয়েক সিরিজ ধরে আমাদের বোলিং ইউনিট অনেক ভালো পারফর্ম করছে। ফাস্ট বোলাররাও এই সিরিজগুলোতে ভালো করেছে। আমি মনে করি স্পিন ও পেসের ভালো কম্বিনেশন আছে। এখানে কন্ডিশন যেমনই থাকুক না কেন, আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। স্পিনবান্ধব উইকেট পেলে আমাদের স্পিনারদের জন্য ভালো হবে, ফাস্ট বোলাররাও ভালো করবে।

এদিকে বাংলাদেশ এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপের বাছাইয়ে খেলছে। প্রথম খেলে ২০১৪ সালে নিজ দেশে। এরপর ২০১৬ সালে ভারতে। দুইবারই বাংলাদেশ বাছাইয়ের বাঁধা টপকে মূলপর্বে জায়গা করে নেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না এটি অন্তত বলা যায়। বাংলাদেশ আগামী ১৯ অক্টোবর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে খেলবে। ২১ অক্টোবর বাছাইয়ের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে খেলবে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে। স্কটল্যান্ড বাংলাদেশের জন্য হুমকি হলেও হতে পারে। তবে বাকি দুটি দেশ তাদের কাছে পাত্তা পাবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App