×

খেলা

রেফারির ভুলে জামালদের স্বপ্নভঙ্গ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১০:২৯ পিএম

রেফারির ভুলে জামালদের স্বপ্নভঙ্গ

হতাশ লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা

দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ শেষ সফলতার গল্প লিখেছিল ২০০৩ সালে। মালদ্বীপকে ফাইনালে হারিয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা সেবার ইতিহাস জায়গা করে নিয়েছিল। এরপর ২০০৫ সালে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল। তারপর টানা ছয়টি আসরে ফাইনালের টিকিট কাটতে ব্যর্থ বাংলার ছেলেরা।

২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত শেষ চারটি আসরে বাংলাদেশ তো গ্রুপ পর্বের বাধাই পেরোতে পারেনি। প্রবাসী ফুটবলারদের ভিড়ে, বিদেশি কোচের অধীনে এবার জামালরা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ফাইনাল খেলার। তবে সে স্বপ্নের খুব কাছে গিয়েও ভুল সব সিদ্ধান্তে ফাইনালে খেলার ১৬ বছরের অপেক্ষা আরো দীর্ঘায়িত হলো। নেপালের বিপক্ষে সাফের ১৩তম আসরে রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভুল ছিল বাংলাদেশের ফুটবলারদেরও।

যার খেসারত দিয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। দশজনের দলকে আরো দুর্বল করে দেয় মাঠ রেফারির বিতর্কিত সব সিদ্ধান্ত। এর আগে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড বিশ্বনাথ ঘোষ লাল কার্ড দেখেন নিজের ভুলে। আর মালদ্বীপের বিপক্ষে ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে ম্যাচের ৭৩ মিনিটে আরো পিছিয়ে দেন মিডফিল্ডার সোহেল রানা। ডি বক্সে ফাউল করে বিপক্ষ মালদ্বীপকে পেনাল্টি উপহার দেন এই বাংলাদেশি। এভাবেই মালদ্বীপে সাফের ১৩তম আসরে আরেকটি ব্যর্থতার গল্প রচিত হয় বাংলাদেশের।

স্বপ্ন ছিল সাত আসর, ১৬ বছর, অপেক্ষার প্রহর শেষ করে বাংলাদেশ দল খেলবে সাফের ফাইনাল। হারলে বা ড্র করলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাবেন অস্কার ব্রুজনের শিষ্যরা। ফলে নেপালের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই জামালদের। তবে তপুরা ছিলেন আত্মবিশ্বাসী, জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বেন তারা। ১৬ বছর পর বাফুফের খাতায় রচিত হবে সফলতার গল্প। শুরুটাও করেছিল সেভাবে। ম্যাচের নবম মিনিটে বাংলাদেশ ফরোয়ার্ড সুমন রেজা গোল করে বাংলাদেশকে লিড এনে দেন। বিপক্ষ দলের সমতায় ফেরার সব প্রচেষ্টা রুখে দিতে এদিন আনিসুর রহমান জিকো যেন গোলপোস্টে দাঁড়ান চীনের প্রাচীর হয়ে।

ঘড়ির কাঁটার সময় বলে ম্যাচের ৮০ মিনিট শেষ, তখনো এগিয়ে বাংলাদশে। আর কিছুক্ষণ আক্রমণ রুখে দিতে পারলে তপুরা পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করবে। এমন সময় অপেশাদারের পরিচয় দিলেন বাংলাদেশের মিডফিল্ডার রাকিব হোসেন। প্রায় মাঝমাঠ থেকে ব্যাক পাস দেন কাউকে লক্ষ্য না করেই। রাকিবের ব্যাক পাস মালদ্বীপের নবযুগ ধরার আগেই ছুটে এসে বিপদমুক্ত করেন জিকো। কিন্তু ওই সময় পড়ে যান নেপালের ফরোয়ার্ড। বল জিকোর পা হয়ে হাতে লাগে।

রেফারি তাকে সরাসরি লাল কার্ড দিলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। পোস্ট সামলানোর দায়িত্ব ওঠে আশরাফুল ইসলাম রানার কাঁধে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল বাংলাদেশ। সেদিন অপেশাদার আচরণ করে লাল কার্ড দেখেছিল ফরোয়ার্ড বিশ্বনাথ ঘোষ। পেছন থেকে ভারতের ফুটবলারকে পেছন থেকে টেনে ধরেন তিনি।

তবে সেদিন একজন কম নিয়েও ইয়াসিনের গোলে ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ গল্প লিখে ড্র করেছিলেন জামলরা। এ ম্যাচেও তাই আশা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট বাকি থাকতে বদলে যায় দৃশ্যপট। বক্সে হেড করতে গিয়ে অনেকটা ফলো থ্রোয়ে পড়ে যান অঞ্জন। বেশ কয়েকবার রিপ্লে দেখানো হলেও সাদউদ্দিনের সঙ্গে তার তেমন কোনো সংঘর্ষ হতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের স্তম্ভিত করে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ঠিক দিকে ডাইভ দিলেও রানা আটকাতে পারেননি অঞ্জনের স্পট কিক। বাকিটা সময় নির্বিঘ্নে পার করে দিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠার উৎসবে মাতে নেপাল। ২০১১, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের আসরে সেমিফাইনাল খেলা এতদিন ছিল দলটির সেরা সাফল্য।

ফাইনালে ওঠার আগেই বিদায়ের কারণ হিসেবে দুটি বিষয় ঘুরেফিরে আসছে। প্রথমত, ৮০ মিনিটে বাংলাদেশের গোলরক্ষক আনিসুর রহমানের লাল কার্ড দেখা এবং দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের বিপক্ষে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত। আনিসুরের লাল কার্ডটি বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেনের বোকামির খেসারতও বলা যায়। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার সময় ফাইনালের খেলার আশাবাদ ব্যক্ত করে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে সেই লক্ষ্যের একদম কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছিল তারা। কিন্তু ম্যাচের শেষ দিকে জিকোর লাল কার্ড ও বিতর্কিত পেনাল্টিতে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বাংলাদেশের। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের ভারপ্রাপ্ত কোচ অস্কার ব্রুজন।

ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরাসরিই বললেন, ‘রেফারি আমার খেলোয়াড়দের প্রতি অবিচার করেছে। তিনি আনফেয়ার ছিলেন। আমি ভারত ম্যাচের পর থেকেই রেফারিং নিয়ে বলে আসছিলাম। আজ এর চূড়ান্ত রূপ নিল।’ বাংলাদেশকে দেয়া দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই পক্ষপাত মনে করেন অস্কার। তিনি বলেন, ‘জিকো বক্সের বাইরে প্রথমে পা দিয়ে স্পর্শ করেছে। এরপর বল তার হাতে লেগেছে, সেটি ইচ্ছেকৃত নয়। লাল কার্ড দেয়ার মতো ছিল না। পেনাল্টির কথা আর কী বলব! এটি সম্পূর্ণ অর্থে ভুল সিদ্ধান্ত। আরো বেশি কিছু বললে আমি এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হব।’

এদিকে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে বাংলাদেশ দল সাফের ফাইনালে যেতে না পারলে প্রতিবেশী দেশ ভারত ঠিকই পেয়েছে সাফল্যের দেখা। অঘোষিত সেমিফাইনালের মালদ্বীপের বিপক্ষ তারা জয় পায় ৩-১ গোল ব্যবধানে। এ ম্যাচে দুই গোল করে ব্রাজিলের তিন বিশ্বকাপজয়ী পেলেকে (৭৭টি) পেছনে ফেলেন ভারতের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। জাতীয় দলের হয়ে ৩৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের গোল এখন ৭৯টি। আগামী ১৬ অক্টোবর মালদ্বীপের জাতীয় ফুটবল স্টেডিয়ামে ফাইনালে নেপালের মুখোমুখি হবে ভারত। অন্যদিকে দলের সাফল্যের দিনেও গণমাধ্যমের বিরূপ মন্তব্য নিয়ে ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ উগরে দিয়ে নেপালের আবদুল্লাহ আল মুতাইরি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

এই কোচ জানান, ফাইনাল শেষে আমি আর নেপাল ফিরব না। চলে যাব দেশে। তার এই ক্ষোভের কারণ, তিনি নাকি ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত। নেপালি মিডিয়া এমন রিপোর্ট করায় তার আত্মসম্মানে লেগেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমি এক মাস আগেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এবার তা বাস্তবায়িত হবে। ’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App