×

জাতীয়

নরসিংদীতে যুবদলের কমিটি গঠনের নামে পদবাণিজ্যের অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০৭:২১ পিএম

নরসিংদীতে যুবদলের কমিটি গঠনের নামে পদবাণিজ্যের অভিযোগ

প্রতীকি ছবি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহযোগীসংগঠনগুলোর মধ্যে যুবদল অন্যতম। আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে উত্তপ্ত রাখতে এই সংগঠনটি সব সময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। শহীদ জিয়ার আদর্শের রাজপথ কাঁপানো এই যুব সংগঠনকে কলুষিত করছে দলের গুটিকয়েক স্বার্থবাজ নেতা। নিজেদের পকেট ভারী করতে জড়িয়ে পড়েছে পদ ও কমিটি বাণিজ্যে। সাংগঠনিক পদ দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। ভবিষ্যতে ভালো একটি পদের আশায় উঠতি নেতারা ও পদ নেওয়ার এ প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বেশ কয়েকটি জেলার পর এবার নরসিংদীতে বিভিন্ন ইউনিট কমিটিকে ঘিরে পদবাণিজ্যের এ অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগের আঙুল ইউনিট কমিটিগুলো গঠনের দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের প্রধান জাকির হোসেন নান্নু ও জেলা যুবদলের সভাপতি মহসীন হুসাইন বিদ্যুৎ-এর দিকে।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ দলের এই দুইনেতা একে অপরের যোগসাজসে জেলায় সাংগঠনিক সফরে এসে জেলার ছয়টি পৌরসভা ও সাতটি থানা কমিটি গঠনের জন্য কর্মী সমাবেশ করে। কর্মী সমাবেশ থেকেই শুরু হয় এই দুই নেতার পদ দেওয়ার নামে অর্থ বাণিজ্যের।

যুবদলের পদবাণিজ্যের উপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিগত সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল। তার দেওয়া বক্ত‍ব্যে সাংগঠনিক টিমের পদ বাণিজ্যের কথা তুলে ধরেন।

এদিকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর শনিবার জেলা যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিভিন্ন ইউনিট কমিটির নাম প্রস্তাবের তালিকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতৃবৃন্দের হাতে জমা দেয়। এদিকে তালিকা জমা দেওয়ার পর জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাংগঠনিক কমিটির অর্থ বাণিজ্যের আরও নতুন নতুন তথ্য বের হয়ে আসে। পুরো জেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে।

বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় মনোহরদী থানা কমিটির আহবায়ক পদপ্রত্যাশী নারী নির্যাতন মামলায় সাজা ভোগকারী (বকুল গ্রুপ) তাজুল ইসলাম তার মামলার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নিজের জমিজমা বিক্রি করে সাড়ে চার লাখ এবং স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করে মোট সাত লাখ টাকা সাংগঠনিক কমিটিকে দেন। যা মনোহরদীসহ সারা জেলার নেতাকর্মীরা অবগত আছেন।

বেলাব থানা যুবদলের কয়েকজন নেতা জানায়, যুবদলের কমিটির নামে পদবাণিজ্য করছে সাংগঠনিক বিভাগীয় টিম। বিএনপির কমিটিতে আছেন এমন কাউকে যুবদলে স্থান দেওয়া হবেনা বলা হলেও থানা যুবদলের আহবায়ক হিসেবে যার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে সেই আখতারুজ্জামান থানা বিএনপির ৯ নং যুগ্ম সম্পাদকে হিসেবে বহাল আছেন। এ ছাড়া রাজনীতির মাঠে তাকে কখনো সক্রিয় দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বেলাব থানা বিএনপির এক নেতা জানান, সাংগঠনিক টিম গত ৪ জানুয়ারী নরসিংদীর ব্রাহ্মন্দী মোড়ে যুবদলের কর্মী সমাবেশ করেন। সেখানে বেলাব থানা যুবদলের শতাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। ওই সমাবেশে যুবদলের নেতাদের সাথে থানা বিএনপির একজন নেতা উপস্থিত থাকলে তাকে সমাবেশ স্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এসময় তাকে বলা হয় এটা যুবদলের অনুষ্ঠান এখানে মূল দলের কেউ থাকতে পারবেনা। এদিকে সমাবেশ শেষ হতে না হতেই সাংগঠনিক টিম বেলাব ছুটে যান এবং সেখানে একটি থানা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে আর একটি কর্মী সমাবেশ করেন যাতে নামমাত্র দুই-চার জন যুবদল কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

বেলাব থানা বিএনপির ওই নেতা বলেন, একটি সমাবেশ থেকে মূল দলের নেতাকে বের করে দিয়ে তার কিছু সময় পরেই বেলাব এসে মূল দলের নেতাদের সাথে নিয়ে সমাবেশ করেন এর কি অর্থ থাকতে পারে দলীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তা অজানা নয়। এদিকে বেলাবতে সমাবেশ শেষে ফেরার পথে সাংগঠনিক টিমের গাড়ির গতি রোধ করেন সমাবেশ থেকে বের করে দেওয়া সেই নেতা। তার যুক্তিসঙ্গত কথার কাছে হার মেনে ক্ষমা চেয়ে কোন রকমে শরীর বাঁচিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসেন।

এদিকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর কমিটির তালিকা জমা দেওয়ার বিষয়টি জেলা যুবদলের সুপার ফাইভের বাকি তিন সদস্য অবগত নন বলে জানান।

জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক (সুপার ফাইভ সদস্য) দিদার হোসেন ভূইয়া বলেন, কবে কমিটির তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে এবং কাকে কাকে এতে অন্তর্ভূক্তি করা হয়েছে তা কিছুই জানিনা। এ ব্যাপারে আমাদেরকে কোন কিছু জানানো হয়নি।

জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক (সুপার ফাইভ সদস্য) মুকাররম ভূইয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা নাম মাত্র সুপার ফাইভ সদস্য। জেলা যুবদলের কোন কর্মকাণ্ডে আমাদেরকে কখনো ডাকা হয়নি বা রাখা হয়নি। তবে কেন্দ্রঘোষিত সকল কর্মসূচি জেলা বিএনপির অভিভাবক আমাদের নেতা খায়রুল কবির খোকন ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা সুপার ফাইভের বাকী তিন সদস্য এক সাথে যথাযথ ভাবে পালন করে আসছি। বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম দলের ভীত মজবুতে নরসিংদী সফরে আসেন। কিন্তু তাদের এই সফরের বিষয়টি আমাদেরকে জানানো হয়নি। সাংগঠনিক টিমকে সাথে নিয়ে জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা বিএনপির কার্যালয়ে কর্মী সমাবেশগুলো না করে যেখানে সেখানে করেছেন। বিভাগীয় টিমের এই সফর সম্পর্কে আমাদের কেন অবহিত করা হয়নি এব্যাপারে টিমের প্রধান জাকির হোসেন নান্নুসহ সকল সদস্যকে বাব বার অবহিত করা হলেও এর কোনো সুফল পাইনি।

নরসিংদী জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি (সুপার ফাইভ সদস্য) শাহেন শাহ মোহাম্মদ শানু বলেন, বিএনপিরর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাননীয় তারেক রহমান যুবদলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষে দলকে ঢেলে সাজাতে আটটি বিভাগীয় টিম গঠন করে তাদেরকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের গ্রুপিং এবং বিরোধ নিরসন করে সুসংগঠিত করার জন্য সাংগঠনিক সফরের দায়িত্ব দেন। কিন্তু আমার মনে হয় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাঙ্খিত ফল পায়নি। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় সাংগঠনিক টিম নরসিংদী সফরে এসে সংগঠন বিরোধী বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। যা মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীরা আমাদেরকে অবহিত করে। আর এর জন্যই যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা অর্থের কাছে হেরে গেছেন। বঞ্চিত হচ্ছেন দলীয় পদ থেকে। যাদেরকে কখনো রাজপথে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি অথচ সেই সকল অযোগ্য ও নিষ্ক্রিয়রাই অর্থের বিনিময়ে আজ পদায়িত হচ্ছে। এতে ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা ন্যায় বিচার পায়নি। আমি মনে করি বিশ্বজন শ্রদ্ধেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য,সাবেক সফল মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে নরসিংদী জেলা বিএনপিতে সুষ্ঠ ধারার রাজনীতি ও দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা ফিরে আসবে। বঞ্চিত, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা মূল্যায়িত হবে এবং দলের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা যুবদলের সভাপতি মহসীন হুসাইন বিদ্যুতের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অর্থ-বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে বলেন, কমিটিতে কাউকে পদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমার নেই। আমরা শুধু নাম প্রস্তাব করবো। বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সাত জন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বসে ঠিক করবেন কাকে কোন পদে রাখা হবে। সেই ক্ষেত্রে অর্থ বা পদ বাণিজ্য করা কোন সুযোগ নেই। আর এখনও পর্যন্ত কমিটির বিষয়ে পুরোপুরি ফাইনাল হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আমরা আবারও বসবো। তাদের সাথে আলাপ অলোচনার মাধ্যমে সবকিছু ফাইনাল করা হবে।

বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের প্রধান জাকির হোসেন নান্নু বলেন, দলে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে আমরা কমিটি ঘোষণা করতে চাইনা। তবে আমরা তো সবাইকে চিনিনা। বেলাবতে মূল দলের পদে থাকা ব্যক্তিদের প্রার্থী করার বিষয়ে তিনি বলেন, কোন ইউনিটে যোগ্য কাউকে পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে মূল দলের কাউকে কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। অর্থ-বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই অনেক ধরনের রটনা রটাবে তবে তা তদন্ত সাপেক্ষে কারো ওপর তা চাপাতে হয়।

এ ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকনের সাথে যোগাযোগের করলে আন্দোলন সংগ্রামের পরীক্ষিত নেতা নরসিংদী শহর যুবদলের সদস্য সচিব পদ প্রত্যাশী লিয়াকত আলী টিটুর বিষয়ে কথা বলতে গেলে বুঝি না বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর বার বার ফোন দেওয়ার পরেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App