×

জাতীয়

মহানবমীতে আজ দেবীকে প্রাণভরে দেখার পালা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৩৯ এএম

মহানবমীতে আজ দেবীকে প্রাণভরে দেখার পালা

অষ্টমীতে দেবীর কৃপা প্রার্থনায় ভক্তরা, মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড়

মাঝে মাত্র একটা দিন বাকি। ভক্তের এত আয়োজন, এত উচ্ছ্বাস- সব পেছনে ফেলে দেবী দুর্গা চলে যাবেন কৈলাশে। আসছে বছর আবার আসবেন, এমন আশীষ পাবার পরও ভক্তমন মায়ের বিদায়কে ঘিরে হয় শোকাতুর। তাই আজ বৃহস্পতিবার মহানবমীর পুরোটা দিন দেবীকে প্রাণ ভরে দেখে নেয়ার পালা ভক্তদের।

গতকাল বুধবার মহাঅষ্টমীতে সকাল থেকেই বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে হাজির হয়েছেন ভক্তরা। সকালে দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা শেষে দেবীর চরণে ভক্তরা পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছেন। আর দশভুজা দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা করেছেন করোনামুক্ত বিশ্বের। সেই সঙ্গে করেছেন নিজের ও পরিবার পরিজনদের প্রতি দেবীর কৃপা দৃষ্টিরও প্রার্থনা। প্রতিটি মন্দির ও মণ্ডপে ভক্তদের সুবিধার্থে কয়েক দফা পুষ্পাঞ্জলির ব্যবস্থা রাখা হয়। ভক্তরাও সুশৃঙ্খলভাবে পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছেন। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। সন্ধিপূজার অন্যতম উল্লেখযোগ্য নৈবেদ্য হলো পদ্ম। এই পুজোয় দেবীকে ১০৮টি পদ্ম অর্পণ করা হয়, ১০৮টি বেলপাতা এবং ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। নৈবেদ্যয় দেয়া হয় গোটা ফল, জবা ফুল, সাদা চাল, শাড়ি, গহনা এবং সাজ-সজ্জার দ্রব্যাদি।

মেয়ে শ্রেয়সী দেবনাথকে নিয়ে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে অঞ্জলি দিয়েছেন গোপীবাগের বাসিন্দা স্মৃতি দেবনাথ। তিনি বলেন, প্রতিবছরই রামকৃষ্ণ মিশনে অষ্টমী পূজার অঞ্জলি দেই। নিষ্ঠার বিষয়টি এখানে অনেক বেশি বলে আমার মনে হয়। তাই মিশনেই অষ্টমীতে আমরা সপরিবারে অঞ্জলি দেই। এবারো দিয়েছি। মায়ের কাছে করোনামুক্ত সুন্দর ও স্বাভাবিক পৃথিবীর প্রার্থনা করেছি।

প্রতিবার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হলেও করোনা সংক্রমণের কারণে গতবারের মতো এ বছরও এই আয়োজন থেকে বিরত থেকেছে কর্তৃপক্ষ। রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ বলেন, গত বছর এই অতিমারি বা মহামারির কারণে আমরা কুমারী পূজার আয়োজন করিনি। এ বছর পরিস্থিতি যদিও অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে, তবুও আমরা কোনো রকমের ঝুঁকি নিতে চাইনি। কারণ কুমারী পূজা হলেই হাজার হাজার ভক্ত আসবেন, কারোর জীবনের সুরক্ষায় কোনো রকমের কমতি থাকুক তা আমরা চাইনি। আশা করছি আগামী বছর পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে, তখন আবার কুমারী পূজা হবে।

গতকাল দুপুরের পর থেকে মণ্ডপগুলোতে ঢল নামে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নন, সব ধর্মের দর্শনার্থীরাই মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন। অনেক মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে ধুনচি নাচসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আজ দুর্গাপূজার মহানবমীতে ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে পূজা শুরু হবে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে। এখানে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। অনেক মণ্ডপে সন্ধ্যায় থাকবে আরতি প্রতিযোগিতা। রাতকে উজ্জ্বল করে ভক্তরা মেতে উঠবেন নানা ঢঙে আরতি নিবেদনে। একই সঙ্গে দিনভর চলবে চণ্ডীপাঠ। তবে আগামীকাল দেবী দুর্গা ফিরে যাবেন কৈলাশে স্বামীর বাড়ি। সেই জন্য মণ্ডপে সব আয়োজনে থাকবে বিদায়ের রেশ।

এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সীমিত পরিসরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। হবিগঞ্জের বাহুবলে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মাতুলালয় শ্রীশ্রী শচীঅঙ্গন ধামে বেলা ১১টায় কুমারী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সেখানে কুমারী হিসেবে পূজিতা হন মাধবপুর উপজেলার নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী স্নেহা চক্রবর্তী। তিনি সবুজ চক্রবর্তী ও শক্তি চক্রবর্তীর কন্যা। কুমারীর শাস্ত্রীয় নাম ‘অপরাজিতা’। কুমারী রূপে স্নেহাকে আসনে বসানোর সময় অসংখ্য পুণ্যার্থী সমস্বরে ‘দুর্গা মায় কি জয়’, ‘কুমারী মায় কি জয়’ বলে ধ্বনি দিতে থাকেন। কুমারী পূজা সম্পন্ন হলে ভক্তরা মাকে প্রণাম করেন। কুমারী পূজা শেষে দেবী দুর্গার পায়ে অঞ্জলি নিবেদন করেন ভক্তরা।

কেন কুমারী পূজা করা হয়- এ সম্পর্কে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলেছেন, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতি হয়ে উঠবে পুতঃপবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন। প্রত্যেকে শ্রদ্ধাশীল হবে নারী জাতির প্রতি। ১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে নয়জন কুমারীকে পূজার মাধ্যমে এর পুনঃপ্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App