×

মুক্তচিন্তা

মা দুর্গার আগমনে সব সংকট কেটে যাক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১২:৫৫ এএম

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা, শিউলি ফুলের সুভাস, প্রকৃতির হিমেল হাওয়া ধারণ করেছে এক উৎসবমুখর আমেজ। মায়ের আগমনে করোনা ভাইরাসের মতো মহাদুর্যোগসহ সব ধরনের সংকট কেটে যাবে- এমনটাই সবার আশা। দুর্গোৎসব হচ্ছে সব ধরনের অশুভ-অসত্যকে পরাভূত করে সত্য ও ন্যায়ের বাতাবরণ প্রতিষ্ঠার শুভ সময়। দশভুজা দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে ধরণীতে আবির্ভূত হন। ‘মা’ দুর্গা তার সন্তানদের দান করেন ঐশ্বর্য। ‘মা’ সাহায্য করেন জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় বিকশিত হতে। শ্রীশ্রী চণ্ডীতে বলা হয়েছে- ‘যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।/নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ \’ এর অর্থ হলো- যে দেবী সর্বভূতে বিশ্ব চরাচরের শক্তি ও শান্তিরূপে বিরাজ করেন, সেই দেবীকে নমস্কার করি। একসময় দেবতাদের স্বর্গরাজ্য অসুরেরা অধিকার করে নেয়। তখন দেবতাদের সম্মিলিত শক্তি থেকে দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। দেবী দুর্গা অসুরদের বিনাশ করেন। দেবতারা ফিরে পান তাদের স্বর্গরাজ্য। অশুভ শক্তিকে বিনাশ করার জন্যই ‘মা’ আনন্দময়ী দেবী দুর্গার আগমন। অশুভ শক্তির উত্থানকে বিনাশ করে তিনি সব দুঃখ, দুর্গতি, ভয় নাশ করেন। অন্যায়ের বিনাশ ঘটিয়ে সজ্জনদের প্রতিপালনের অঙ্গীকার নিয়ে মানুষের মধ্যে নৈতিক আদর্শ জাগ্রত করার জন্যই দেবীর আগমন ঘটে থাকে। যেখানে শুভ, শান্তি, ঐক্য আর কল্যাণের পরাজয় হয় সেখানেই ঘটে অসুরের আবির্ভাব। আর তখনই সম্মিলিত শক্তি ছাড়া অসুরের বিনাশ করা অসম্ভব! লোভ-লালসা, অহংকারসহ সব ধরনের মন্দ কাজ যেন এক একটি অসুর। তাই আমাদের হৃদয়ে অশুভ শক্তির ছায়া দূর করতে হবে। নিজের ভেতরকার এমনসব অসুরসহ চারপাশের অসুরদের সম্মিলিতভাবে দমন করতে হবে। ধর্ম উৎসব মানুষে মানুষে প্রীতি, প্রেম, সহিষ্ণুতা, ঐক্য ও শান্তির ডাক দিয়ে যায়। তা সত্ত্বেও হানাহানি, লোভ-লালসা, অনৈক্য, অসহিষ্ণুতা ও নিষ্ক্রিয়তা আজ চারপাশে বিরাজমান। তাই সত্যের রক্ষাকর্তা ও দুষ্টের বিনাশকারিণী হিসেবে ‘মা’ আসেন শান্তির বারতা নিয়ে। এ পূজা আমাদের সমগ্র জাতিসত্তায় মনুষ্যত্বের জাগরণ, মানবকল্যাণ তথা বিশ্ব কল্যাণের পূজা। বর্তমান বাস্তবতায় কল্যাণের নামে অকল্যাণ, ধর্মের নামে অধর্ম, স্বার্থপরতা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, পঙ্কিলতা দূর করে শান্তি স্থাপন সবচেয়ে বেশি দরকার। শুধু মুখে নয় কর্মের মাধ্যমে সত্যিকারের প্রেম, ভালোবাসা, মানবতা, ভক্তি, সম্প্রীতি বেশি প্রয়োজন। যতই আমাদের মধ্যে দেবী ‘মা’র মাতৃভক্তির বিকাশ হবে ততই আমরা পবিত্র হবো আর উন্নতির দিকে এগিয়ে যাব। এতে নারীরা যথার্থ মর্যাদা ও সম্মান পাবেন। নারীর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন রুখে দিয়ে মাতৃরূপে ভক্তি ও সম্মানের দৃষ্টিতে সাম্যের পৃথিবী গড়তে হবে। তাহলেই কেবল সমাজ সমতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাবে। দেবী দুর্গা মানুষের চিত্ত থেকে যাবতীয় দীনতা ও কলুষতা দূরীভূত করে শুভ ও ন্যায়ের উদাত্ত আহ্বান জানান সবাইকে। সত্যি বলতে, বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে করোনা নামক মহামারি পুরো বিশ্বকে কিছুটা হলেও থামিয়ে দিয়েছে। ‘মা’ দুর্গার আগমনে মহামারিসহ সব ধরনের অনাচার ধুয়ে মুছে যাক। মায়ের আগমনের মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আরো দৃঢ় হোক এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হোক। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট থাকুক, শুভ শক্তির জয় হোক।

সাধন সরকার : নারিন্দা, সূত্রাপুর, ঢাকা-১১০০। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App